কাউখালীতে লেক দখল করে ভবন নির্মাণ

Kaukh -25
আলমগীর মানিক,রাঙামাটি
সরকারি জমি দখল ও পরে লিজ নিয়ে ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাঈন উদ্দিন ও তাঁর ভগ্নিপতি। আর এখন এই জমিতেই লেক দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ভবন।
স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করায় পরিবর্তন হচ্ছে ভূমির আকৃতি। কমছে নাব্যতা, বাড়ছে পরিবেশ দুষণ। বিপন্ন হচ্ছে লেকে মাছের অভয়াশ্রম। তবে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা চত্তরেই ইছামতি লেকের উপর বিভিন্ন মাপের প্রায় ২৭টি প্লটে রয়েছে বেড়া আর টিন শেডের তৈরী অর্ধশত দোকান। পরিষদ থেকে এক বছর মেয়াদী লিজ নেয়া এ প্লটগুলোতেই অবৈধভাবে লেক দখল করে পাল্লা দিয়ে চলছে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ।
ঘটন্াস্থলে গিয়ে দেখা গেছে- বাইরে তালা ঝুলিয়ে ভিতরে চলছে এই নির্মাণজজ্ঞ। কিছুটা শুকিয়ে যাওয়ায় লেক দখল করেই আরসিসি পিলার দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এক তলার ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজও। ভবন বাড়ানোর জন্য উত্তর এবং দক্ষিণ পাশে রাখা হয়েছে ছাঁদের বর্ধিত রড। কর্মরত মিস্ত্রি মোঃ জালাল(৪০) জানান- ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ এই ভবনটি ৪ তলা উপযোগী ভিত্তি দেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ কিংবা দখল-বেদখলের ঘটনার নেপথ্য নায়ক হিসাবে বারবার উঠে এসেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর কাজী আহছান উল্লাহর নাম। এসংক্রান্ত সব ফাইল তাঁর দায়িত্বে থাকায় কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে যাবতীয় বুদ্ধি পরামর্শ সবই তিনি চুক্তিভিত্তিক করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আহছান উল্লাহর কক্ষে বসেই কথা হয় এসব অভিযোগ নিয়ে। তাঁর স্বভাব সুলভ উত্তর- আমাকে সবাই ফুটবল পেয়েছে। পাল্টা প্রশ্নও জুড়লেন-প্রশাসন ব্যবস্থা নানিলে আমার কি করার আছে? শুধু ইউএনও অফিসকে দেখলেন কেন উপজেলা চেয়ারম্যান অফিস দেখেননা ?
ফাইল থেকে জানা যায়, কালবৈশাখী ঝড়ে দোকান ভেঙ্গে গেছে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিল্লাত উদ্দিন আবেদন করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ২৫ মার্চ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ না করার শর্তে দোকান ঘর সংস্কারের অনুমতি দিয়েছেন।
মিল্লাত উদ্দিন(৩০) জানান- ২লাখ ৬৫ হাজার টাকায় তিনি মাঈন উদ্দিনের কাছ থেকে এই প্লটটি কিনেছেন। মাঈন উদ্দিনই উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লিজ গ্রহীতা হিসাবে আমার নাম পরিবর্তন করিয়েছেন। এখন আমার প্রয়োজনে স্থায়ী অবকাঠামে তৈরী করছি, এতে অসুবিধা কোথায় ?
লিজ নেয়া সরকারী জমি বিক্রেতা মাঈন উদ্দিন(৪০) জানান- টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করেছি এর বেশি কিছু বলতে পারবোনা। তবে মাঈন উদ্দিনের ভগ্নিপতি মোঃ বেলাল জানান-তাঁরা দুটি প্লটই ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংচাপ্রু মারমা জানান-সরকারী জমি হস্তান্তর, বিক্রি এমনকি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ নাই। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনোয়ারা বেগম এ প্রতিবেদককে জানান- সরকারী জমি লিজ নিয়ে কেউ বিক্রি করতে পারেনা। প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হবে। লিজের শর্ত ভঙ্গ করে কেউ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করলে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন