জীবিত ফিরলো না কৃষি কর্মকর্তা সাগর

fec-image

সুস্থ জীবনে ফেরাতে চিকিৎসক ও বন্ধুদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে অবশেষে ইন্তেকাল করেছেন কৃষি কর্মকর্তা আরফাতুর রহমান সাগর (৩৯)।

দীর্ঘ একসপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোররাত ১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা বারডেম হাসপাতালের আইসিইউ’তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সাগর দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।

এক ছেলে এক মেয়ের জনক আরফাতুর রহমান সাগর কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের খ্যাতনামা হোমিও চিকিৎসক প্রয়াত সিরাজদ্দৌল্লাহ’র ছেলে।

তিনি ঈদগাঁওর জালালাবাদ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি মা, স্ত্রী, দু’সন্তান, ভাই-বোনসহ অনেক বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি-১৯৯৯ ব্যাচ সংগঠনের সমন্বয়ক ফারুক আহমেদ জানান, আমাদের ব্যাচ মেট আরাফাতুর রহমান সাগর বেশ কিছু দিন ধরে লিভার সমস্যায় ভোগছিলেন। পেটের যন্ত্রণা প্রশমণে হাই এন্টিবায়োটিক নিয়েছেন সবার অজান্তে। এটি ধীরে ধীরে তার শরীরের এন্টিবডি সিস্টেম নষ্ট করে কিডনিতে ইনফেকশন শুরু করে। সমস্যা হয় হার্ডেও। গত মাস তিনেক আগে থেকে তার অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যায়। শয্যাশয়ী হয়েই কাটছিল তার সময়। দিনে দিনে ব্যাথা বাড়তে থাকায় এলাকার চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সপ্তাহখানেক আগে। সেখানে চিকিৎসা শুরুর পর গত শনিবার থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয় তাকে।

এসএসসি-১৯৯৯ ব্যাচের আরেক সমন্বয়ক এবাদুল হক বলেন, ধারাবাহিক চিকিৎসা ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে একপ্রকার নিঃশেষ হয়ে যায় সাগরের পরিবার। সর্বশেষ বসত ভিটা বন্ধক রেখে সুস্থতার আশায় তাকে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। এটি জানতে পেরে ১৯৯৯ ব্যাচের তার সকল সহপাঠিগণ গড়ে তুলে সহায়তা ফান্ড। তিনদিনে এক লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে হাসপাতালে জমা করা হয়। এলাকার বড়-ছোট সকলে একীভূত হয়ে তার জন্য টাকার যোগাড় করছিলো। ব্যয়বহুল চিকিৎসা হওয়ায় ফান্ড সৃষ্টি করেছিলো তার কর্মস্থলের সহকর্মীরাও। কিন্তু তার সুস্থ জীবনে ফেরানোর সবার প্রচেষ্টাকে পদদলিত করে অবিনশ্বর সময়ের জন্য আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার ভোররাত ১টা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সাগর।

তার পরিবারের বরাত দিয়ে সাগরের বন্ধু আমির হামজা ও জিয়াউর রহমান বলেন, হাসপাতালের দেনা মিটিয়ে সকালে সাগরের মরদেহ নিয়ে তার স্বজনরা বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছেন। মঙ্গলবার আছরের নামাজের পর পৈত্রিক নিবাস এলাকায় জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন এসএসসি-১৯৯৯ ব্যাচের সহপাঠী কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক, ইত্তেফাক ও জাগোনিউজ প্রতিনিধি সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সার্জন ডা. সরোয়ার কামাল সাদেক, রেমিট্যান্স যোদ্ধা শওকত উল্লাহ, কামাল উদ্দিন, গিয়াস, সাহাব উদ্দিন, ব্যাংকার জসিমউদদীন, ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন, মিজানুর রহমান, প্যানেল চেয়ারম্যান ওসমান সরোয়ার ডিপো, শহিদুল ইসলামসহ ব্যাচের সকল সহপাঠী।

তারা মরহুম সাগরের আত্মার মাগফেরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন