ঠেগামুখ স্থলবন্দর নির্মিত হলে রাঙামাটিবাসী পাবে অর্থনৈতিক নতুন ক্ষেত্র

fec-image

ঠেগামুখ, রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা একটি দুর্গম জনপদ। এলাকাটিকে দু’ভাগে ভাগ করেছে কাপ্তাই হ্রদের একটি শাখা ঠেগা খাল। ঠেগা খালের পশ্চিমে বাংলাদেশ আর পূর্ব পাশে ভারতের মিজোরাম প্রদেশ। দু’দেশের সাথে চমৎকার বন্ধুত্ব থাকায় হ্রদের সুবিধা দু’দেশেই ভোগ করছে। বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের স্থানীয় অধিবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ এ হ্রদটি। আর এ সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়াতে ওই এলাকায় একটি স্থলবন্দর নির্মাণের সিন্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এই লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০১৩ সালের ৩০ জুন ঠেগামুখ স্থলবন্দর নির্মাণের ঘোষণা প্রদান করেন। তার আগে ২০১২ সালে ঠেগামুখ স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা সরেজমিনে দেখার জন্য এডিবি’র ৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি টিম ঠেগামুখ আসে।

এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এবং অত্র মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠেগামুখ পরিদর্শন করে গেছেন বলে জানা গেছে। এখানে স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য সরকার ২৪৭ একর জায়গা নির্ধারণ করেছে। তারও আগে ঠেগামুখ স্থলবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে ভারতের মিজোরামের প্রদেশিক সরকারের পক্ষ থেকে সেদেশের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হলে ২০০৬ সালে এ সংক্রান্ত একটি সম্ভাব্যতা জরিপও চালানো হয়েছিলো ভারতের পক্ষ থেকে।

সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঠেগামুখ স্থলবন্দর নির্মাণে জমি নির্বাচন করা হলেও আইন জটিলতায় অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ঠেগামুখ স্থলবন্দরের জন্য সম্ভাব্য স্থানটি পাহাড়ি ও দুর্গম। ভারতীয় অংশের সঙ্গে ঠেগামুখ স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। তাই বাংলাদেশ-ভারতকে ভাগ করা প্রবাহিত সরু ঠেগাখাল (কাপ্তাই হ্রদ) যেটি বান্দরবানের থানচি উপজেলা দিকে চলে গেছে সেই খালের উপর ১শ মিটারের একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে দু’দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজেই স্থাপন সম্ভব।

এদিকে ঠেগামুখ বা ঠেগাবন্দরের (বরকল উপজেলা) সাথে রাঙামাটি জেলা সদরের দূরত্ব নদী পথে প্রায় ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। এ রুটে সড়ক বিভাগে যোগাযোগ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাঙামাটি জেলা সদর হয়ে বরকল উপজেলার ঠেগামুখ পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্যবর্তীস্থানে একটি নদীর ওপর ব্রিজও নির্মাণ করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষে বন্দরটির সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ঠেগামুখে প্রস্তাবিত স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা এবং একইসঙ্গে মিজোরামের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সম্ভাব্য তিনটি রুট বিবেচনা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে ঠেগামুখ থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যন্ত ১৩৫ কিলোমিটার সড়ক স্থাপনেরও বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ঠেগামুখ থেকে বরকলের আইমাছড়া, জুরাছড়ি উপজেলা, বিলাইছড়ি উপজেলা এবং কাপ্তাই উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের সড়কটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে ঠেগামুখ থেকে বাঘাইছড়ি সড়কটি অধিক উপযোগী বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বন্দরটি নির্মিত হলে যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে উভয়ই দেশ:

ঠেগামুখ স্থলবন্দরটি নির্মিত হলে বাংলাদেশ-ভারত উভয়ের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। উভয় দেশের মানুষের অর্থনৈতিক চাকাও ঘুরে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই স্থলবন্দরটি পুরোপুরি চালু করা গেলে আলু-বেগুনসহ যাবতীয় সবজি, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, ইট, বালু, সিমেন্ট, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, শুঁটকি মাছ, তামাকজাত পণ্য, মানুষের মাথার চুল, প্লাস্টিকের পানির ট্যাংক, আলু, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, তৈরি পোশাক, ডিম, টিউবওয়েল, প্লাস্টিক সামগ্রী, পুরনো কাপড়, চিপস, শাড়ি, ওষুধ, গরম মসলা, কাঠ, চুনাপাথর, বাঁশ, মাছ, আচার, তেঁতুল, হলুদ, স্যান্ডেল, মাটির সানকি, গাছের ছাল, বাঁশ, কাঠ ও সুপারি ইত্যাদি মিজোরামে রফতানি করা যাবে। অন্যদিকে, ভারত থেকে মরিচ, আদা, পিয়াজ, হলুদ, কমলা ইত্যাদি আমদানি করতে পারবে বাংলাদেশ। এর ফলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে গড়ে উঠবে সুসম্পর্ক। বর্তমানে এসব পণ্য অবৈধ পথে আমদানি-রফতানি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।


