গুইমারা সেনা রিজিয়ন এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান

fec-image

পাহাড়ে স্থিতিশীল শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে খাগড়াছড়ি গুইমারা সেনা রিজিয়ন এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৬৫০টি পরিবারকে মানবিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই গুইমারা সরকারি কলেজ মাঠে এ সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

এসময় স্থানীয় ৩০০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, ৩০০টি পরিবারকে ১০ টাকার সুপারশপ হতে ব্যাগ ভর্তি বাজার (এক টাকায় চাল, দুই টাকায় ডাল এভাবে ১০ টাকার পণ্য ক্রয় করা যাবে যার বাজার মূল্য ৫০০-৬০০ টাকা) এবং ৫০টি পরিবারকে সম্প্রীতি বিপণীর মাধ্যমে সর্বমোট ৬৫০টি পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

সহযোগিতা প্রদানের সময় ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামাল মামুন, সাবেক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মেম্বার জামাল উদ্দিনসহ সামরিক-বেসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, পাহাড়ে স্থিতিশীল শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন গুইমারা রিজিয়ন বিভিন্ন আভিযানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি পালন করে আসছে।

তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে খাগড়াছড়ির গুইমারাতে যাত্রা শুরু করলো সম্প্রীতি বিপণী। পাহাড়ে আনাচে কানাচে যুগযুগ ধরে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য। সম্প্রীতি বিপণীতে দেখা মিলবে এসকল কুটির শিল্পের। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে গুইমারা চেক পোস্ট থেকে একটু এগিয়েই দেখা মিলবে অপরূপ কারুকার্যে সজ্জিত এই সম্প্রীতি বিপণীর।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ইউরোপ আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে ডলার দিয়ে স্যুভেনির কিনে বসার ঘর সাজাই আমরা। আর দেশের জিনিস দেখলে সস্তা বাঁশ, সুতা বলে শ্রমের দামটাই দিতে চাই না। বিদ্যানন্দ তাই সারাদেশে ঘুরে কুঠির শিল্পগুলো বাঁচাতে চাচ্ছে, সংগ্রহ করে আনছে মানুষের কাছে। মানুষ যে দাম দিবে, সেটাই পৌঁছে যাবে শিল্পীর কাছে।

সম্প্রীতি বিপণীর দুইটি অংশ। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য দাতব্য অংশ এবং সচ্ছল বা টুরিস্টদের জন্য বাণিজ্যিক অংশ। তবে বাণিজ্যিক অংশ খুব ছোট পরিসরে হবে। সেনাবাহিনী কিংবা সিভিল প্রশাসন কিংবা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীর গাইডেন্সে বিভিন্ন অঞ্চলে দুস্থ জনসাধারণের মাঝে টোকেন বা কার্ড দেয়া হবে। নির্ধারিত সে টোকেনে নির্দিষ্ট দিনে এসে রেশন পণ্য নিয়ে যেতে পারবে নাম মাত্র এক-দুই টাকা মূল্যে।

মাসিক রেশনের নির্দিষ্ট টোকেন থাকবে যা শুধুমাত্র নিঃসন্তান বিধবা, অসহায় বৃদ্ধ (যাদের সন্তন দেখে না)। তারা নির্দিষ্ট তারিখে এসে রেশন নিয়ে যাবেন। এ সেবাটি মূলত দুর্গম এলাকার মানুষের জন্য।

এক্ষেত্রে সম্প্রীতি বিপণী তাদের পরিবহন খরচও বহন করবে। বাণিজ্যিক অংশের কুটির শিল্পের পণ্য গুইমারার সম্প্রীতি বিপণীর পাশাপাশি পাওয়া যাবে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি থেকে। এই গাড়িটি পণ্য নিয়ে ছুটির দিনে থাকবে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। বিক্রয়কৃত পণ্যের অংশ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ চ্যারিটি অংশে খরচ করা হবে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তৈরীকৃত কুটিরশিল্প পণ্যের পাশাপাশি থাকবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসহায় নারী যেমন পাহাড় ও রোহিঙ্গা শরণার্থী নারীদের কর্তৃক তৈরিকৃত পণ্য। এ ছাড়া গুইমারা রিজিয়ন ও বিদ্যানন্দের বিভিন্ন প্রজেক্টের উৎপাদিত পণ্য থাকবে সম্প্রীতি বিপণীতে।

গুইমারা রিজিয়নে নিয়োজিত সেনা, বিজিবি, আনসার ও পুলিশসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনী শান্তি-সম্প্রীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন