করোনা’র করাল থাবায় লণ্ডভণ্ড মানিকছড়ি’র কৃষককূল

fec-image

বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনা’র প্রভাবে মানিকছড়ি’র কৃষক সমাজ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লকডাউনে বাজার ক্রেতাশুন্য থাকায় কৃষকের উৎপাদিত হাজার হাজার টন শাক-সবজি, তরকারী ও মৌসুমি রসালো ফল-ফলাদি দীর্ঘ দুই মাস বাজারজাত করতে না পারায় চাষীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে! চলতি মাসের শুরুতে বাজারে পাইকার আসলেও সমতলে মালামালের চাহিদা কম থাকায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা। করোনা’র করাল গ্রাসে থমকে গেছে চাষীর জীবন-যাত্রার চলমান গতি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মানিকছড়ির সর্বত্রই এবার শাক-সবজি, মৌসুমি ফল-ফলাদির ভাল ফলন হয়েছে। পুরো উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে ও ন্যায্যমূল্যে বাজারজাত করতে প্রতিনিয়ত জমায়েত হন উপজেলা তথা জেলার ঐতিহ্যবাহী তিনটহরী কাচাঁ বাজারে। সমতলের পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা পণ্যপরিবহন সুবিধা জেনে এ জনপদে মালামাল কিনতে উপচেপড়া ভীড় করে প্রতিনিয়ত।

সাম্প্রতিকের বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনা’ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারি গত দু’মাস দেশে লকডাউন ঘোষণার ফলে মানুষজন গৃহবন্দি থাকায় হাঁট-বাজার হয়ে পড়ে ক্রেতাশুন্য! ফলে পুরো উপজেলার প্রায় দশ হাজার ক্ষুদ্র,মাঝারী ও প্রান্তিক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলাদি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ে! বাজারে পাইকার না থাকায় এখানকার শাক-সবজি, তরকারী ক্ষেত-খামারে পচতে থাকে। ৫-১০ টাকায়ও কাকড়ল, চিচিঙ্গা, কইডা, করলা, বরবটি, ঢেঁড়শ কিনার গ্রাহক পাওয়া যায়নি!

দীর্ঘ দুই মাস এমন চরম দূরাবস্থা শেষে জুন মাসের প্রথম দিন থেকে বাজার পুরোদমে খুললেও সমতলে তরকারী ও মৌসুমি ফল-ফলাদির ব্যাপক চাহিদা না থাকার অজুহাতে ন্যায্যমূল্যে মালামাল কিনছে না পাইকাররা। উপজেলার সকল কৃষকরা প্রতিদিন ভোরে ক্ষেতের ফসল বিক্রির আশায় বাজারে আসলেও গ্রাহকের চাহিদা না থাকায় পানির দরে মালামাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে! এছাড়া মৌসুমি রসালো ফল আনারস, লিচু, কাঁঠাল, জামের চাহিদাও আগের তুলনায় অনেক কম। আনারস প্রতিশ গড়ে হাজার-বারোশ টাকা। লিচু ২শত থেকে আড়াইশ টাকা। আর কাঁঠাল প্রতি পিস গড়ে ৩০-৫০ টাকা। এখানকার হাঁট-বাজারে কৃষকের স্বপ্ন লণ্ডভণ্ডের চিত্রে ভেসে উঠছে কৃষকের বুকফাটা কান্না আর আহাজারি!

কৃষক মো. আবদুল বারেক বলেন, কৃষক নাকি দেশের প্রাণ? তাহলে প্রাণ বিহীন দেহে বেঁচে থাকা অসম্ভব! যদি আমাদের খাগড়াছড়িতে হিমাগার থাকত তাহলে এমন দুঃসময়ে মানুষজন ফসলাদি সংরক্ষণ করতে পারত।

তিনটহরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাহাড়ের এসব সুস্বাদু মৌসুমী ফল-মূল, সবজি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে খাগড়াছড়ি জেলায় একটি হিমাগার স্থাপন খুবই জরুরী। নচেৎ কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম মজুমদার কৃষকের চরম দুর্ভোগ ও দুঃসময়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনা’য় কৃষকের স্বপ্ন লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রণোদনা দিলে কৃষক বাঁচবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন এ প্রসঙ্গে বলেন, এখনকার শতকরা ৮৫-৯০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। আর কৃষক তাদের উৎপাদিত ফল-ফলাদি, তরকারী বিক্রি করেই সংসার চালায়। এবার করোনা’র করাল গ্রাসে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তৃণমূলে কৃষকের ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে সরকার ভাবছে। আশা করছি অচিরেই কৃষকের বিষয়ে প্রণোদনা কিংবা অন্য কোন সহায়তা দিবে সরকার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন