কক্সবাজারে মিনারেল পানিতে জেনারেল প্রতারণা

water-filter

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
সৈকত পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বিভিন্ন বাসাবাড়িসহ হোটেল রেস্তোরা ও টি-স্টল সমূহে মিনারেল ওয়াটারের নামে চলছে জেনারেল প্রতারণা। জীবানুযুক্ত পানি নিয়ে “বিশুদ্ধতার ফোঁটা” শ্লোগান দিয়ে নামে-বেনামে স্টিকার লাগিয়ে সদর্পে বাজারজাত করে আসছে ভুয়া কোম্পানীরগুলো।

নামে- বেনামে বিভিন্ন কোম্পানীর মিনারেল ওয়াটারের লেবেল লাগানো প্লাস্টিক জার থেকে সরবরাহকৃত এসব পানি আসলে মিনারেল ওয়াটার নয়, বরং জেনারেল পানি। কর্তৃপক্ষ জীবানুযুক্ত পানি নিয়ে বিশুদ্ধতার ফোঁটা শ্লোগান দিয়ে নামে বেনামে স্টিকার লাগিয়ে সরবরাহ করে আসছে। রির্ভাস অসমোসিস পদ্ধতির মাধ্যমে পরিশোধিত ও আল্ট্রাভায়োলেটেড’র মাধ্যমে জীবানুমুক্ত এবং ওজোন টেকনোলজির মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করার কথা বলা হয়। হরেক রকমের স্টিকার লাগিয়ে ৭’শ টাকা জামানত এবং প্রতি জার পানির দাম ৫০/৬০ টাকা করে আদায় করে আসছে।

এভাবেই এক পানির কোম্পানী ইসলাম নামে একজন অক্ষর জ্ঞানহীন যুবক দিয়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে জীবানুযুক্ত পানি বোতলজাত করে শহরের সহজ সরল মানুষের মাঝে টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করে আসছে।

একটি চক্র কক্সবাজারে সাধারণ নলকুপের পানি গোপনে প্লাস্টিক জারে ভর্তি করার পরে হোটেলের খাবার টেবিলে সরবরাহ করে প্রতিগ্লাস পানির ২/৩ টাকা হারে দাম নিচ্ছে অসাধু কিছু হোটেল মালিক।

সুত্রে প্রকাশ, ২০০৭ সালে কক্সবাজারে প্রথম মিনারেল ফিল্টার পানির ব্যবসা শুরু করে গুটি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বিএসটিআই ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই গজিয়ে উঠা এসব প্রতিষ্ঠান নামে ওয়াটার ট্টিটমেন্ট প্লান্ট বসিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ ও আলট্রা ভায়োলেট মেশিন দ্বারা জীবাণুমুক্তকরণ ছাড়াই উৎপাদিত পানি ১৯ লিটারের প্লাস্টিক জারে করে বাজারে সরবরাহ করে। প্রতিনিয়তে শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত,বাসাবাড়ি ও হোটেল- রেস্তোরায় সাধারণ পানি সরবরাহ করে আসছে ওই চক্রটি।

ওয়াটারক্যান, স্ট্যান্ড, প্লাস্টিকের জার ও পানির জন্য প্রথম পর্যায়ে ৭০০/৫০০ টাকা নেয়া হয়। জারের পানি ফুরিয়ে গেলে পরে পানি রিফিল করে দেয়ার জন্য প্রতিবার ৫০/৬০ টাকা হারে আদায় করা হয়। এসব পানি আসলে কতটুকু মিনারেল ওয়াটার- সে প্রশ্ন ভোক্তাদের। একাধিক হোটেল রেস্তোরা মালিক সাধারণ নলকুপের পানি লেবেল লাগানো প্লাস্টিক জারে ভর্তি করে ফিল্টার পানি বলে বিক্রি করে আসছে।

কক্সবাজারের জীবনবীমা অফিসের স্টাফ আমান উল্লাহ বলেছেন, স্থানীয়সহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা জেনারেল-মিনারেল পানি পান করে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। অথচ কক্সবাজারে গভীর নলকুপের পানি বিশুদ্ধ ও সুপেয়। এখানে মিনারেল-জেনারেল প্রশ্ন অবান্তর। নলকুপ মিস্ত্রী বাদশা মিয়া বলেন, কক্সবাজারের ভুগর্ভস্থ পানির মান খুবই উন্নতমানের। ২৫০-৩০০ ফুট নীচেই পাওয়া যায় ভাল বিশুদ্ধ পানি। অসাধু ভূঁইফোড় পানিওয়ালা কোম্পানী ও হোটেল-রেস্তোরার মালিক কমিশনের ভিত্তিতে এসব পানিকে বোতলজাত করে গলাকাটা দাম আদায় করে চলেছে।

বেনামি জীবানুযুক্ত পানি পান করার ব্যাপারে শহরবাসীকে সর্তক থাকার আহবান জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুলতান আহমদ সিরাজী।

মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে এসব পানি কোম্পানীকে জরিমানাও করেছে। কিন্তু অল্পদিন পরেই তারা আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন