বান্দরবানে রেস্টুরেন্টে মদ না পেয়ে হামলা, মালিকসহ আহত ৫

fec-image

বান্দরবানের একটি রেস্টুরেন্ট মদ চেয়ে না পেয়ে মালিকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মংনেথোয়াই মারমা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রেস্তোরাঁর মালিক, তার স্ত্রী ও শিশুসন্তানসহ পাঁচ জন আহত হয়েছেন।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বান্দরবান শহরের মধ্যমপাড়া এলাকার তোহজাহ রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনা শুরু হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লার এএসপি মংনেথোয়াই মারমা ও তার স্ত্রীর বাড়ি বান্দরবান শহরে। নববর্ষের ছুটিতে কুমিল্লা থেকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসে এই ঘটনা ঘটেছে।

রেস্তোরাঁর মালিক শোয়েসাই মং জানান, মঙ্গলবার মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের শেষ দিন ছিল। উৎসবের কারণে রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা ছুটিতে ছিলেন। তাই শোয়েসাই তার স্ত্রী উম্যাশৈ ও তাদের বৃদ্ধা মা পাইনুচিংকে নি‌য়ে রেস্তোরাঁয় আসা অতিথিদের খাবার পরিবেশন করছিলেন। টেবিলে বসে আট অতিথি ভাত খাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। রাত ৯টার দিকে কুমিল্লার এএসপি মংনেথোয়াই মারমা, তার স্ত্রী কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকে ভাতের সঙ্গে মদ দিতে বলেন। রেস্তোরাঁর মালিক তাদের জানান মদ নেই। আশপাশের কোথাও খোঁজ নিতে বলেন। এতে রেগে যান এএসপি ও তার স্ত্রী। এ সময় এএসপির স্ত্রী বলেন, ‘আমি এএসপির বউ, মদ এখনই দিতে হবে। না দিলে বান্দরবানের পুলিশ সুপারকে বলে আজীবনের জন্য দোকান বন্ধ করে দেবো’—এই কথা বলেই হইচই শুরু করেন।

একপর্যায়ে মালিক ও তার স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন এএসপি, তার স্ত্রী, সাব-ইন্সপেক্টর নিং ওয়াই ও তাদের সঙ্গে থাকা আরও একজন। এতে উম্যাশৈর কোলে থাকা শিশুটি মাটিতে পড়ে আহত হয়। এ অবস্থায় তাদের ছেড়ে দিতে এএসপির স্ত্রীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান বৃদ্ধা মা পাইনুচিং। তবু শান্ত হচ্ছিলেন না। খবর পেয়ে মালিকের মেজো ভাই খিংসাই মং এসে মারধর থামাতে গেলে তাকেও ঘুষি মেরে আহত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় তাদের আবারও মারধর করেন তারা। সবশেষে দোকানের অতিথি ও স্থানীয়দের অনুরোধে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যান তারা।

এ ঘটনায় আহত শোয়েসাই মং (৩২), তার স্ত্রী উম্যাশৈ (২৫), তাদের দুই বছরের সন্তান উখ্যাই, ভাই খিংসাই মং (৩৬) ও মা পাইনুচিংকে (৬৫) উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালিয়ে তাদের আহত করার কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলে আসে বান্দরবান সদর থানা পুলিশ। কাউকে কিছু না বলে উল্টো রেস্তোরাঁ বন্ধ করে মালিককে থানায় নিয়ে যেতে চান থানার ডিউটি অফিসার মো. হেলাল। পরে আহত দেখে তাদের আর থানায় নেওয়া হয়নি। এরপর রেস্তোরাঁ বন্ধ করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান এএসপি, তার স্ত্রী ও সঙ্গীরা।

সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মো. দিদার বলেন, ‘আহত একজনের শরীরে দাঁতের কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। বাকিদের হাত-মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়েছি।’

এদিকে ভয়ে এখনও থানায় মামলা করেননি ভুক্তভোগী রেস্তোরাঁর মালিক শোয়েসাই মং। তিনি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছি। কিন্তু ভয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে যেতে পারছি না।’

এ ব্যাপারে রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই জসাই মারমা বলেন, ‘মদ না দেওয়ায় তারা রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের পাশাপাশি আমাদের মারধর করেছে। থানায় জানানোর পর দুই পক্ষকে বসে মীমাংসা করতে বলেছে পুলিশ।’

এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক ও স্থানীয়ভাবে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হওয়ার পর বুধবার সকালে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছে পুলিশ।

এমনটি জানিয়ে বান্দরবা‌নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী ব‌লেন, ‘গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি আজ পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হয়েছে। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হওয়ায় মেনে নিয়েছে দুই পক্ষ।’

তবে তার এই দাবি অস্বীকার করে জসাই মারমা বলেন, ‘জেলা পরিষদে আধা ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তারা সমাধানের জন্য চাপ দিয়েছে আমাদের। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। আপসের কথা বলেছিল তারা। আমরা বিচার চেয়েছি। এ অবস্থায় সেখান থেকে চলে এসেছি। তবে বিচার না পেলে আদাল‌তে মামলা করবো আমরা।’

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মংনেথোয়াই মারমার ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ ক‌রেন‌নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। বিষয়টি আমরা দেখছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান, হামলা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন