মানবপাচারকারীর খপ্পরে পড়ে মিয়ানমারের জেলে বাংলাদেশি যুবক
মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির দুই যুবক মিয়ানমার কারাগারে ১ বছর ধরে বন্দি রয়েছে। এতে একদিকে যেমন যুবকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পতিত অপরদিকে পরিবারের স্বজনদের মাঝে আহাজারি ও কান্না বাড়ছে দিনদিন।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) সরেজমিনে উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা দোছড়ি ইউনিয়নের কুলাচি ও ফুট্টাঝিরি গ্রামে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়। গ্রাম দু’টি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।
যুবকদের স্বজনরা জানান, গত কুরবানির ঈদের ৪ তিন পর তাদের দুই ছেলে যথাক্রমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের ফুট্টাঝিবি গ্রামের বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (২০), একই ইউনিয়নের কুলাচি গ্রামের হাফেজ আহমদের ছেলে মুবিনুল হক (২২) কে উন্নত জীবনের আশায় চিহ্নিত মানবপাচারকারী মালয়েশিয়ার কথা বলে প্রথমে টেকনাফে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সাগরপথে জেলেদের ফিশিং বোটে তুলে তাদের নিয়ে যায় মিয়ানমারের এরাউড্ডি প্রদেশের এক গহীন জঙ্গলে। সেখানে মারধর করে তাদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা আদায় করে নেয় চক্রটি। এরপর পাচারকারী চক্র মিয়ানমার পুলিশের কাছে তুলে দেয়। পুলিশ তাদেরকে আটক করে জেলেখানায় পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে তারা মিয়ানমারের মেলাবাইনের জেলের ৮ নম্বর কক্ষে রয়েছে দাবি স্বজনদের।
কারাবন্দি এ দুই যুবক নানা মাধ্যমে ও কৌশলে তাদের পরিবারকে জানান, তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে সেখানে। তাদের পাচারকাজের চিহ্নিত দালাল ছিলো দোছরী নজরুল, জনৈক আজিজ মৌলা ও মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে। তাদের অনেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে আবার অনেকে এ দেশে। যেখানে খাবার দেয়া হয় না ঠিকভাবে। মাঝে মধ্যে যা দেয় তা খাওয়ার অনুপযোগী। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই। এভাবে তাদের প্রতি মুহূর্ত পার হচ্ছে তাদের।
রফিকুল ইসলামের মা জমিলা খাতুন বিলাপকান্নারত অবস্থায় এ প্রতিবেদককে বলেন, তার ছেলেটি ছোট-অবুঝ আর নাবালক। সেই সুযোগে মানবপাচারকারী চক্রটি লোভ দেখিয়ে তার ছেলেকে মালয়েশিয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। আসলে তারা নিয়ে গেছে মিয়ানমারের জঙ্গলে। আর মারধর ও অমানবিক নির্যাতন করে ২ লাখ টাকা আদায় করে মিয়ানমার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাদের আটক করে জেলখানায় প্রেরণ করে। এখন সেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তারা।
তিনি তার সন্তান রফিকুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান। যেভাবে সম্প্রতি ১৭৩ জনকে জরুরিভাবে সরকার এনেছেন বাংলাদেশে। এ ঘটনায় তিনি সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
একই দাবি করেন একই জেলখানার একই রুমে থাকা মুবিনুল হকের পিতা হাফেজ আহমদও। তিনিও সরকারের কাছে অনুরূপ দাবি জানান।