কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অস্তিত্ব সংকটে

fec-image

কক্সবাজার-টেকনাফ শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়ক এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও চলমান বর্ষায় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। এমন অভিযোগ যানবাহন চালকদের।

এ সড়কটি দেশের সর্বদক্ষিণে যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হওয়াতে অনেকটা গুরুত্ব বহন করে। তারপরও এটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। সড়ক ও জনপদ বিভাগ মাঝেমধ্যে পরিত্যক্ত ভাঙ্গাচুরা ইট দিয়ে সড়কের গর্ত ভরাট করে তাদের দায়িত্ব শেষ করতে দেখা গেছে। সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানালেন, সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে।

মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় এগিয়ে আসা এনজিওদের ব্যবহৃত যানবাহন ও ক্যাম্পে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি এবং নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ কাজে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে গত ২০ মাসে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটির পুরো অংশে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্তে একাকার হয়ে পড়েছে।

এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের তথ্যমতে ২০ মাসে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ৬৫ জন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আহত হয়েছে আরও শতাধিক। এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), সড়ক ও জনপদ বিভাগের যৌথ অর্থায়নে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ শুরু হওয়ায় এতদাঞ্চলের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলো।

ওই সড়ক নির্মাণ কাজ বর্ষার আগেই দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়ায় সড়কটির অবস্থা বর্তমানে কাহিল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করে যাত্রীরা জানায়, সড়কটির এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কোনখানে গেলে আবার যে ফিরে আসা হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্যস্ততম এ সড়কটির দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্মাণাধীন ৫০ কিলোমিটার সড়ককে ২টি প্যাকেজে ভাগ করেছে। তম্মধ্যে প্রথম প্যাকেজ ১শত ২২ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে কক্সবাজার লিংক রোড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে টিসিসিএল এন্ড মেসার্স জামিল ইকবাল লিঃ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ২য় প্যাকেজ ১শত ৫৪ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তাহের ব্রাদার্স লিঃ, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিঃ ও সালেহ আহমদ বাবুল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।

উখিয়া বাস-মিনিবাস মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো জানান, ঠিকাদারী সংস্থার কাজের গতি দেখে মনে হয় এ সড়কটি আগামী ৫ বছরেও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে না। সড়ক পথে মানুষের আহাজারি, যাত্রীদের দুর্ভোগ  যেন এক নিত্যদিনের চিরাচরিত প্রথায় পরিণত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে কাজের গতি বাড়িয়ে এলাকার মানুষের যাত্রা দুর্ভোগ কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, সড়কের উভয় দিকে ৩ ফুট করে ৬ ফুট এবং জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪৫ ফুট সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘নির্মাণ কাজের গুনগতমান ও টেকসই উন্নয়ন কাজ করার জন্য ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে দখল বেদখল ও অবৈধ স্থাপনাসহ সড়কের অংশ বিশেষ পুনরায় মাটি দিয়ে ভরাট করতে গিয়ে উন্নয়ন কাজ এগোয়নি। দুটি প্যাকেজে ৫০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের আওতায় আনা হয়েছে তা অতিসম্প্রতি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছিল। বিধায় প্রথম ধাপে ৫০ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে সড়কের বাকি অংশগুলোর নির্মাণ ও সম্প্রসারণের আওতায় আনা হবে।

উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক সংস্কার কাজে দায়িত্বরত ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সড়কের যে করুণ পরিণতি হয়েছে এমন অবস্থায় কোন লোক যদি মারা যায় তার দায়ভার সংশ্লিষ্টদের বহন করতে হবে। তাছাড়া সড়কপথে যাত্রী সাধারণের অসহনীয় দুর্ভোগ ও নিত্য যানযট বর্ষার কারণে আরও দ্বিগুন বেড়েছে। এমতাবস্থায় নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, এ সড়কটি উন্নয়নের জন্য এডিবি ৫৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরও কেন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না তা নিয়ে জেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করার সম্মতি প্রকাশ করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন