ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণ

বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি: বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট

fec-image

বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ম্যানেজারকে জিম্মী করে টাকা ও অস্ত্র লুট করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা। এসময় ঐ ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসারের নিকট থেকে ১৪টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে এ ঘটনা বলে জানিয়েছেন রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায় পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এর অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী রাত ৯ টার দিকে এসে বাজারের মসজিদ ও ব্যাংক ঘেরাও করে সবাইকে জিম্মি করে রাখে। এসময় তারা সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকাসহ ডিউটি পুলিশের ১০টি অস্ত্র ও আনসার বাহিনীর ৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় তারা যাওয়ার সময় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে মো. নিজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বেতন বোনাসের টাকা হিসেব করছিলো ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারাবিহের নামাজের সময় হলে ম্যানেজার ব্যাংকের বিপরীতে থাকা মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। এসময় ৭০-৮০ জনের মতো একটি উপজাতীয় সশস্ত্র দল ব্যাংকে ঘেরাও করে পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ ব্যাংকের সকল কর্মচারীদের জিম্মী করে। পুলিশ ও আনসারদের নিকট থেকে সকল অস্ত্র ও গুলি নিয়ে নেয়।

অপহৃত ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিন (ফাইল ছবি)

 

এসময় তারা ম্যানেজারকে খোঁজ করলে কর্মচারীরা জানান, ম্যানেজার তারাবিহের নামাজ পড়তে গিয়েছেন। এ কথা শুনে সন্ত্রাসীরা মসজিদ ঘেরাও করে সকল ম্যানেজারকে খোঁজ করলে মুসল্লিরা প্রাণভয়ে ম্যানজোরকে দেখিয়ে দিলে তারা ম্যানেজারকে নিয়ে এসে তাকে জিম্মী করে টাকা লুট করে পরে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তবে যাওয়ার সময় ম্যানেজারকে সাথে করে নিয়ে যায়। ঘটনার পর দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনী এলাকা ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করছে।

এসময় সন্ত্রাসীদের পোশাক ও ভাষা বিচার করে স্থানীয়রা তাদের কেএনএফ বলে সনাক্ত করে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে কেএনএফের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের মোবাইলের ফোন করা হলে কেউই রিসিভ করেনি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে কেএনএফ’র ৭০-৮০ জনের একটি সশস্ত্র দল রুমা সোনালী ব্যাংকে প্রবেশ করে। এসময় অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের পাহারায় থাকা পুলিশ, আনসার সদস্যদের দুটি সাব-মেশিন গান ও এর ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চাইনিজ রাইফেল ও এর ৩২০ রাউন্ড গুলি এবং চারটি শটগান ও ৩৫ রাউন্ড গুলি লুট করে তারা। পরে অস্ত্রের মুখে ম্যানেজার-কর্মচারীদের জিম্মি করে টাকা লুট করে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার চাকরিজীবীদের ঈদের বেতন ও বোনাস ব্যাংকে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সোনালী ব্যাংকে হানা দেয় কেএনএফ’র সশস্ত্র বাহিনী। উপজেলার সরকারি সকল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাসের টাকা ভল্টে ছিলো। ঘটনার সময় এলাকা অন্ধকার থাকায় কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এই অন্ধকারের কারণ নিয়মিত লোডশেডিং নাকি সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত সৃষ্ট অন্ধকার তা জানা যায়নি।

রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাতে একদল সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এসে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা, ১৪টি অস্ত্র ও ব্যাংকের ম্যানেজারকে নিয়ে গেছে। তবে টাকার পরিমাণ কত তা এখনও জানা যায়নি।’

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত। তারা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর জনজাতিগুলোর ‘প্রতিনিধিত্বকারী’ নিজেদের পরিচয় দেয়।

সংগঠনটি একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়। যা ‘কুকি-চিন রাজ্যে’ নামে পরিচিত হবে। পরে সরকার গঠিত শান্তি কমিটির সাথে দুই দফা আলোচনার ভিত্তিকে স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবী থেকে সরে গিয়ে কুকিচিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল কেটিসি গঠনের দাবী জানায়। যেখানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না। থাকবে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, কেএনএফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন