তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি: কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি

fec-image

খাগড়াছড়িতে বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮ টায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

এ সময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জিতেন চাকমা’র সঞ্চালনায় প্রান অতিথির বক্তব্যে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন,বৈসাবি বাংলাদেশে প্রধান ৩পাহাড়ী জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব। বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করে বাংলা নববর্ষ। পুরনো বছরের কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। ত্রিপুরা,চাকমা ও মারমারা বর্ষবরণ উৎসব পালন করে বিভিন্ন নামে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস করছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। সকল সংস্কৃতির মাঝেই আমরা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করি।আগে চৈত্র সংক্রান্তি যার যার মতো করে পালন হতো। গত ১৯৯৭ সাল থেকেই বৈসাবি ( বৈ= বৈসু, সা=সাংগ্রাই, বি=বিজু) পাহাড়ের তিন সম্প্রদায়(ত্রিপুরা,চাকমা ও মারমা)কে প্রাধান্য দিয়ে উদযাপিত উৎসবকে এক সাথে বৈসাবি পালন করা হয়ে থাকে।কেউ বৈসু, কেউ সাংগ্রাই আবার কেউ বিজু। বর্ষবরণ উৎসবকে ত্রিপুরারা বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই ও চাকমারা বিজু বলে অভিহিত করে থাকে এবং এগুলো বৈসাবি নামে পরিচিত। এর বাইরেও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীরা বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।সাধারণত বছরের শেষ দুইদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি পালিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়(খাগড়াছড়ি,রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান)।

তিনি বলেন,ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম বৈসু। বৈসু উৎসব এদের জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব। বৈসু উৎসব একটানা তিন দিন পালন করা হয়। এই তিন দিনের অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে হারি বৈসু, বিসুমা বৈসু ও বিসিকাতাল । বৈসু উৎসবের প্রথম দিন হারি বৈসু। এই দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা ঘরদোর লেপেপোঁছে, বসতবাড়ি কাপড়চোপড় পরিস্কারপরিচ্ছন্ন করে। ত্রিপুরারা যুবক-যুবতীরা বিশেষ করে বৃদ্ধ মা-বাবা ও বড়দের গোসল করিয়ে নতুন বছরের আশির্বাদ নিয়ে থাকে। ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায়। কেউ কেউ পুষ্পপূজা করে। এদিন মহিলারা বিন্নি চাউলের পিঠা তৈরি করে থাকে। এদিন এরা দাং, গুদু, চুর, সুকুই, উদেং ও ওয়াকারাই খেলায় অংশগ্রহণ করে।হারি বৈসু উৎসবের দিন থেকে এরা গরয়া নৃত্য পরিবেশন শুরু করে।কিন্তু এখন ফুল ভাসানো(নদীতে ফুল নিবেদন করা) এবং গরয়া নৃত্য যুগের পরিবর্তনের ফলে উদ্বোধন করা হয়।

তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চায় বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একই ছাতার নিচে থেকে সকলেই সকলের উন্নয়নে সারথী হই। এখন বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তাঁর সুযোগ্য কন্যা তিনি চান সকল সম্প্রদায়ের মাঝে যেন একটা ঐক্যের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয় সেই লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সকলেই নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করছি যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, জাতি- ধর্ম -বর্ণ সকলে মিলেই আমরা বাংলাদেশী। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতকে তিনি কাজে লাগিয়ে আগামী ৪১সালের মধ্যেই এদেশ উন্নত -সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে চান। অসম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আলোচনা সভা পরপরেই ইনস্টিটিউটের শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৩০  ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিজিএফআই ডেট কমান্ডার কর্নেল সরদার ইসতিয়াক আহমেদ, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জিতেন চাকমা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন