টেকনাফে কোটি টাকার ইয়াবা চালান লুটের ঘটনায় তোলপাড় চলছে: বিজিবি উদ্ধার করলো ১১শ’ পিস

yaba-175x200_1

টেকনাফ প্রতিনিধি:    
মিয়ানমার থেকে পাচারের সময় টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালী এলাকায় স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক কোটি টাকা মূল্যের ইয়াবা চালান লুট ও আত্মসাতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ১১’শ ৭০ পিচ ইয়াবা পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করলেও এসময় আটক আত্মসাতকারী দুই ব্যক্তিকে কবির আহমদ মেম্বারের সুপারিশে ছেড়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে।

মিয়ানমার থেকে লক্ষাধিক পিচ ইয়াবার একটি চালান সাবরাং হারিয়াখালী লবণমাঠ এলাকা দিয়ে পাচার করে নিয়ে আসছিল পাচারকারীরা। এসময় দিনে দুপুরে ইয়াবা পাচারের খবর পেয়ে হারিয়াখালী এলাকার একদল লোক বেড়ী বাঁধের পাশে পাচারকারীদের ধাওয়া করে ইয়াবার চালান লুট করে হারিয়াখালী গ্রামে নিয়ে আসে।

এদিকে ইয়াবা লুটের সংবাদ পেয়ে বিজিবির সাবরাং বিওপির হাবিলদার শামিমের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা হারিয়াখালী গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা লুটে নেতৃত্ব দেওয়া লাল মিয়া ও মোস্তাক মিয়াকে আটক করে বিওপিতে নিয়ে যায়। এসময় ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসাবে তালিকাভূক্ত স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির আহমদ কৌশলে ইয়াবা লুটকারীদের রক্ষায় লক্ষাধিক ইয়াবা চালান থেকে মাত্র ১১শ ৭০ পিচ ইয়াবার সন্ধান দেয় বিজিবি সদস্যদের। পরে বিজিবি সদস্যরা পরিত্যক্ত অবস্থায় মাত্র ১১শ ৭০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করে সন্তুষ্ট থাকে। অপরদিকে ছেড়ে দেওয়া হয় আটক দুই ব্যক্তিকে।

এদের মধ্যে মোস্তাক মিয়ার বিরুদ্ধে মানব পাচারেরও একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পর কবির মেম্বার লুট হওয়া ইয়াবার চালান লুটকারীদের মাঝে ভাগাভাগি করে দেয়। লুটকারীরা প্রত্যেকে ১০ থেকে ২০ হাজার ইয়াবা ভাগে পায় বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, লুটকারীদের মধ্যে কবির মেম্বারের আপন ভাই হারিয়াখালী গ্রামের নুর আহমদের ছেলে শব্বির আহমদ ছাড়াও আরও রয়েছে, মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে লাল মিয়া, লাল মিয়ার ছেলে হারুন, আব্দুল করিমের ছেলে মোস্তাক মিয়া, জালাল আহমদের ছেলে মোঃ হোসেন, আব্দুল মাজেদের ছেলে তজিল আহমদ, আব্দুল করিমের ছেলে মোঃ শাহজাহানসহ তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী ছিল। এছাড়া ইয়াবা লুটের পর মোঃ হোসেন ইয়াবার বড় অংশ নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবরাং নয়াপাড়া এলাকার মোঃ হোসেনের ছেলে ওসমান ছিল লুট হওয়া ইয়াবার চালানটির মালিক। আর এই ওসমান একসময় ছিল ইয়াবা গডফাদার শামসুল আলম মার্কিনের সহযোগী। ইয়াবা বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর মার্কিন গা ঢাকা দিলে ওসমান নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল।

এব্যাপারে সাবরাং বিওপির সুবেদার করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লাল মিয়া ও মোস্তাককে আটক করা হয়েছিল, তবে ইয়াবা পাচারের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির আহমদের সুপারিশে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সম্পৃক্ততা না থাকলে তাদের কেন আটক করা হয়েছিল এবং কবির আহমদ নিজেও ইয়াবা ব্যবসায় তালিকাভূক্ত তা জানেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়নের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলে লাইন কেটে দেন।  

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য কবির আহমদের কাছে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, বিজিবি কর্তৃক আটক ব্যক্তিরা কৌতুহল বশত ইয়াবা লুটের ঘটনা দেখতে গিয়ে বিজিবির হাতে আটক হয়েছিল তাই তিনি তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ইয়াবা ভাগ করে দেওয়ার সংবাদ সত্য নয় বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য গত ১ জুন সাবরাং ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর উপকূলের বাহারছড়া মৎস্য ঘাট দিয়ে পাচারের সময় পাচারকারী জেলেদের সাথে যোগসাজসে ফতেলিয়া পাড়ার মফজুল আহমদের ছেলে ভেক্কু, মৃত আব্দুল মোনাফের ছেলে ফিরুজ, নৌকা মাঝি মোঃ হোসেনের ছেলে কাদের হোসেন, মৃত ইব্রাহিমের ছেলে শাহ আলমসহ আরো কয়েকজন মিলে আত্মসাত করে।

পরে উক্ত ইয়াবা চালানের মালিক সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়ার হাজী ফজল আহমদের ছেলে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী একরাম ও আমির আহমদ লেইট্যা মোটা অংকের বিনিময়ে লুটকারীদের কাছ থেকে ইয়াবার চালান উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এসময় স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ ইউনুচ থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে অভিযান চালালেও কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে এসময় দুটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করেছিল থানা পুলিশ।

এদিকে পৃথক আরেকটি ঘটনায় টেকনাফে বসত বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ২৪ শত পিস ইয়াবাসহ বাড়ির মালিক ও ২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।

৮ জুন রবিবার ভোর রাতে সদর ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের ছেলে মোঃ শফি (২৪) এর বাড়ীতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ধৃত মিয়ানমারের নাগরিক হচ্ছে মংডু থানার মাংগালা এলাকার নুর বশরের ছেলে মোঃ সেলিম (২২) ও হাওলারবিল এলাকার মৃত আমির হোছাইনের ছেলে মোঃ জোবাইর (২৫)।  

থানা সুত্রে জানা যায়, টেকনাফ মডেল থানার এসআই আলমগীর ও নয়ন বড়ুয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ রবিবার ভোর রাতে সদর ইউনিয়নের মোঃ শফির বাড়ীতে অভিযান চালায়। এসময় মোঃ শফির বাড়ীতে ২ হাজার ৪ শত পিস ইয়াবা ও ২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে। এছাড়া ইয়াবার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অপর ২ জনকে পলাতক আসামী করা হয়। এরা হচ্ছে জালিয়া পাড়ার মির্জা ও ইমান হোছনের ছেলে জয়নাল আবেদিন। 

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোক্তার হোসেন সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে মাদক আইনের আওতায় আনা হবে এবং ইয়াবা বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন