চকরিয়ায় যুবক খুনের ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
চকরিয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ভাড়াটে দূর্বৃত্তের হামলায় যুবক আবু হানিফ মানিক খুনের ঘটনায় থানায় ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার দিন শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে থানায় নিহতের ভাই আবু ছিদ্দিক বাদি হয়ে মামলাটি রুজু করেছেন। এজাহারে গ্রেফতারকৃত তিনজন ছাড়াও হামলাকারী পক্ষের আরো ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে চকরিয়া উপজেলার পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের কাছিম আলী মিয়াজী সিকদার পাড়া গ্রামের নিহত আবু হানিফ মানিকের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিহত হানিফ ওই এলাকার মৃত নুরুল হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিহত আবু হানিফ মানিক ছাড়াও তাঁর অপর দুই বড় ভাইকেও ইতিপূর্বে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। তৎমধ্যে মানিকের বড় ভাই ইব্রাহীমকে ১৯৯৮ সালে ও মেঝ ভাই আবু তাহেরকে ২০১৩ সালে খুন করে দূর্বৃত্তরা। মৃত নুরুল হোসেনের ৫ সন্তানের মধ্যে তিনজন (তিনভাই) খুনের শিকার হয়েছে।
রোববার বিকালে সরেজমিনে নিহতের বাড়িতে দেখা গেছে, নিহত আবু হানিফ মানিকের আড়াই বছর ও দুইমাস বয়সের দুইটি শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে স্বামীর লাশের অপেক্ষায় আছেন স্ত্রী। ওইসময় তাঁর কোলে থাকা ছোট্ট শিশু সন্তানটি ঘুমিয়ে থাকলেও চাচার কোলে থাকা আড়াই বছরের শিশু মেয়েটি বাবার জন্য অঝোর ধাঁরায় কান্না করছেন। ওইসময় বাড়ির উঠানে উপস্থিত আবাল বৃদ্ধা-বণিতা থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের চোখে অশ্রু নেমে আসে। এর কিছুক্ষন পর ময়নাতদন্ত শেষে কক্সবাজার থেকে মানিকের মরদেহ বাড়িতে পৌছঁলে ওইসময় সর্বত্রে নেমে আসে বিষাদের ছায়া।
আবু হানিফ মানিকের মতো জমি বিরোধের জেরে ইতিপূর্বেও তাঁর অপর দুই বড়ভাইকে একই কায়দায় হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। সর্বশেষ ঘটনায় মানিকের অকাল মৃত্যুতে তাঁর অবুজ দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে এমন প্রশ্ন এখন এলাকাবাসির।
বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি ও নিহতের পরিবার হামলা ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত খুনিদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
মামলার আর্জি সুত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলার সিকদার পাড়াস্থ নিজ জমিতে ঘর তুলছিলেন আবু হানিফ। ঘর তুলতে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন স্থানীয় একটি দূর্বৃত্ত চক্র। অবশ্য চাঁদা দাবির পেছনে দুর্বৃত্ত চক্রকে উৎসাহ দেন জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকা প্রতিপক্ষের লোকজন।
শনিবার সকালে ঘর নির্মাণ কাজ করার সময় ফের চাঁদার টাকা দাবি করেন দুর্বৃত্তরা। ওইসময় টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলে ক্ষুদ্ধ হয়ে ভাড়াটে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় স্থানীয় মৃত নুরুল হোসেনের পরিবারের উপর। ওইসময় পরিবারের সাত সদস্যের সাথে যুবক হানিফও আহত হন।
ঘটনার পর তাকে প্রথমে স্থানীয় চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বিকাল চারটার দিকে চমেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরপর চকরিয়া থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হামলাকারী পক্ষের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার এসআই মুফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তিন আসামি একই এলাকার মৃত নজু মিয়ার ছেলে কবির আহমদ (৫০), নুরুল আমিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩০) ও তার ভাই মো. সাগরকে (২৫) রোববার আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে আদালতের বিচারক তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে যুবক খুনের ঘটনায় শনিবার রাতে নিহতের ভাই আবু ছিদ্দিক বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। এজাহারে গ্রেফতারকৃত তিনজন ছাড়াও হামলাকারী পক্ষের আরো ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
ওসি বলেন, এজাহারনামীয় অপর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশে অভিযানে চলছে।