চকরিয়ায় লবণ চাষীদের উপর হামলা, আহত-১০

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের চিংড়ি জোনে ৩টি ঘেরে হানা দেয় একদল ডাকাত। এসময় চিংড়ি ঘেরে ডাকাতরা তান্ডব চালিয়ে ঘের মালিক ও কর্মচারীসহ ১০ জনকে মারধর করে অন্তত ৫ লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সময়ে ওই চিংড়ি জোন এলাকায় একের পর এক ঘের ও লবণ মাঠে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা। এনিয়ে চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষীদের মাঝে ডাকাত আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে উপজেলার খুটাখালী-ফুলছড়ি মৌজার ৩টি চিংড়ি ঘের ও লবণ বোটে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের হামলায় যারা আতত হয়েছেন তারা হলেন, খুটাখালী ফুলছড়ি মৌজার উত্তর হইয়াখালী আকতার আহমদ মেম্বারের চিংড়ি ঘোনার বশির আহমদ(৫৫), দক্ষিণ হইয়াখালীর জাফর আহমদের চিংড়ি ঘোনার কামাল হোসেন (২৫), সাগর (২০), মনছুর আলম (২৯), নাছির উদ্দীন (৩০), রমজান আলী (৩২), হাফেজী ঘোনার ছুরত আলম (৬০) ও লবণ বোটের ৩ জন কর্মচারীকে আহত করা হয়। আহত লবণ বোটের ৩জনের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

উত্তর হইয়াখালী চিংড়ি ঘেরের মালিক সাবেক মেম্বার আকতার আহমদ জানান, প্রতিদিনের ন্যায় আমার কর্মচারী বশির ঘেরে পাহারা দিচ্ছিল। রাত যখন গভীর হয় তখন ২০-২৫ জনের অস্ত্রধারী একদল ডাকাত ঘেরের বাসায় হানা দিয়ে ১৪টি ছাগল, ১২টি লবণ মাঠের পাম্প মেশিন, টর্চ লাইট, নগদ টাকা ও মোবাইল লুট করে তাদের মারধর করে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

একই রাতে দক্ষিণ হইয়াখালী জাফর আহমদ, হাফেজী ঘোনা ও কাটাখালী খালের মুখে লবণ বোটে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে লবণ চাষী ও বোট কর্মচারীদের জিম্মি করে জাফর আহমদের ঘোনা থেকে ২টি পাম্প মেশিন, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। ঘের থেকে মালামাল লুট করে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে চলে যাওয়ার পথে ২জন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে মাঝপথে ছেড়ে দেয় বলে জানা গেছে।

স্থানীয় লবণ চাষিদের অভিযোগ, এলাকার চিহ্নিত ডাকাত দলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষি। প্রতিনিয়ত ডাকাত দলের তান্ডব ও নির্যাতনে চিংড়ি ঘেরের লবণ মাঠে বিনিয়োগকৃত পুঁজি আহরণ করতে না পেরে বেশির ভাগ চাষী লবণ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

চাষীরা জানায়, খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়ি মৌজায় প্রায় হাজার একর চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ রয়েছে। এসব ঘেরে ইজারাদার, মালিক, চাষী মিলে প্রায় হাজার শ্রমিক কর্মচারী চিংড়ি ও লবণ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

জানাগেছে, লবণ উৎপাদন শুরু হতে না হতেই ঘের এলাকায় ডাকাতরা হানা দেয়। বর্ষা মৌসুমে দলের সর্দারদের হাতে তাদের চাহিদা মতো মাসোহারা পরিশোধ করতে হয়। চাঁদা না দিলে রাতের আঁধারে সশস্ত্র ডাকাতদলের সদস্যরা ঘেরের মালিক ও কর্মচারীদের নির্মমভাবে পিঠিয়ে নৌকা, মাছ, জালসহ বাসার মালামাল এমনকি চাল, ডাল পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যায়। এসময় কোন কর্মচারী বা চাষী বাধা দিলেই প্রাণহানিসহ ভয়াবহ নির্যাতন চালায় ডাকাতরা। প্রাণের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য লবণ চাষি দাবি করেছেন, সন্ধ্যার পরপরই পুরো ফুলছড়ি এলাকা চলে যায় ডাকাত দলের নিয়ন্ত্রণে। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ অজুহাত দেখিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসব দেখেও না দেখার মতো থাকে। কোন ঘটনা শুনলেও তারা তাৎক্ষনিকভাবে কোন ধরণের এ্যাকশনে যায় না ফলে বেশির ভাগ চাষি লাভের আশায় লবণ চাষ করলেও বছর শেষে পুঁজি হারিয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরে।

লবণ চাষিদের মতে, খুটাখালী-ডুলাহাজারা কাটাখালী, সওদাগরঘোনা-চরণদ্বীপ এলাকার ডাকাতরা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুরো চিংড়ি ঘের এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব ডাকাতদল চিংড়ি ঘেরে ডাকাতির পাশাপাশি ঘের এলাকায় লালন-পালন করা ছাগলগুলো লুটপাট করে নৌপথে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। বর্তমানে খুটাখালী এলাকার এসব চিংড়ি ঘেরে ডাকাতি ও লুটপাট নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে কোন ঘের মালিক ও চাষীরা মুখ খুলছেন না।

খুটাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, একদল ডাকাত চিংড়ি জোনের লবণ মাঠে ডাকাতি ও লুটপাট করে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ডাকাত বাহিনীর ব্যাপারে একাধিকবার র‌্যাব-পুলিশ বাহিনীকে বলা হয়েছে এবং উপজেলা পরিষদে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় অবহিত করেছি। ডাকাতদের অত্যাচারে ঘের মালিকরা লবণ ও মৎস্য চাষ করতে পারছেন না।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ উসমান গনি বলেন, আমি শুনেছি ওইসব এলাকায় ডাকাতরা চিংড়ি ঘেরে তান্ডব ও লুটপাট চালায়। এসব ডাকাতদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। এমনকি চিংড়ি ঘের মালিক ও লবণ চাষিরা যাতে নির্ভয়ে চাষ করতে পারেন সেজন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন