ফলোআপ

বান্দরবানে ব্যাংক লুট, ম্যানেজার অপহরণ

fec-image

বান্দরবানের রুমায় অভিনব কায়দায় মঙ্গলবার রাতের আধারে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। এ ঘটনায় নগদ টাকাসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র নিয়ে যায়। এসময় ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়। রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিদারুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে রুমা উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এটা পরিকল্পিত নাকি নিয়মিত লোড শেডিং পার্বত্যনিউজ নিশ্চিত হতে পারেনি। ওই সময় ৭০/৮০ জনের আধুনিক অস্ত্র সশস্ত্র সজ্জিত সশস্ত্র সদস্যরা রুমা সদরে উপজেলা পরিষদ এলাকায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের গ্রীল ভেঙ্গে প্রবেশ করে। তারপর ব্যাংক ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা নিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তবে আনুমানিক দেড় থেকে দুই কোটি টাকা অনুমান করা হলেও কি পরিমাণ টাকা লুট হয়ে গেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ডাকাতির সময় ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে দশটি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেয়া হয়। ব্যাংকের অদূরে থাকা আনসার ব্যারাক থেকে থেকে ৪টি অস্ত্র ও ৩৫টি গুলি ছিনিয়ে নেয় সশস্ত্র এ সন্ত্রাসীরা। এসময় সময় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে । ওই সময় ব্যাংকের লাগুয়া থাকা অফিসার কোয়ার্টারে অবস্থান করা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন কর্মচারীকেও মারধোর করে সন্ত্রাসীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংকে টাকাগুলো মঙ্গলবার (২এপ্রিল, ২০২৪) বান্দরবান সদর থেকে রুমা সোনালী ব্যাংকে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, এসময় উপজেলা মসজিদ ঘেরাও করে মসুল্লিদের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। সশস্ত্র সদস্য একটি অংশ উপজেলা পরিষদ এলাকায় ব্যাংক থেকে প্রায় একশ গজ দুরে আলমগীর চা দোকানের সামনে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রহরা দেয় সশস্ত্র সদস্যরা। তখন রুমা বাজার দিক থেকে আসা সাধারণ যাত্রী ও মোটরবাইকসহ যাত্রীদের আটকিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে লোকজন বেধড়ক পিটিয়েছে।

একইভাবে উপজেলা পরিষদের পশ্চিম দিকে সেগুন বাগান নিচে ছোট্ট কালভাটের পাশে রাস্তা গতিরোধ করে মোটরবাইক ও যাত্রীদের আটকিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস যা থাকে সব ছিনিয়ে নিয়ে সবাইকে মারধর করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এঘটনার ভুক্তভোগীরা জানায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে আধুনিক অস্ত্র ও মুখে কাপড় ঢাকা ছিল। তাই তাদের চেনা না গেলেও বাংলা ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের মধ্যে ফিশফিশে বম ভাষায় কথোপকথনের ভাষার সুর শুনতে পেরেছেন- অনেক ভুক্তভোগী ও মারধরের শিকার হওয়া লোকজন।

স্থানীয়দের মতে, লুট করার পর কেএনএফ রুমা সদর থেকে উত্তরপূর্ব দিকে পলিখালের দিকে গেছে। এতে কেএনএফের পদ মর্যাদার এক নেতা এটাতে নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে স্থানীয়দের মত। তারা এসময় তার নাম ডাকতে শুনেছে কেউ কেউ।

সেকারণে স্থানীয়রা এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে । তবে তাৎক্ষণিক কেএনএফ এর দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে এই ঘটনার পর সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে, এলাকায় আতংক বিরাজ করায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মূলত নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ঘেরাও হয়ে পড়লে যাতে ম্যানেজারকে হত্যার ভয় দেখিয়ে পার পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে তাকে অপহরণ করা হতে পারে।

এদিকে পাহাড়ে রমজান, ইফতার ও তারাবিহকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ইস্যু কাজে লাগিয়ে অতীতেও আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আর্কাইভের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এমনই একটি ঘটনা ছিলো ১৯৮৯ সালের ৪ মে রোজ বৃহস্পতিবারের ঘটনা। চলছিলো রমজান মাস। লংগদু উপজেলার প্রথম নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আব্দুর রশিদ সরকার সফরে মাইনী বাজার গিয়েছিলেন। আছরের নামায শেষে আনুমানিক ৪.৩০ মিনিটের সময় মাইনী বাজার হতে লংগদু সদরে ফিরছিলেন তিনি। ফিরতি পথে মুসলিম ব্লকের কিছু লোক তাকে তাদের সাথে ইফতারের নিমন্ত্রণ করলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব রাজি হলেন না। তিনি বললেন যে সে বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে ইফতার করবেন।

এদিকে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে। যখন তিনি লংগদু কাঠালতলী অতিক্রম করে বর্তমান বনবিহার গেইটের কাছে উপস্থিত হলেন তখনই তার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের পিস্তলের গুলি আব্দুর রশিদ সরকারের দেহ ভেদ করে চলে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি, সাথে সাথে দেহ হতে প্রাণ পাখি উড়ে যায়। হারিয়ে যায় লংগদু উপজেলা তথা ভবিষ্যত পার্বত্য বাঙ্গালীর একজন দক্ষ অভিবাবক।

উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তিবাহিনী কর্তৃক হত্যার সংবাদ বাতাসে বাতাসে সমগ্র উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রিয় চেয়ারম্যানকে হত্যার সংবাদ শুনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে শতশত বাঙ্গালী উপজেলা সদরে উপস্থিত হতে থাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে আবারও ভীতি ছড়াতে পার্শ্ববর্তী বাঙ্গালী পাড়ায় শান্তি বাহিনী সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। এই আক্রমণে অন্তত ৪০জন নিরীহ বাঙ্গালী পুরুষ, নারী, শিশু নিহত হয়। এদের মধ্যে অনেকের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

শান্তি বাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালী পাড়ায় হামলা চলাকালে নিহত উপজেলা চেয়ারম্যানকে দেখতে আসা বাঙ্গালীরা উপায়ন্তু না পেয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে লংগদু সদরে উপজেলার প্রভাবশালী উপজাতীয় নেতা, সাবেক লংগদু ইউপি চেয়ারম্যান এবং লংগদু মৌজার হেডম্যান অনীল বিহারী চাকমার বাসভবনে যান। কিন্তু প্রভাবশালী এই উপজাতীয় নেতা কোনরূপ সান্তনা না দিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়। তখন নিরুপায় ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালী সশস্ত্র শান্তি বাহিনীদের প্রতিরোধ করতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠে এবং উপজাতি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। যদিও তথ্য প্রমাণ নেই তবুও শোনা যায়, বাঙ্গালীদের অগ্নিসংযোগে অন্তত ৩৬ জন উপজাতির প্রাণহানী ঘটে। ২০০৩ সালে ইফতারের সময়ই পানছড়ি কলেজ গেইটে ইউপিডিএফ হত্যা করে জেএসএস র নেতাকে।

সামনে ঈদ ও বৈসাবি অনুষ্ঠান। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উৎসব ও উৎসবের নিরাপত্তায় ব্যস্ত থাকে। এ ধরণের সুযোগ পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয়। এ ছাড়াও আসন্ন উপজেলা নির্বাচন পাহাড়ী আঞ্চলিক সংগঠননগুলোর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারে উপজেলা পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এ নির্বাচনের ব্যয় হিসেবেও বিপুল অর্থ প্রয়োজন তাদের। কাজেই এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে এখনই সতর্ক হওয়া জরুরী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেএনএ, কেএনএফ, ব্যাংক লুট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন