রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

কোটি টাকার ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

fec-image

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে সেলিম এন্ড ব্রাদার্স স্বত্বাধিকারী আরাফাত হোসেন আকাশ নামে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ভবন নির্মাণের ঝিড়ি বালু, রড ও নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয় তারা নয়-ছয় করে বরাদ্দ অর্থগুলো অফিসের সাথে যোগসাজশে পকেট ভারী করার প্রচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগও আছে এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। তাছাড়া দীর্ঘ ১ বছর পর বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবনটিকে টেকসই ভাবে কাজ না করে নির্মাণের কাজে ব্যাপক অনিয়ম দেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে তার পরিবর্তে ঝিড়িবালু, নিম্নমানের ইট ও কাজের ব্যবহৃত উন্নত মানের রডের পরিবর্তে বাংলার টাইগার রড দিয়ে কাজ শুরু করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানের সেসব নিম্ন সামগ্রী দিয়ে গড়ে উঠেছে তিনতলা ভবন। বারবার কাজের মান ঠিক রেখে কাজ করার জন্য এলাকাবাসী অনুরোধ করেও মেলেনি কোন সুরাহা। বরংচ রাত গভীরে সেসব নিম্ন সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ চলমান রেখেছে ঠিকাদার। তাছাড়া রোয়াংছড়ি ঝিরি বালু দিয়ে দু’তলা ভবনের ছাদ ঢালাই দেয়ার পর ধসে পড়ে গেছে বলে অভিযোগও করেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, রোয়াংছড়ির উপজেলায় সাধারণ পরিবারের একমাত্র আস্থা রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। দুর্গম এলাকা থেকে প্রায় ৬শত থেকে ৭শত শিক্ষার্থীরা সেই বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারণ গরীব ঘরে শিক্ষার্থীরা নির্ভরশীল থাকেন বিদ্যালয়ের উপর। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে ঘিরে দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরত ছেলে এবং মেয়েরা শিক্ষা আলোর জন্য ছুটে আসেন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। তাছাড়া বিদ্যালয়টিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও শিক্ষা ভবন থাকলেও অনেক বছর ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণের শিক্ষার্থী থাকায় কোন ছাত্রাবাস ভবন ছিল নাহ। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে আবকাঠামো উন্নয়ন হিসেবে ৪তলায় বিশিষ্ট ভবন ছাত্রাবাস নির্মাণে প্রকল্প পান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সে ভবনে নির্মাণ কাজ টেকসই ভাবে না করে নিম্ন সামগ্রী দিয়ে চলছে ছাত্রাবাস ভবনের কাজ। যার ফলে এলাকাবাসীরা কাজ বন্ধ রাখা চাপ দিলেও কোনো পাত্তাই দেননি ঠিকাদার আরাফাত হোসেন আকাশ।

শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে রোয়াংছড়ির সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণের প্রকল্প পেয়েছেন সেলিম এন্ড ব্রাদার্স স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। যার প্রকল্পের বরাদ্দের ব্যয় ধরা হয়েছে ২কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরে পাশে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় বিপরীতে চারতলা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস ভবনের দুতলা ছাদ ঢালাই কাজ শেষ। এখন চলছে তিনতলা ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। ভবনের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে স্থানীয় ঝিড়ির বালু। শুধু বালু নয় সেখানে নিম্নমানের ইট ও বাংলার রড রাখা আছে। সেসব নিম্ন সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিম্ন সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করাতে ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. নাজিমুদ্দিন সরকার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঠিকাদার কর্তৃপক্ষরা রাতে আধারে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না ইচ্ছে মতন কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। এই বিষয়ে এখন বললে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দিবে। আর নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদার কাজ করছে সেটা অভিযোগ পেয়েছি। যখন কাজ শেষে চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর নিতে আসবে তখন ব্যবস্থা নিব।

ভবন নির্মাণের কেসি ঝিড়ি বালু সরবরাহ দিচ্ছেন উঅম্যা মারমা বলেন, ভবনের নির্মাণের জন্য ঠিকাদার আমার কাছ থেকে প্রতিফুটে ৩০ টাকা করে ঝিড়ির বালু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ভবন নির্মাণ কাজে এ পর্যন্ত প্রায় ৮শত ফুট ঝিড়ির বালু সরবরাহ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য অংশৈচিং মারমা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ বছর পর বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস একটা পেয়েছি। সে ছাত্রাবাস নির্মাণে ঝিড়ি বালু ব্যবহার না করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার বারণ করেছিল। তবুও ঠিকাদার অগোচরে ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া বারবার বারণ করার শর্তেও তিনি কাজ থামেননি। এভাবে হলে ভবনটি কখন ধসে পড়ে সে ভয়ে নিয়ে আছি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা বলেন, ভবনটি ব্যাস করার সময় নিম্নমানের ইট দিয়ে করা হয়েছিল।সে সময় আমি ঠিকাদারকে বারণ করেছিলাম কিন্তু শোনেননি। তাই ভেঙ্গে পুনরায় শিডিউল অনুযায়ী কাজ করার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে সেলিম এন্ড ব্রাদার্স স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার আরাফাত হোসেন বিকাশ মুঠোফোনে বলেন, ভাই সব ঠিক আছে কাজের মান নিম্নমানের হয়েছে। আর আমি কিন্তু সবার সাথে মিশুক। ভাই এত কিছু নয় বিকাশ নাম্বার দেন খরচ পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে প্রতিবেদককে প্রলোভন দেখান এই ঠিকাদার।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ঠিকাদারকে বলেছি গুণগত মানে কাজ করার জন্য। যদি কাজের মান ঠিক না থাকে তাহলে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কাজের গুণগত মান না হওয়াই কারণে পূর্বেরও কয়েকটি নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এই একটি কাজ চলমান রয়েছে। সেটাও যদি অভিযোগ থাকে তাহলে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন