ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা প্রস্তাবে যেসব সংশোধনী চায় হামাস

fec-image

গাজা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প প্রস্তাবের ২০টি পয়েন্ট বিনা শর্তে মেনে নিতে হামাসকে ৫ অক্টোবর রোববার রাত পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। অন্যথায় ভয়াবহ পরিণতির হুমকিও দেন তিনি। প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলি জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, যার মাধ্যমে গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। এরপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে, যার নাম হবে ‘দ্য বোর্ড অব পিস’ বা শান্তি প্রশাসন।

ট্রাম্পের দেয়া সময়সীমা পার হওয়ার আগেই হামাস শর্তসাপেক্ষে প্রস্তাব মেনে নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার ২০টি পয়েন্ট এবং তার প্রতিউত্তরে হামাসের জবাব নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ সাবিনা আহমেদ তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। পাঠকদের জন্য পয়েন্টগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবের ব্যাপারে হামাসের জবাব:

১) গাজা একটা অকট্টরপন্থী, সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা হবে যা তার পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি হবে না।

হামাসের জবাব: শর্তসাপেক্ষে মেনেছে (হামাস পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেনি, কিন্তু তাদের শান্তি এবং নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায়)।

২) গাজা গাজার লোকজনের ভালোর জন্য পুনর্গঠন করা হবে, যারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।

হামাসের জবাব: পুরোপুরি মেনেছে (হামাস পুনর্নির্মাণকে স্বাগত জানিয়েছে)।

৩) দু’পক্ষ যদি এই প্রস্তাব মেনে নেয়, যুদ্ধ ততক্ষণাত বন্ধ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী জিম্মি ছাড়ার জন্য সম্মত লাইনে সরে যাবে, এবং সমস্ত সামরিক অপারেশন বন্ধ হবে।

হামাসের জবাব: পুরোপুরি মেনেছে (হামাস যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত)।

৪) ইসরায়েল এই চুক্তি পাবলিকলি মেনে নেয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মি, জীবিত বা মৃত, ফেরত দেয়া হবে।

হামাসের জবাব: শর্তসাপেক্ষে মেনেছে (সমাহা জিম্মি ছাড়তে রাজি, কিন্তু প্রিজনার এক্সচেঞ্জ ফর্মুলা অনুসারে, ৭২ ঘণ্টা টাইমলাইন না মেনে)।

৫) সব জিম্মি ছাড়ার পর, ইসরায়েল ২৫০ জন  ফিলিস্তিনি লাইফ সেন্টেন্স কয়েদি এবং অক্টোবর ৭, ২০২৩ পরবর্তী গ্রেফতারকৃত ১,৭০০ জন গাজানদের ছেড়ে দেবে, সেই সাথে ছেড়ে দিবে সব নারী এবং শিশু।

হামাসের জবাব: শর্তসাপেক্ষে মেনেছে (হামাস প্রিজনার এক্সচেঞ্জ ফর্মুলা চায়, কিন্তু এই সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি)।

৬) সব জিম্মি ফেরতের পর, হামাস সদস্যরা যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং অস্ত্র ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের ক্ষমা দেয়া হবে। যারা গাজা ছেড়ে যেতে চায়, তাদের নিরাপদ প্যাসেজ দেয়া হবে।

হামাসের জবাব: প্রত্যাখ্যান করেছে (হামাস অস্ত্র ছেড়ে দেয়া বা ডিজলভ্ড হওয়া মেনে নেবে না ইসরায়েলি সেনা গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে পুরোপুরি সরে না যাওয়া পর্যন্ত)।

৭) চুক্তি মেনে নেয়ার পর, গাজায় পুরোপুরি সাহায্য পাঠানো হবে, যা নিদেনপক্ষে জানুয়ারি ১৯, ২০২৫ চুক্তির মতো হবে।

হামাসের জবাব: পুরোপুরি মেনেছে (হামাস সাহায্য প্রবেশকে স্বাগত জানিয়েছে)।

৮) সাহায্য বিতরণে কোনো পক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না, এবংএইড বিতরণ করবে ইউএন, রেড ক্রিসেন্ট।

হামাসের জবাব: পুরোপুরি মেনেছে (হামাস এতে রাজি)

৯) গাজা একটা টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক প্যালেস্টাইনিয়ান কমিটির অধীনে অস্থায়ী শাসন চলবে, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে ট্রাম্প এর  নেতৃত্বে “বোর্ড অফ পিস” সাথে টনি ব্লেয়ার।

হামাসের জবাব: শর্তসাপেক্ষে মেনেছে (হামাস প্যালেস্টাইনিয়ান টেকনোক্র্যাট লিড বডি চায়, কিন্তু টনি ব্লেয়ার বা বিদেশী হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে)।

১০) ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গাজা পুনর্গঠনের জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেল দিয়ে তৈরি হবে।

হামাসের জবাব: পুরোপুরি মেনেছে (হামাস পুনর্নির্মাণকে সমর্থন করে)।

১১) একটা বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি হবে, অংশগ্রহণকারী দেশের সাথে স্বল্প ট্যারিফ নেগোসিয়েট করা হবে।

হামাসের জবাব: পুরোপুরি মেনেছে (সমাহা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছে)।

১২) কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না, যারা যেতে চায় তারা যেতে পারবে এবং ফিরে আসতে পারবে।

হামাসের জবাব: পুরোপুরি মেনেছে (হামাস জোর করে বিতাড়িত না করার কথা সমর্থন করে)।

১৩) হামাস এবং অন্যান্য গ্রুপ গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা রাখবে না, সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে, গাজা নিরস্ত্রীকরণ হবে।

হামাসের জবাব: প্রত্যাখ্যান করেছে (হামাস নিরস্ত্রীকরণ এবং দ্রবীভূত হওয়া মেনে নেবে না ইসরায়েলি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত, এবং তারা জাতীয় ঐক্যমতে অংশ নিতে চায়)।

১৪) আঞ্চলিক অংশীদারদের দিয়ে গ্যারান্টি দেয়া হবে যে সমাহা তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং নতুন গাজা হুমকি হবে না।

হামাসের জবাব: শর্তসাপেক্ষে মেনেছে (হামাস আরব এবং ইসলামিক সমর্থন চায়, কিন্তু তাদের অধিকারের গ্যারান্টি থাকতে হবে)।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গাঁজা, ডোনাল্ড ট্রাম্প, হামাস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন