কক্সবাজার বিপদমুক্ত: ঘরে ফিরেছে আশ্রিত মানুষ

Coxs bace to home

আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার না পাওয়ার অভিযোগ, হৃদরোগ আক্রান্তে মহিলার মৃত্যু

আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার থেকে:
অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন কক্সবাজারের উপকূলীয় বাসিন্দারা। ‘মহাসেন’ থেকে ‘বিপদ মুক্ত’ ঘোষণার পর ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত লাখো মানুষ বাড়ি ফিরে যেতে শুরু করে। এদিকে বুধবার রাত থেকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়া লোকজন শুকনো খাবার সংকটের অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় জেলার বেশ কিছু স্থানে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। ‘আতংকে’ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহেশখালীতে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন উপকূলীয় বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’র আশংকায় কক্সবাজারের ৫৩৫ টি আশ্রয় কেন্দ্রে বুধবার বিকেল থেকেই সরকারী হিসেবে দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নেয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন উঁচু জায়গা এবং সরকারী বেসরকারী ভবনেও আশ্রয় নেয় কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ। কক্সবাজার শহরে বেশ কয়েকটি হোটেলেও নিকটবর্তী নিচু এলাকায় মানুষ গুলো আশ্রয় নেয়। বৃহস্পতিবার সকালে কিছু লোক আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে গেলেও ‘মহাসেন আতংক’ না কাটায় অধিকাংশ লোক থেকে যায়। পরে বিকেল তিনটার ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ থেকে কক্সবাজার জেলা বিপদমুক্ত বলে জানিয়েছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস। তবে সাগর উত্তাল থাকায় এখনো ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানিয়েছেন, এটি কক্সবাজার উপকূলে আর আঘাত হানার আশঙ্কা নেই।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিনও সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে জেলাকে আপাতত ‘বিপদমুক্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক সাংবাদিকদের জানান, “ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ায় কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। তবে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া আরও কিছুদিন খারাপ থাকতে পারে।”
তিনি আরো জানিয়েছেন, “কক্সবাজারকে বিপদমুক্ত বলা গেলেও এখনও ৭ নম্বর বিপদ সংকেতই দেখিয়ে যেতে হবে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। তাই আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত ৭ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল থাকবে।”
বিপদমুক্ত ঘোষণার পর থেকে অবশিষ্ট লোকজন আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যেতে শুরু করে।
এদিকে কয়েকটি বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন’র ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিকরা তাদের ‘লাইভ’ রিপোর্টিংয়ে বিভ্রান্তকর তথ্য পরিবেশন করায় পুরো দেশবাসীকে আতংকিত ও শংকিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং দমকা হওয়া প্রবাহিত হয়েছে। ওই সময় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে। এতে করে কিছু সময়ের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিশলাইন সংযোগও বিচ্ছিন্ন ছিল।
এছাড়া দুপুরের দিকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া, সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ও পেকুয়ার মগনামার কিছু কিছু নিচু জায়গা প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই প্লাবন স্বাভাবিক। এতে কোন ধরণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে বুধবার রাত থেকেই কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগর মাঝারী ধরণের উত্তাল রয়েছে।
এদিকে বুধবার রাত থেকে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষদের কোন প্রকার শুকনো খাবার সরবরাহ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কুতুবদিয়া এবং ধলঘাটার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজন মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের এ অভিযোগ করেন।
তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন এমন তথ্য সঠিক নয় বলে দাবী করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন