‘করোনা’ দুর্যোগেও মানিকছড়ির তৃণমূলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবায় স্বাস্থ্যকর্মীরা

fec-image

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশের মানুষজন কার্যত কর্মহীন ও গৃহবন্দি। প্রান্তিক জনপদে জনগণের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় এখানকার লোকজন সরকারি হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নেয়া এই মুহূর্ত্বে একটু কঠিন ও কষ্টসাধ্য।

এছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে সাধারণত সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর ও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। ফলে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার তৃণমূলে কম-বেশি ভাইরাস জ্বরসহ নানা রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে লোকজন।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৃণমুলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ১৪জন সিএইচসিপি’কর্মী, ৮জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৫জন পরিবার কল্যাণ সহকারী, ২জন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও ২জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা।

এক কথায় তৃণমূলের জনগণের একমাত্র ভরসা সিএইচসিপি’কর্মী, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী ও স্বাস্থ্য সহকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মন-প্রাণ খুলে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্যসেবা দিয় যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপদে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বকে লণ্ডভণ্ড করা করোনাভাইরাস সারা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন! এতে জনমনে দেখা দিয়েছে ভীতি ও অনিশ্চয়তা।

সরকার দেশে মার্চ মাস থেকে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় ছুটি ঘোষণাসহ জনচলাচলে বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখায় জনপদে মানুষজন গৃহবন্দি। তৃণমূল থেকে উপজেলা সদর সর্বত্র রাস্তা-ঘাটে সাইকেল, রিক্সা, মোটরসাইকেল ও গাড়ী চলাচল সীমিতসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে বর্ষার মৌসুমে ঘরে ঘরে কম-বেশি সর্দি-কাশি ও সাধারণ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-কিশোর, বয়োঃবৃদ্ধরা। ইচ্ছা থাকলেও উপজেলা হাসপাতালে আসার সু-ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফলে সবাই নিরুপায় হয়ে ছুটছেন দৌরগোড়ার কমিউনিটি ক্লিনিকে।

মানুষের এ দুঃসময়ে বিবেকের তাড়নায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছেন গ্রামে-গঞ্জে থাকা সরকারের বিশেষ প্রকল্পে পরিচালিত কমিউনিটি ক্লিনিকের ‘কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার’ (সিএইচসিপি)কর্মী। ফলে এই দুঃসময়েও অনায়াসে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন গ্রামে খেঁটে খাওয়া সাধারণ মানুষজন। এতে স্বস্থিবোধ করেছেন অসুস্থ ব্যক্তি ও পরিবাব-পরিজন’রা।

আর এই কঠিন মুহূর্ত্বে বৈশ্বিক মহামারি কালীন সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি’কর্মীরা স্বাস্থ্যের পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়াই উপজেলার ১৪টি ক্লিনিকে অবিরাম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।

সামান্য মাক্স, ইউনিফর্ম ও পিপিই পড়ে প্রতিনিয়ত অফিস করছেন সিএইচসিপি’কর্মী ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। প্রতিটি ক্লিনিকে মাসে একবার শিশুদের টিকাদান, সপ্তাহের ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সাধারণ সেবার পাশাপাশি গর্ভবতী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যপরিচর্যা, সন্তান প্রসব ও পরিবার-পরিকল্পনার স্থায়ী এবং অস্থায়ী পদ্ধতি সর্ম্পকে অবহিতকরণ সেবা অব্যাহত রাখেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এক কথায় তৃণমূলে অসহায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় অঙ্গা-আঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছেন তারা। কিন্তু করোনা’র এই কঠিন দুর্যোগ সত্ত্বেও এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা সুরক্ষিত নেই! নামে মাত্র কিছু গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটেশন ও ৩টি’ পিপিই সরবরাহ করেই দায়িত্ব শেষ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!

উপজেলার ছুদুরখীল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি’কর্মী মো. মনির হোসেন ও গচ্ছাবিল মডেল কমিউনিটি ক্লিনিকের ফাতেমা আক্তার বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আতংক নিয়েই আমরা প্রত্যন্তাঞ্চলে মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গর্ভবতী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মাতৃত্বকালীল সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এছাড়া আমরা সর্দি, কাশি কিংবা জ্বরের লক্ষণ বুঝে প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত করি এবং জটিল সমস্যা হলে উপজেলায় প্রেরণ করি।

অন্যদিকে মা ও শিশুদের টিকাদান কর্মসূচীর স্বাস্থ্য সহকারী রাশেদা আক্তার বলেন, আমরা উপজেলার তৃণমুলের প্রতিটি সাব ব্লকে মা ও শিশুদের দশটি মারাত্বক রোগের ছয়টি টিকা দিয়ে থাকি।

সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনা’র প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যান্তঞ্চলের মা ও শিশুদের টিকা দিয়ে যাচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন খীসা বলেন, উপজেলার ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৪টিতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পিপিইসহ স্বাস্থ্য সু-রক্ষার সামগ্রী পর্যাপ্ত না থাকায় সিএইচসিপি’ কর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীর চাহিদা মাফিক পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে না পারলেও চেষ্টা করছি তাদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত রেখে জনপদে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, মানিকছড়ি, সিএইচসিপি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন