খাগড়াছড়িতে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না প্রাক-প্রাথমিকের ১২৩ শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের চরম স্বেচ্ছাচারিতার কারণে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ১শ ২৩জন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা ৩ মাস যাবত বেতন ভাতা পাচ্ছেন না।

এদের মধ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ৫১ জন, পানছড়ি উপজেলার ৪০ জন এবং মহালছড়ি উপজেলার ৩২ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন। তিন মাস ধরে বেতন-ভাতা ও বোনাস না পাওয়ায় শিক্ষকদের নানান অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

২০১৬ ও ২০১৭ সালে পর পর দুই দফায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধির আলোকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ জেলার ৩শ ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকে মোট ৩শ ২০ জন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেন।

বেতন-ভাতা বঞ্চিত একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, নিয়োগ লাভের পর থেকে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়মিত বেতন-ভাতা একযোগে পেয়ে আসলেও চলতি অর্থ বছরের জুলাই মাস হতে ৩টি উপজেলার ১শ ২৩জন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা খাগড়াছড়ি জেলা হিসাব রক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের মনগড়া টালবাহানার কারণে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এমনকি তারা বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির সুবিধা প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। ইসলাম, সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শিক্ষকগণ উৎসবের বোনাসও তারা পাননি। যদিও খাগড়াছড়ি জেলার অপর ৫টি উপজেলার ১শ ৯৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা যথারীতি বেতন ভাতা পেয়ে আসছেন এবং বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট)সুবিধাও লাভ করেছেন।

১শ ২৩জন শিক্ষকের বেতন-ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে গেলে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানায়, গত ২৫জুলাই মুসলিম শিক্ষকদের বোনাসসহ জুলাই ২০১৮ মাসের বেতনভাতার বিল খাগড়াছড়ি জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে দাখিল করা হয়। দাখিলকৃত বিল নির্ধারিত সময়ে পাশ না করে জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের গত ৮ আগস্ট টি-০০০৯৮৩ নং স্মারক মূলে ২০১৮ সনের ১লা জুলাই হতে অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করে বেতন বিল দাখিলের প্রস্তাব দিয়ে আপত্তি দেয়া হয় । আপত্তিমূলে উপজেলা শিক্ষা অফিস হতে অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করে পুনরায় গত ৪ সেপ্টেম্বর তারিখে জুলাই ও আগস্ট/২০১৮ মাসের বেতন বিল দাখিল করা হয়। দাখিলকৃত বেতন বিলের বিষয়ে জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক অনেকটা কৌশল অবলম্বন করে গত ২ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনরায় শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি(ইন্ক্রিমেন্ট) ব্যতিরেকে বেতনবিল দাখিলের জন্য আপত্তি প্রদান করেন। এর ফলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও ভুক্তভোগী শিক্ষকগণ মনে করেন, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট)সুবিধা হতে বঞ্চিত হলে তাঁরা প্রত্যেকে কেউ কেউ মাসে ২হাজার আবার কেউ কেউ মাসে ১হাজার টাকা করে ন্যায্য বেতন ভাতা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন এবং পিআরএল ও পেনশনেও এ সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা হতে বঞ্চিত হবেন।

এদিকে জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল এ প্রতিবেদককে জানান, সরকারি নিয়ম মেনেই এবং আগামী ১লা জুলাই ২০১৯ সন থেকে ইনক্রিমেন্ট পাবেন এমনটা জানিয়ে দিয়েই শিক্ষকদের বেতন বিলে আপত্তি আনা হয়েছে। শিক্ষকরা রাজস্বখাতে অর্ন্তভুক্ত হওয়ার আগে এখনই যে ইনক্রিমেন্টসহ বেতনভাতা দাবি করছেন তা দেয়া সম্ভব নয়। তবে তারা আগে রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভাতা গ্রহন করুক পরে প্রাপ্য বকেয়া অর্থ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

অপরদিকে জেলার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের বার্ষিক বৃদ্ধি না পাওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির বা ইনক্রিমেন্ট সুবিধা না পাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তাঁরা তাদের যোগদানের তারিখ থেকে সকল প্রকার আর্থিক সুবিধাদি প্রাপ্য।

সূত্রে দাবী করা হয় যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকার ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখের এক স্মারকে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে প্রতিটির জন্য একটি করে সর্বমোট ৩৭৬৭২টি সহকারি শিক্ষকের পদ অস্থায়ী রাজস্বখাতে সৃজন করা হয়। অস্থায়ী রাজস্বখাতে সৃজিত পদে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের শুধুমাত্র বেতন ভাতা পিইডিপি৩ (প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী-৩) এর বরাদ্দ হতে নির্বাহ করা হয়েছে এবং কর্মসূচী শেষ হওয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেটের সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ হতে নির্বাহ করার নির্দেশনাও রয়েছে। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের এক স্মারকে বলা আছে যে, পিইডিপি-৩ হতে বেতনভুক্ত হলেও বর্ণিত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সম্পূর্ণ রাজস্ব পদে পদায়নকৃত। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজস্বখাতভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের ন্যায় সকল আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন।” প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও খাগড়াছড়ি জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের স্বেচ্ছাচারিতা ও হয়রানীর কারণে ১২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ৩ মাস যাবত বেতনভাতা না পেয়ে চরম ভোগান্তির পাশাপাশি সামাজিক ও আর্থিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন