জেএসএস ও ইউপিডিএফ নেতাদের ‘জুম্মল্যান্ড’ পরিকল্পনার গোপন নথি ফাঁস


জেএসএস (সন্তু) ও ইউপিডিএফ (প্রসিত) শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে চাঁদাবাজির টাকায় ভারতের ৩ রাজ্যে জমি কেনা ছাড়াও ‘স্বাধীন জুম্মল্যান্ড’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারতীয় র’ এবং একটি রাজ্যের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছেন। তারা ভারতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন ও নিজেদের বাহিনীর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন। তাদের এই সুদীর্ঘ পরিকল্পনার গোপন নথি সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ফাঁস হওয়া নথিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ১ আগস্ট সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার, জেএসএস নেতা সুশীল চাকমা, সঞ্জীব চাকমা এবং শক্তিপদ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ এর কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের তখনকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পাহাড়ি নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস (সন্তু)’র নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখার জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালানের জন্য ভারতের সহযোগিতা চান।
নথিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, ২০২১ সালের ৪ জুন শক্তিপদ ত্রিপুরা এবং বাসু চাকমা ত্রিপুরা পুলিশের আইজি মাধবী চাকমার বাড়িতে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত জেএসএস (সন্তু) নেতাদের ভারতে থাকার অনুমতি, ত্রিপুরা ও মিজোরামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পুনরায় চালু, জেএসএস (সন্তু) কে ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি প্রদানের জন্য সহায়তা চাওয়া হয়।
আরো উল্লেখ করা হয়, পূর্বের সভার ফলোআপ হিসেবে ২০২১ সালের ১৪ জুন আগরতলার উজান অভয়নগরে শীলব্রত চাকমার ভাড়া বাড়িতে উষাতন তালুকদারের নেতৃত্বে কয়েকজন জেএসএস (সন্তু) নেতা, ত্রিপুরা পুলিশের তৎকালীন ডিজিসহ ত্রিপুরা পুলিশের তৎকালীন আইজির মধ্যে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পূর্ববর্তী বিষয়গুলোর আরও বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও ভারতে ইউপিডিএফ (প্রসিত) কর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনা শেষে ত্রিপুরা পুলিশের ডিজির কাছে নগদ ৫ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন বৈঠকে অংশ নেয়া পাহাড়ি নেতারা।
গোপন দলিলে এসব বৈঠক সম্পর্কে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের মতামতে লেখেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক দলের নেতাদের সাথে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক এবং তাদের সহযোগিতার আশ্বাস বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। ভারতের মাটিতে সশস্ত্র সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে তারা তাদের নেতৃত্বে পার্বত্যাঞ্চলে ‘স্বাধীন জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন। বৈঠকের দ্বারা ইউপিডিএফ (প্রসিত) এবং জেএসএস উভয় গ্রুপের নেতারা ঐকবদ্ধ লড়াইয়ে সম্পর্ক স্থাপন করছেন।
বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর নেতাদের এমন তৎপরতা নস্যাৎ করে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যথাযথ কূটনৈতিক মাধ্যমে ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনুরোধ জানান কর্মকর্তাগণ। গোপন নথিতে সীমান্তের ওপারে জমি কেনা এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে গোপন বৈঠকের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি এই গোপন নথি প্রকাশের পর নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সচেতন মহল মন্তব্য করেছেন যে, ভারতের ইশারায় যে পাহাড় অশান্ত রয়েছে এটি সরকারি এই দলিলের মাধ্যমে স্পষ্ট। ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ইউপিডিএফ এবং সন্তু লারমার জেএসএস লিপ্ত রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দাবি তুলছেন যে, বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ ও পাহাড় নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। আর তা না হলে এক সময় তাদের দমন করা কঠিন হয়ে পড়বে। অবিলম্বে রাষ্ট্রদোহী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
নথি সংগ্রহে : জুলকারনাইন সায়ের, অনুসন্ধানী সাংবাদিক, আলজাজিরা