জাতীয় তায়কোয়ান্দোতে স্বর্ণপদক পেল পানছড়ির সুদত্তা
বসুন্ধরা টিস্যু ১১তম জাতীয় তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় মহিলা বিভাগে স্বর্ণপদক জিতেছেন পানছড়ি উপজেলার সুদত্তা চাকমা।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় আইটিএফ তায়কোয়ান্দোর এ আসর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকাস্থ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে।
২৮ জুন চুড়ান্ত দিনে ৬৫ কেজি: ওজনের খেলায় স্বর্ণপদক জয় করে সুদত্তা। তিনি উপজেলার উত্তর শান্তিপুর গ্রামের বিমল কান্তি চাকমা ও রঞ্জিতা দেওয়ানের একমাত্র মেয়ে।
তায়কোয়ান্দোর আন্তর্জাতিক কোচ মামলুক হোসেনের সাথে মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি স্বর্ণপদক জয়ের কথা নিশ্চিত করেন।
মামলুক জানান, সফিপুর আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষ করে সে এ প্রতিযোগিতায় প্রথমবার অংশ নিয়েই স্বর্ণপদক জিতেছে।
সুদত্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে ২০১৬ সালে পানছড়ি ফুটবল একাডেমির কোচ ক্যাপ্রুচাই মারমার হাত ধরে খেলার জগতে আসে। খাগড়াছড়ি জেলা ফুটবল দলে খেলার পর সে রাঙ্গামাটির হয়েও খেলে। পানছড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর অভাবের তাড়নায় কিছুদিন গার্মেন্টসে চাকরি করে প্রতিবেশী বিনোতী চাকমার হাত ধরে ঢাকায় আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষক মামলুকের কাছে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন।
মেয়ের খুশীর খবর জানতে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় চিকন সরু উচুনিচু স্যাৎসেতে পথ কোন রকমে পার হয়েই দেখা মিলে তার বাড়ি। চারিদেকে বাঁশের খুটিতে ঠেলা দিয়ে আটকে রাখা জরাজীর্ণ ঘরটি। ঘরের ছাউনি মাটি থেকে সর্বোচ্চ তিন হাত উঁচু হবে। একটু জোরে বাতাস বইলে আর রক্ষা নেই।
সুদত্তার বাবা জানান, মেয়ের লেখাপড়া-খেলাধুলায় প্রচুর আগ্রহ ছিল কিন্তু এইচএসসি পাশের পর পরিবারের অভাবের তাড়নায় সব ছেড়ে চট্টগ্রাম যায় চাকরির সন্ধ্যানে। কিছুদিন চাকরি করার পর ঢাকায় তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বর্ণপদক পায়। গরীব হলেও খুব ভালো লাগছে মেয়ের এই সফলতায়।
খবর পেয়ে ছুটে আসে ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা, তিনি বলেন এটা আমাদের গর্ব। তবে পরিবারটি খুবই গরীব। প্রসাশন একটু নজর দিয়ে পরিবারটির অভাব দুর করে দিলে মেয়েটি নিশ্চিন্তে আরো এগিয়ে যাবে।
সুদত্তার ফুটবল কোচ ক্যাপ্রুচাই মারমা, অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান পরিমল চাকমা, প্রতিবেশী লিমি চাকমা, শান্তিপ্রিয় চাকমা জানান, বাংলাদেশে ভালো খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করতে সরকার গরীব ও মেধাবী খেলোয়াড়দের পুরষ্কৃত ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। সুদত্তার মতো গরীব ও নীরিহ একজন মেধাবীকেও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করলে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেক নতুন নতুন প্রতিভা উঠে আসবে। এ ব্যাপারে সকলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি আশা করছে।