বান্দরবানের ঘটনা বড় কিছুর পূর্বাভাস: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

fec-image

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও ম্যানেজার অপহরণের ঘটনা আরও বড় কিছুর পূর্বাভাস বলে মনে করছে সরকার। পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের মতো ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। আমরা কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবো।

তিনি বলেন, ব্যাংকে ডাকাতি ছোট ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। কুকি-চিনকে কঠোরভাবে দমনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা আলোচনার মধ্যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন তারা কোথা থেকে এসেছে কীভাবে এসেছে, মাঝে মধ্যে তাদের প্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা শান্তি চায় বলেও জানিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে আক্রমণ ও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা আমাদের কাছে নতুন কিছু মনে হচ্ছে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বান্দরবান শান্তিপূর্ণ ছিলো। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পনা মাফিক অভিযান চালিয়েছে। এটা হঠাৎ করে হয়েছে। ম্যানেজারকে দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় যা যা করা দরকার সরকার তা করবে। এসব ঘটনা বড় ঘটনা ঘটানোর পূর্বাভাস মনে করে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকার অনুসন্ধান করছে এসব ঘটনার পেছনে কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা। বিষয়গুলো এখন আর হালকা করে দেখছে না।

মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি সশস্ত্র দল রুমাতে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ১৪টি অস্ত্র লুট করে এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার দুপুরে থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ডাকাতি করেছে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সেখানে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি চালাতে চালাতে ব্যাংক দুটির শাখায় প্রবেশ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

ব্যাংকে ডাকাতির সঙ্গে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ সন্ত্রাসীরা জড়িত বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সংগঠনটি একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়। যা ‘কুকি-চিন রাজ্যে’ নামে পরিচিত হবে। যেখানে চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না। থাকবে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা।

পাহাড়ে তাদের আস্তানায় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো।

সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়। রুমার উপজেলা পরিষদ বেথেলপাড়ার কাছেই অবস্থিত।

এদিকে চুক্তিভঙ্গ করে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে বলেন, কেন হঠাৎ করে তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমাদের জানা ছিলো না। তবে যে উদ্দেশ্যেই তারা এসব করুক না কেন; আমরা তাদের কাউকে ছাড় দেবো না। আর এমন কিছু ঘটেনি, যাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। আমরা দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আগে সবকিছু জেনে নিচ্ছি, তারপর সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এর পেছনে কারা আছেন, কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না? কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা অন্য কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, সেগুলো দেখে ব্যবস্থা নেব। কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেভাবে তথ্য দিচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেভাবেই কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রী আরো বলেন, পয়লা বৈশাখ কিংবা অন্য কিছু নিয়ে নাশকতার কোনো তথ্য আমাদের কাছে এখনো আসেনি। আবার না এলেও আমাদের যে সতর্কতা, সেটা নেয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা হামলার কারণ বের করবো। আর যারাই দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর পেছনে ভূরাজনৈতিক কিছু আছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। অনেক কিছু হতে পারে। তবে তথ্য না জানিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।

তিনি বলেন, কুকি চিনের আস্তানা র‌্যাব ও আর্মি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলো। পরে আমাদের সীমানা পার হয়ে তারা ভিন্ন কোনো দেশে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তারা অবস্থান করছিলো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, কেএনএফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন