কল্পনা চাকমার কথিত অপহরণ: উপজাতি সন্ত্রাসীদের জুম্মল্যান্ড গঠন ও অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার         

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে বিতর্কিত করার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত নানান ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা যে সমস্ত মিথ্যা, বানোয়াট ও আষাঢ়ে গল্প তৈরী করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘‘কল্পনা চাকমা অপহরণ নাটক”।

জনৈক কল্পনা চাকমার বিষয়ে প্রচারিত গল্পের কোন সত্যতা বা ভিত্তি না থাকলেও বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস ও বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে থাকে তারা। কল্পনা চাকমাকে লাইম লাইটে নিয়ে এসে ১৯৯৬ সাল থেকে তারা এমনভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছে যেন, কল্পনা চাকমাই পাহাড়ে একমাত্র অপহরণের শিকার?

একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমিও চাই, কল্পনা চাকমা অপহরণ ইস্যুর একটা সমাধান হোক। তবে কল্পনা চাকমাকে জড়িয়ে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যেভাবে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে যা ভিত্তিহীন।

মূলতঃ কল্পনা চাকমাকে পুঁজি করে উপজাতি সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা থেকে তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে এখানে নৈরাজ্য কায়েম আর পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ‘স্বাধীন জুম্মল্যান্ড‘ গঠন করার স্বপ্নে বিভোর। পাশাপাশি, কল্পনা চাকমা ইস্যুকে বাণিজ্য হিসেবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংস্থার কাছে সহানুভূতি আদায়ের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আর সে কারণেই তারা সভা-সমিতি, বক্তৃতা আর বিবৃতির মাধ্যমে বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখছে এ ইস্যুটি।

প্রশ্ন হচ্ছে, কল্পনা চাকমা এখন কোথায়? তিনি কি আদৌ অপহৃত হয়েছিলেন? তিনি কি সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন? তিনি কি স্বজন বা পরিচিত কারো দ্বারা অপহৃত হয়েছিলেন? তিনি স্বীয় সংগঠন কর্তৃক রাজনৈতিক দাবার গুটি হিসেবে অপহৃত হয়েছিলেন? তিনি কি মারা গেছেন? তিনি কি বেঁচে আছেন? বেঁচে থাকলে কোথায় আছেন? এমন প্রশ্ন বিগত ২৪ বছর ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। আসুন জেনে নেয়া যাক প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিলো কল্পনা চাকমাকে কেন্দ্র করে।

কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম হিল উইমেন্স ফেডারেশনের (এইচডব্লিউএফ) সাংগঠনিক সম্পাদিকার দায়িত্বে ছিলেন। শান্তিচুক্তির পর বিলুপ্ত তৎকালীন শান্তিবাহিনী ১৯৯৬ এর সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি জেলায় নিজস্ব প্রার্থী হিসেবে তাদের অঙ্গ সংগঠন পাহাড়ী গণপরিষদের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য বিজয় কেতন চাকমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায়। তার পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), পাহাড়ী গণপরিষদ (পিজিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) কে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

অপরদিকে, রাঙামাটিতে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জনাব দীপঙ্কর তালুকদারের পক্ষে নাগরিক কমিটিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালী জনগোষ্ঠী সমর্থন দেয় এবং প্রচারে নামে। তৎকালীন শান্তিবাহিনীর সমর্থক পিসিপি, পিজিপি ও এইচডব্লিউএফ নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর জয়লাভে শঙ্কিত হয়ে উপজাতীয়দের হুমকি ও হয়রানি শুরু করে। কল্পনা চাকমা এইচডব্লিউএফ-এর নেত্রী হয়েও আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কাজ চালাচ্ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উপদলীয় কোন্দলের সৃষ্টি হয় এবং তাকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য হুমকি দেয়া হয়।

অন্যদিকে, কল্পনা চাকমার প্রেমিক (পরবর্তীতে স্বামী) অরুণ বিকাশ চাকমা ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ভারতীয় যুব কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অরুণ চাকমা বেশ কয়েকবার কল্পনা চাকমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। এতে কল্পনা এবং অরুণ দুজনের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল।এই সম্পর্কের কথা কল্পনার বাড়িতে জানাজানি হলে কল্পনার পরিবার সে সম্পর্ককে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

ঠিক সে সময় কল্পনা চাকমা যখন আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য শান্তিবাহিনীর কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলো তখন তিনি অতি গোপনে দেশত্যাগ করেন এবং ভারতের অরুণাচল প্রদেশে অবস্থানরত তার প্রেমিক অরুণ বিকাশ চাকমার কাছে চলে যান। এ ঘটনাটিকে অত্যন্ত কৌশলে কাজে লাগায় তৎকালীন শান্তিবাহিনী ও এর অঙ্গ সংগঠন পিসিপি‘র সদস্যরা। এ অবস্থায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিপক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে কল্পনা চাকমাকে অপহরণের নাটক সাজায় শান্তিবাহিনী ও পিসিপি।

ভারতে পলায়নের পর থেকে কল্পনা চাকমা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে তার স্বামীর বাড়িতে সুখে শান্তিতে সংসার করছেন। আর এদিকে পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আজো তাকে পুঁজি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ, পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস-ইউপিডিএফের হাতে নিয়মিতভাবে সাধারণ উপজাতি ও বাঙালীরা ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, হলেও সেগুলো নিয়ে তাদের কোন উচ্চবাচ্য নেই। এমনকি, সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে হাজার হাজার নারী ধর্ষণ, অপহরণ, খুন হলেও সেগুলো নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।

অথচ, কল্পনা চাকমাকে কথিত অপহরনের নাটক সাজিয়ে সেটাকে পুঁজি করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে আন্দোলন করছে। এই অপপ্রচারের উদ্দ্যেশ্য হলো পাহাড় থেকে সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করা। কারণ পাহাড়ে সেনাবাহিনী না থাকলে উপজাতি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সুবিধা হবে, আর পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তাদের যে ষড়যন্ত্র সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হবে।

পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম বড় নাম হলো এমএন লারমা। যাকে তারা জুম্ম জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে তারা প্রচার করে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এমএন লারমার হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আজ অবধি গত ৩৭ বছরে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কোথাও কোন মামলা হয়নি, বিচার দাবী হয়নি। এমএন লারমাকে হত্যা করার বিষয়টির যথাযথ প্রমাণ ও সত্যতা থাকার পরও এ বিষয়ে কোন আন্দোলন অথবা প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেনি।

অন্যদিকে, অখ্যাত কল্পনা চাকমার অপহরণ নাটকে প্রচারিত গল্পের কোন সত্যতা বা ভিত্তি না থাকলেও বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস ও বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। এমনকি এ বিষয়ে মামলাও হয়েছে। এটা উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর স্ববিরোধী ভূমিকারই বহিঃপ্রকাশ নয় কি? এমএন লারমা হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবীতে কোন প্রতিবাদ, মিছিল মিটিং না করলেও কেন কল্পনা চাকমার অপহরণের মিথ্যা একটি অভিযোগ দিয়ে প্রতি বছর কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস পালনের নামে হৈ চৈ করে পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো? কল্পনা চাকমা কি এমএন লারমার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কেউ?

কল্পনা চাকমা অপহরণ বিচারের দাবীতে পাহাড়ের উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো বিগত ২৪ বছর ধরে মুখে ফেনা তুলছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো কর্তৃক ঘটনাপঞ্জীতে এমন শত শত নারী অপহরণ, খুন ও নির্যাতনের শিকার হলেও তাদেরকে নিয়ে কেন উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে? ঐ সব নারীরা কি তাদের মা-বোন নয়? বিচারহীনতায় ভুগছে এমনই কিছু নারীর ঘটনা তুলে ধরছি যাদের ব্যাপারে উপজাতি সংগঠনগুলো নীরব রয়েছে-

১। গত জুন ২০১৩ তারিখে, রাঙামাটির কুতুকছড়িতে চলন্ত অটোরিক্সা থেকে নামিয়ে রিনা ত্রিপুরা নামে এক পাহাড়ি যুবতিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। যার সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। অপহৃত রীনা ত্রিপুরার বাড়ি বান্দরবানের লামা উপজেলার কুমারী পাড়ার ইয়াং ছড়া গ্রামে।

২। ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক সৈকত ভদ্র সরকার ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার স্ত্রী রেটিনা চাকমাকে নিলামের হাত থেকে বাঁচান। রেটিনা চাকমা ভালবেসে বাঙালি ছেলে সৈকত ভদ্রকে বিয়ে করায় উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ তাকে ঢাকা থেকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে গণ ধর্ষণের জন্য নিলামে তোলে।

৩। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার ক্ষেত্রলাল ত্রিপুরার মেয়ে দীপা ত্রিপুরাকে গত ১২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে অপহরণ করে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কর্মীরা। অপহরণের পর একটি জুম ঘরে আটক করে দীপা ত্রিপুরাকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে পিসিপি‘র এসব সন্ত্রাসীরা। এসময় পুরো গণ-ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে তারা।

৪। গত ২৯ মে ২০১৬ তারিখে, রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জেএসএস (সন্তু) গ্রুপ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) অর্থ সম্পাদক সুনীতিময় চাকমা এর নেতৃত্বে প্রায় ২০ জনের একটি দল আয়না চাকমা নামক এক কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর গহিন জঙ্গলে নিয়ে আয়না চাকমাকে যৌন নির্যাতন করে তারা।

৫। গত ৩০ মে ২০১৬ তারিখে, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থেকে আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস (সন্তু) গ্রুপ এর হাতে অপহৃত হন অবসর প্রাপ্ত সার্জেন্ট মুকুল চাকমা। যিনি এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ। ঘটনার পর বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে থানায় মামলা দায়ের করার পর থেকে স্থানীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক নানারকম হুমকির সম্মুখীন হয়েছে মুকুল চাকমার স্ত্রী এবং কন্যা নমিসা চাকমা। চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের অনার্সের ছাত্রী নমিসা চাকমা নিরাপত্তাহীনতার কারণে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন তারা সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে নিজ ভিটেমাটি ছেড়ে আত্নগোপনে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার মা এবং তারা দুই বোন এখন আর পৈতৃক ভিটায় যেতে পারছেন না।

৬। ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার নানাপুরণ গ্রামে নিজ বাড়ী থেকে অস্ত্রের মুখে জোসনা চাকমাকে তুলে নিয়ে যায় ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপ সমর্থিত সংগঠন যুব পরিষদ কর্মীরা। গলায় ও পায়ে শিকল পরিয়ে দীর্ঘ ২ মাস নির্যাতন করা হয় মেয়েটিকে। পরে নিরাপত্তাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে। রাঙামাটি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অপহৃত জোসনা চাকমা ও তার স্বামী অপু চন্দ্র সিংহ এসব নির্যাতনের বর্ণনা দেন, বিচার চান। কিন্তু উপজাতি সংগঠনগুলো এখানে নীরব।

৭। ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের আরামবাগ এলাকায় ভগ্নিপতির ভাড়া বাসায় বোন ও ভগ্নিপতির অনুপস্থিতিতে ৫ উপজাতি যুবক কর্তৃক গলা কেটে হত্যা করা হয় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমাকে।

৮। ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অস্বীকৃতি জানানোর কারণে সন্ত্রাসীরা গত ৪ জুলাই ২০১৭ তারিখে রাঙামাটির নানিয়ারচরের লম্বাছড়ি থেকে মদন চাকমার স্ত্রী শুবলপুরি চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে মাসের পর মাস যৌন কাজে ব্যবহার করে।

৯। গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মাটিরাংগার বাইল্যাছড়ি এলাকা হতে চলন্ত বাস থেকে স্বামীর সামনে থেকে নয়ন ত্রিপুরা ওরফে ফাতেমা বেগমকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সন্ত্রাসীরা।

১০। গত ২৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের নয়মাইল এলাকায় স্কুলছাত্রীর কৃত্তিকা ত্রিপুরা (১২ বছর বয়স) কে হত্যা করা হয়। কৃত্তিকা ত্রিপুরা ছিলো নয় মাইল ত্রিপুরা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

১১। ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের পক্ষে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় মিতালী চাকমা নামে রাংগামাটি সরকারী কলেজের ডিগ্রী ৩য় বর্ষের এক কলেজ ছাত্রীকে টানা তিন মাস তাদের আস্তানায় আটকে রেখে শারীরিক অত্যাচার ও ধর্ষণ করে ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সদস্যরা। গত ১৭ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মিতালী চাকমাকে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সদস্যরা।

১২। গত ১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা-বাঘাইহাট সড়কের শুকনাছড়ি এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী রিমি চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলো ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সন্ত্রাসীরা।

১৩। সর্বশেষ উদাহরণ- চলতি মাসের ৭ জুন তারিখে রাত ১১টায় প্রসীত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার লম্বাছড়া এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তরু চাকমার মেয়ে স্বপ্না চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে রাতভর তার উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক, পৈশাচিক ও বর্বর নির্যাতন চালায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে যেসব হত্যা, অপহরণে বিচার চায় না কেউ! বছরের পর বছর আন্দোলনও করে না তারা। বিশেষ কোন দিবসও পালন করে না। কিন্তু কল্পনা চাকমাকে নিয়ে একটি কুচক্রী মহলের এতো মাতামাতি, মানবতাবোধ বা সংবেদনশীলতা কেন?

তাদের এই মানবতাবোধ বা সংবেদনশীলতা যে কল্পনা চাকমার প্রতি নিখাদ ভালোবাসা অথবা মনুষ্যত্বের কারণে নয়, সেটা অবশ্য এতক্ষনে কারো বুঝতে দেরি হওয়ার কথা নয়। কারণ একজন নারীর প্রতি ভালবাসার কারণে তাদের এত মানবতাবোধ আর মমত্ব থাকলে আমি উপরে যে ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছি সেগুলো ঘটনা নিয়েও তাদের একই রকম সরব হতে দেখতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এই যে, এমনটা হয়নি; বরং পার্বত্য অঞ্চলের অন্য অনেক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তারা প্রতিবাদ করেনি এবং করছেও না।

এর কারণ- উপজাতি সন্ত্রাসীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ‘সেনাবাহিনী হটাও’ নীতি আর কল্পনা চাকমাকে পুঁজি করে বাণিজ্য। আর তাই তো উপজাতি সংগঠনগুলো কল্পনা চাকমা অপহরণের একটি মিথ্যা ইস্যু দাঁড় করিয়ে বছরের পর বছর অযৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে ব্যবসা করছে আর সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে হটিয়ে তাদের জুম্মল্যান্ড গঠনের স্বপ্ন দেখছে। পরিশেষে তাই বলতে চাই- পাহাড়ে শান্তির জন্য এবং বাংলাদেশের অক্ষন্ডতা রক্ষার জন্য কল্পনা চাকমাকে নিয়ে উপজাতি সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বন্ধ করতে সকল মহলের জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত।

লেখক: রাঙামাটি থেকে

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কল্পনা চাকমা, কল্পনা চাকমা অপহরণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন