খৃস্টান মিশন আরসিসিজি’র আট বিদেশী কর্মকর্তাকে খাগড়াছড়ি থেকে বহিষ্কারে তোলপাড় চলছে পার্বত্য প্রশাসনে

পাহাড়ে ধর্মপ্রচারকদের টিভি

সালেহ নোমান :
নাইজেরিয়া ভিত্তিক খৃষ্টান ধর্মপ্রচার সংগঠন ‘রিডিমড খৃষ্টান চার্চ অব গড’ আরসিসিজি’র আট বিদেশী কর্মকর্তাকে খাগড়াছড়ি থেকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে পার্বত্য অঞ্চলের প্রশাসন ও দেশের খৃষ্ট্রান সম্প্রদায়ের মধ্যে। খৃষ্টান এই ধর্মপ্রচার সংস্থাটি পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ শুরু করায় সতর্ক হয়ে উঠছে স্থানীয় প্রশাসনও।

২০০৭ সালে বাংলাদেশে কাজ শুরু করে  আরসিসিজি,  এ পর্যন্ত সারা দেশে ১১টি চার্চ প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। শিগগিরই এই সংস্থার মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার শুরু করবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বর্তমানে তারা নিজেরা সীমিত পরিসরে বিদেশ থেকে প্রচারিত তাদের টিভি চ্যানেলের ডাউনলিংক করতে পারছে।

গত রোববার পার্বত্য জেলা শহর খাগড়াছড়িতে আরসিসিজি’র একটি গির্জার উদ্বোধন এবং ধর্ম প্রচারধর্মী একটি অনুষ্ঠান করতে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। ওই এলাকা থেকে বের করে দেয়া হয় এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা নাইজেরীয়ার ছয়জন ও ক্যামেরুনের দুই নাগরিককে ।

খাগড়াছড়ি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা এনামুল হক জানিয়েছেন, “পার্বত্য এলাকার সহজ সরল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে আরসিসিজি এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিলো বলে অভিযোগ থাকায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে আসা বিদেশীদের সম্পর্কে বিতর্ক দেখা দিয়েছিলো, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদেরকে পার্বত্য এলাকা থেকে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

kk

এদিকে আরসিসিজি’র আঞ্চলিক প্রধান প্রিন্স বিশ্বাস সব অভিযোগ অস্বীকার করনে। তিনি বলেন, “আমরা সব নিয়ম-কানুন মেনে চার্চ এর উদ্বোধন করছিলাম। এই অনুষ্ঠানে আমার কিছু আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় খৃষ্টান  সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। এখানে কাউকে প্রলোভন কিংবা লোভ দেখিয়ে আনা হয়নি।” তিনি আরো বলেন, “রোববারের ঘটনার পর আমাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা একের পর এক ফোন করে বিরক্ত করছে, অথচ আমরা সরকারের যথাযথ নিয়ম মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।”

প্রিন্স বিশ্বাসের গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী। তবে, গত কয়েক বছর ধরে তিনি খাগড়াছড়িতে বসবাস করছেন। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার এক ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে  তিনি বিয়ে করেন।

গির্জার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বিলিভার্স চার্চ খাগড়াছড়ি’র পালক মন্ত্রজয় ত্রিপুরা। তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানটিতে এইভাবে হস্তক্ষেপ করার কোন প্রয়োজন ছিলোনা, আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় খৃষ্টানদের ২৬টি গির্জা আছে। বাংলাদেশ খৃষ্টান এসোসিয়েশনের  মতে, দেশে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ খৃষ্টান আছে যা মোট জনসংখ্যার ০.৩১ শতাংশ। তবে, উপজাতীয় খৃষ্টানদের এই গণনার বাইরে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ খৃষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব  নির্মল রোজারিও বলেছেন, “আদমশুমারীতে উপজাতীদের কোন ধর্মীয় পরিচয় নির্দিষ্ট করা থাকে না, বাস্তবে উপজাতি খৃষ্টানদের সংখ্যা যোগ হলে দেশে খৃষ্টান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আট থেকে নয় লাখের মত হতে পারে।” তিনি পার্বত্য জেলায় খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।

ধর্মপ্রচার সংস্থা আরসিসিজি:

বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, নাইজেরিয়ার পেষ্টোর জোসিয়া আকোন্ডিময়ী আরসিসিজি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের  কার্যকম পরিচালিত হয় মর্ত্যকে স্বর্গে পরিণত করা, যত বেশি সম্ভব মানুষকে সংগঠনে অন্তর্ভূক্ত করা ও  প্রত্যেক জাতির প্রত্যেক পরিবারে কমপক্ষে একজন করে সদস্য  বানানোর লক্ষ্যে ।

সংস্থাটি উন্নয়নশীল দেশের প্রতিটি শহরে পাঁচ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে  এবং উন্নত দেশের পাঁচ মিনিটের ড্রাইভিং দূরত্বে একটি করে চার্চ নির্মাণের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে আরসিসিজি’র কার্যক্রম আছে। পাশাপাশি সৌদি আরব ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে উপস্থিতি আছে খৃষ্টান প্রোটেস্টান্ট মতাদর্শের এই সংগঠনের। পকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে তারা সম্প্রতি কার্যক্রম জোরদার করেছে।

নাইজেরিয়ার লাগোসে এর সদর দপ্তর, আর বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালিত হয় ঢাকার নিকুঞ্জের কার্যালয় থেকে। আরসিসিজি’র বাংলাদেশ অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্টিভেন সিমন বিশ্বাস বলেছেন, “২০০৭ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১টি গির্জা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, এইসব গির্জা থেকে  ধর্ম চর্চার পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবা করা হচ্ছে।” “আমরা দেশের প্রতিটি শহরে গির্জা স্থাপন করে মানুষের সেবা করতে চাই,” বলেন তিনি।

খাগড়াছড়ির ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ শুরু করছিলাম, আমাদের আরো পরিকল্পনা ছিলো।”

বাংলাদেশে টিভি প্রতিষ্ঠা করতে চায় আরসিসিজি:

বাংলাদেশ খৃষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও বলেছেন, “প্রায় ষাটটির মত সংগঠন নিয়ে আমাদের এসোসিয়েশন। তবে কোন চার্চ আমাদের সদস্য নয়।”

“তারা বাংলাদেশে কিছুদিন আগে কাজ শুরু করেছে, তারা ইতোমধ্যে টিভি সম্প্রচারের অনুমোদন চেয়েছে। সরকার তাদেরকে ডাউন লিংক লাইসেন্স দিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি,” জানান তিনি।

তিনি জানান, ‘রেডিমড টেলিভিশন মিনিস্ট্রি’ বা ‘আরটিএম’ নামের একটি টেলিভিশন আছে আরসিসিজি’র।

আরসিসিজি’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্টিভেন সিমন বিশ্বাস বলেন,  “দক্ষিন আফ্রিকা থেকে আমাদের টেলিভিশন সম্প্রচারিত হচ্ছে, বাংলাদেশেও এই টিভি সম্প্রচারের অনুমতি চেয়েছি আমরা।” বর্তমানে ডিশ এন্টেনা দিয়ে চ্যানেলটি ডাউনলিংক করা যায় বলেও জানান তিনি।

টিভি চ্যানেল ছাড়াও নাইজেরিয়াতে আরসিসিজি’র খৃষ্টান ধর্ম প্রচারের জন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

সূত্র: পরিবর্তন ডটকম

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

3 Replies to “খৃস্টান মিশন আরসিসিজি’র আট বিদেশী কর্মকর্তাকে খাগড়াছড়ি থেকে বহিষ্কারে তোলপাড় চলছে পার্বত্য প্রশাসনে”

  1. খ্রিস্টান মিশনারিগুলো টাকার প্রলভোন দেখিয়ে মানুষকে ধর্মান্তরিত করে এইতা অনেক পুরাতন কথা এবং সত্য।

    1. are you mentally ok what are you saying…what you don’t know, don’t tell anythings. if you say something without right information. you are violated of human beings. you should stop what you post your statement.

  2. খ্রিস্টান মিশনারিগুলো টাকার প্রলভোন দেখিয়ে মানুষকে ধর্মান্তরিত করে এইতা অনেক পুরাতন কথা এবং সত্য। MNU

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন