কক্সবাজার জেলা কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৫৩০, রয়েছে ৪২৩৩ বন্দি

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজার জেলা কারাগারে আসামী ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী রয়েছে। ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৫শ’ ৩০ জন। বর্তমানে রয়েছে ৪ হাজার ২শ’ ৩৩ জন। তার মধ্যে মহিলা বন্দি রয়েছে ২শ’ ১৯ জন।

জেলা কারাগারে গিজ গিজ করছে ধারণ ক্ষমতার ৮ গুণ বেশী বন্দি। ৫শ’ ৩০ জন ধারণ ক্ষমতার কারাগারে রয়েছে এখন ৪ হাজার ২শ’ ৩৩ জন বন্দি।

একাদশ নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক বন্দি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিদিন আসছে নতুন বন্দি। এতে করে বন্দির চাপে হাঁপিয়ে উঠছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

সূত্রে জানা গেছে, ধারণ ক্ষমতার ৮ গুণ বন্দি ও অভ্যন্তরীণ অসংখ্য সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কক্সবাজার জেলা কারাগার। আটক হাজতীদের সাথে সাক্ষাতেও স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে অন্তহীন দূর্ভোগ। ৫শ’ ৩০ জনের একটি স্বাক্ষাৎঘর সেখানে কিভাবে ৪ হাজার বন্দি দেখা ঘরে আসবে তা সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও মিলে না দেখা। নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় বাড়িতে। বিশেষ করে টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া ও কুতুবদিয়া থেকে আসা বন্দির স্বজনরা নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

জনবল সংকটসহ কক্সবাজার জেলা কারাগারে তৈরি হয়েছে নানামূখী সমস্যা। কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসক সংকটে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে কক্সবাজার কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা কলেজ ছাত্র ইসমাইল হোসেন জানান, বর্তমান জেল সুপার মোহাম্মদ বজলুর রহমান আখন্দ এই কারাগারে যোগদানের পর থেকে সেখানকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় বন্দি সকলেই খাবার ও থাকা নিয়ে ভাল থাকলেও, কষ্ট পোহাচ্ছেন চিকিৎসক, বাথরুম ও নিত্য প্রয়োজনীয় পানি নিয়ে। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দির কারণেই এই অবস্থা ক্রমশ প্রকট আকার নিচ্ছে বলে তাদের অভিমত।

এদিকে ৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকালে আকস্মিক কক্সবাজার কারাগার পরিদর্শণ করেছেন মানবাধিকার চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

তিনি সকাল ১০টায় কারাগারে পৌছালে জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ, জেলার রীতেশ চাকমা ও ডেপুটি জেলার মনির হোসেন তাকে স্বাগত জানান।

পরিদর্শনকালে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কারাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন এবং বন্দীদের সাথে কথা বলেন। তিনি বন্দীদের মামলার বিষয়েও খোজ খবর নেন। যাদের মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই তাদের লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

ধারণক্ষমতার ৮ গুন বন্দী থাকার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্মাণাধীন ৬ ভবণের কাজ দ্রুত সমাপ্ত করার নির্দেশ দেন। তিনি জেলের অভ্যন্তরে পরিপাটি পরিবেশ, দেয়ালে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজের দৃশ্য এবং শিক্ষণীয় নানা আলপনা, বন্দীদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয়জলের সু-ব্যবস্থা, শিশুপার্ক, নতুন ভবন, রান্নাঘর, ক্যান্টিন, পতাকা মঞ্চ, দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগারসহ সার্বিক পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি মহিলাবন্দীদের সাথে থাকা শিশুদের জন্য নির্মিত শিশুপার্ক দেখে বিমোহিত হন।

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালেও একবার কক্সবাজার কারাগার পরিদর্শণ করেছিলেন বলে জানান। তিনি তখনকার জেলের চিত্রের সাথে বর্তমান চিত্রের মধ্যে উন্নয়ন ও উন্নতির ধারাবাহিক অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরিদর্শনকালে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ছাড়াও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর, কাজী আরফান আশিক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসারসহ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মঙ্গলবার কক্সবাজার কারাগার পরিদর্শণে বন্দিদের সাক্ষাৎ কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে বিরাজ করছে ভয়াবহ চিত্র। সাক্ষাত প্রার্থীদের সাথে কারা অভ্যন্তরে বন্দি বেশী থাকায় স্বজনরা পোহাচ্ছেন অন্তহীন দূর্ভোগ।

বাহির থেকে কোন স্বজন ভেতরে থাকা তার কোন আত্মীয়কে ডাক দিলে জবাব দিচ্ছেন অন্যজন। স্বল্প পরিসরের একটি সাক্ষাৎ কক্ষে গাদাগাদি করে এতোগুলো লোক স্বজনদের সাথে কথা বলায় দৃশ্যটা দেখে মনে হবে, এই যেন মাছের বাজার। কাজেই এই অবস্থায় কক্সবাজার কারাগারের সব সমস্য গুলো চিহ্নিত করে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এখন ভুক্তভোগী সকলের দাবি।

সদ্য যোগদানকৃত কারাগারের জেলার রীতেশ চাকমা জানান, জেলা কারাগারে সব সময় ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি বন্দী থাকে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পুলিশের বিশেষ অভিযান চলমান থাকায় প্রতিদিন বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা, মাদক ও ছিনতাইকারী-ডাকাত ইত্যাকার বন্দি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারের বন্দিরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ধারণ ক্ষমতার অধিক বন্দি থাকায় তাদের ঘুমানোর জায়গা, বালিশ, টয়লেটের ব্যবহারসহ নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে। তীব্র সমস্যায় ভুগছেন বন্দিরা চিকিৎসা সেবা নিয়ে। যেখানে একজন স্পেশালিস্ট চিকিৎসক ও ২ জন নার্স থাকার কথা সেখানে একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে ৪ হাজার ২শ’ ৩৩ জনের চিকিৎসা কার্যক্রম।

জেল সুপার মোহাম্মদ বজলুর রহমান আখন্দ জানান, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারনে এই কারাগারে বন্দিদের সকলে যেমন ভাল রয়েছেন, অনুরূপভাবে তাদের অসুবিধাও প্রকট। কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা স্বত্বেও ধারণ ক্ষমতার ৮ গুন বেশী বন্দি থাকা এই সব হাজতী কয়েদিদের উপযুক্ত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনিও সংশ্লিষ্টদের জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন