পর্যটক সংকটে রাঙ্গামাটি, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হোটেল-মোটেল

fec-image

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৪ মাস বন্ধ থাকার পর জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে পর্যটনের দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে। তবুও নেই পর্যটক। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আবাসিক হোটেল-মোটেল ও পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়িত লোকসানের ফলে হতাশায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে আস্তে আস্তে বাড়তে পারে পর্যটক,এমনটাই ধারণা হোটেল-মোটেল সংগঠনের নেতাদের।

ট্যুরিস্ট বোট চালক মো. মোস্তফা জানান, গত ৪ মাস পর্যটন বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করেছিলেন। তবে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়ার পর হাতেগোনা কয়েকজন পর্যটক আসলেও এদের দিয়ে সামান্য আয় হয় তাদের।

এই আয় দিয়ে কোন রকম সংসার চলে। তবে পর্যটক আসলে তাদের আয় বাড়তে পারে বলে এমনটাই আশা করছেন তিনি।

পর্যটন এলাকার বাসিন্দা হস্তশিল্প ব্যবসায়ী নীতি চাকমা জানান, পর্যটকদের জন্য হাতের তৈরি ব্যাগসহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করেন। তবে পর্যটক কম আসায় ব্যবসায় তেমন আয় নেই। তাই তিনি ব্যবসার পাশাপাশি মাছ ধরে বিক্রি করেন। এটি দিয়ে কোন রকম সংসার চলে।

তিনি আরও জানান, শুক্রবার ও শনিবার পর্যন্ত পর্যটক কেমন আসে দেখবেন। যদি পর্যটক কম আসে তিনি মাছের ধরে বিক্রি করবেন বলে তিনি জানান।

রাঙ্গামাটি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.নেকবর আলী জানান, পর্যটন স্পটগুলোর দ্বার খুলে দেয়ার পর কয়েকদিন রেস্তোরাঁগুলো ভালোভাবে বেচাকেনা করলেও এরপর থেকে কোন পর্যটকের দেখা নেই। ফলে আগের মতোই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বেচাকেনা। তা দিয়ে কর্মচারীর বেতন ও দোকান ভাড়া পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে পর্যটক বাড়লে হোটেল-মোটেলের ব্যবসা আবারো জমজমাট হতে পারে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

রাঙ্গামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন সেলিম জানান, অঘোষিত সরকারি ছুটি প্রত্যাহার হলেও আবাসিক হোটেলগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। কারণ এখন পর্যন্ত হোটেলে কোন পর্যটকের আনাগোনা নেই। দু’টি ঈদেও কোন পর্যটক আসেনি রাঙ্গামাটিতে। যতদিন এই পরিস্থিতি থাকবে,ততদিন পর্যটকের আশা করা যাচ্ছে না।

এদিকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বছরজুড়েই রাঙ্গামাটিতে আনাগোনা থাকে পর্যটকদের। শুক্র-শনিবারসহ সরকারি বন্ধের দিনগুলোতে আবাসিক হোটেলগুলোতে খালি কক্ষই পাওয়া যায় না। আর ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় তো রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকের প্রচুর সমাগম থাকে। কিন্তু করোনা মহামারির পরিস্থিতির কারণে গত ঈদ আর পহেলা বৈশাখে পুরো ফাঁকা ছিল পর্যটন স্পটগুলো।

তাঁরা আরও জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটন ম্পটগুলো খুলে দেওয়ায় পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলো নতুনভাবে সাজাতে।

পর্যটন স্পটগুলোতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলে বসে থাকলেও বেচাকেনা খুবই কম। দূরের পর্যটক কম আসায় বেচাকেনা নেই বলেই চলে। তবে পর্যটক বাড়লে বেচাকেনাও বাড়বে বলে তাঁরা জানান।

দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেছেন,করোনা মহামারির কারণে গত মার্চের মধ্যভাগ থেকে রাঙ্গামাটির পর্যটনে ধাক্কা লাগে। প্রায় চার মাস ধরে বিরাজ করছে পর্যটকশূন্যতা। ফলে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন ও পর্যটন স্পটগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট এবং স্পটগুলো যারা নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন,পর্যটক না থাকায় তারাও এখন আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

তারা আরও বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি কাটার পরও পর্যটন খাত স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আর্থিক সক্ষমতায় যে ধাক্কা লেগেছে, মানুষ সেটি থেকে আগে বেরিয়ে আসতে চাইবে। এর পর ভ্রমণের চিন্তা করবে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, পর্যটন স্পটগুলো সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এখনো পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম।

পরিবহনসহ বিভিন্ন খাত ভালোভাবে খুলে দেয়া হলে পর্যটক বাড়তে পারে। পর্যটক বাড়াতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে শতকরা ৫০ ভাগ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়েছে দূরের পর্যটকদের জন্য।

তিনি আরও জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ৪ মাসে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনা, পর্যটন, রাঙ্গামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন