খাগড়াছড়িতে পাল্টে যাবে মাধ্যমিক শিক্ষার চিত্র

khagrasari jp

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
পার্বত্য খাগড়াছড়ির পাঁচ উপজেলা সদরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা, অবকাঠামো-বিজ্ঞানাগার ও গ্রন্থাগার উন্নয়নসহ নির্বাচিত পাঁচটি বিদ্যালয়কে আপগ্রেডকরণ, বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় একটি নতুন বিদ্যালয় স্থাপন এবং তিনটি প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধাসহ নয়টি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থার চিত্র।

সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে চাওয়া চাহিদার ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ জুন এই উন্নয়ন পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। নতুন অর্থ বছরের শুরুতেই এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।

খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম. শাহজাহান বলেন, খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় ১শ’ ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। এরমধ্যে পাঁচটি উপজেলা সদরে কোন সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তাছাড়া ভৌগলিক ও দারিদ্রতার কারণেও অনেক দুর্গম এলাকায় শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত ও মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত প্রস্তাবনার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, জেলার পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি ও নব-গঠিত গুইমারা উপজেলা সদরের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানকে আপগ্রেড তালিকায় দেয়া হয়েছে। আর দুর্গম ও অনগ্রসর এলাকার বিবেচনায় দীঘিনালার নয়মাইল জুনিয়র হাইস্কুল, মহালছড়ির মুবাছড়ি এলাকার খুলরামপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল এবং পানছড়ির লোগাং উচ্চ বিদ্যালয়কে এমপিওভুক্তি, পূর্ণাঙ্গ হাইস্কুলে উন্নীতকরণের পাশাপাশি আবাসন সুবিধা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর লক্ষীছড়ি উপজেলার হাজাছড়ি মাস্টার পাড়ায় একটি নতুন হাইস্কুল স্থাপনেরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় মাধ্যমিক পর্ষায়ে সরকারী কোন স্কুল-কলেজ না থাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী স্বল্প ব্যয়ে উন্নত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিবেচনায় পানছড়ি মডেল বিদ্যালয়টি সরকারী হচ্ছে বলে জানা গেছে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানছড়িতে ৫টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৩টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে কোনোটি সরকারী বিদ্যালয় নয়।

পার্বত্য জেলা পরিষদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পানছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বকুল চন্দ্র চাকমা বলেন, উপজেলা পর্ষায়ে ছাত্র/ছাত্রীদের উন্নত ও যুগোপযোগী শিক্ষার জন্য জেলা সদরসহ বিভিন্ন জেলা ও রাজধানীমুখী হতে হচ্ছে। বিত্তবান ও সামর্থ্যবান অভিভাবকেরা সন্তানদের বাইরে পাঠাতে পারলেও নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা এ সুযোগ থেকে বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছে। তার মতে প্রস্তাবিত এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যেতে পারে পুরো জেলার মাধ্যমিক শিক্ষার চিত্র।

খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, জেলার মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রেরিত পরিকল্পনাটি এগিয়ে নিতে এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি নতুন অর্থ বছরের প্রথমদিকেই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। চলতি শিক্ষা বর্ষে জেলায় চারটি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছরই সরকারের বিশেষ কর্মসূচীর বিদ্যমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে চালু হওয়া ১৪টি জুনিয়র হাইস্কুলেরও উন্নয়ন সাধন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment
আরও পড়ুন