আরও পড়ুন

পার্বত্য অর্থনীতিতে নবদ্বার খুলবে তিনটি স্থলবন্দর, বাধা আঞ্চলিক পরিষদ

রামগড়-সাব্রু স্থলবন্দর চালুর প্রতীক্ষায় দু’ দেশের মানুষ

সম্ভাবনাময় নাইক্ষ্যংছড়ির স্থলবন্দর ও সীমান্ত হাট


পর্যটন শিল্পের বিকাশ:

স্থলবন্দরটি নির্মিত হলে দু’পারে পর্যটন নগরী গড়ে উঠবে। দু’দেশের মানুষের আর্তসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে, জীবনমান বাড়বে। গড়ে উঠবে কটেজ, হোটেল-মোটেল। অন্ধকার পাহাড়ি এলাকাগুলো আলোর মুখ দেখবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঠেগামুখে বসবাসকারী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির মানুষ পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে তাদের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়ে নিতে পারবে। সরকার এখান থেকে প্রতি বছর আদায় করতে পারবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

বন্দর নগরী গড়ে উঠতে যেসব বাধা রয়েছে:

এরশাদ সরকারের আমলে বরকল উপজেলাটি ছিলো আধুনিক শহর। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর বরকলকে নতুন আঙ্গিকে রূপ দেওয়া হয়েছিল। থানা ভবন, স্কুল, সড়ক, সরকারি কোয়ার্টার সব তৈরি করেছিলো। কিন্তু তৎকালীন শান্তি বাহিনীর বারবার আক্রমণের কারণে সেই শহরটি আর গড়ে উঠেনি। পরবর্তী সরকার নিরাপত্তা স্বার্থে শহর পরিবর্তন করে নতুন একটি জায়গায় শহর গড়ে তুলে।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন আ’লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে শান্তি চুক্তি করার পর সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিছুটা বন্ধ হলেও বর্তমানে ওই উপজেলায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র ক্যাডাররা ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করছে। বন্দরের কাজটি বন্ধ করতে স্থানীয়দের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বন্দর নির্মাণ কাজটি স্থগিত করতে নানা রকম হুমকিও প্রদান করছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য সন্তু গ্রুপের নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপকে ভারতে পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষ করে এ সশস্ত্র দলটি ফিরে এসে বরকল উপজেলায় অরাজকতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সূত্রগুলো।

বাড়াতে হবে নিরাপত্তা:

ঠেগামুখে স্থলবন্দর স্থাপিত হলে এ অঞ্চলের লক্ষ মানুষের ভাগ্য ফিরবে। দূরত্ব ঘুচবে বাংলাদেশ-ভারতের মানুষের মধ্যেও। তাই উভয়ই দেশের বাণিজ্যিকসহ নানা স্বার্থের কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। এই বন্দরের নির্ধারিত স্থানের ৫০ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে কোনও থানা বা পুলিশ ফাঁড়ি নেই। ছোট হরিণা থেকে ঠেগামুখ পর্যন্ত যেতে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে ছোট হরিণার পর থেকে কোনো বাঙালি জনগোষ্ঠির পক্ষে ওই এলাকার পথ মাড়ানো বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই ওই এলাকায় বিজিপি চেক পোস্ট, আনসার, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করাতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে।

ঠেগামুখ স্থলবন্দরের কাজটি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশ অংশে ঠেগামুখ স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজটি এখনো শুরু করা হয়নি। এ যেন শুরু হয়েও এই কাজ হইলা না শেষ। দু’দেশ ভূমি জরিপ, জায়গা নির্বাচন এবং বন্দর নির্মাণের জায়গা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। উভয় দেশের প্রতিনিধি দল জায়গার মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করে ফেলেছে। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে সড়ক নির্মাণ করার কথা ছিলো দীর্ঘ বছর পার হলেও সে কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। এমনকি নির্ধারিত স্থানে বন্দরের কোনো ফলকও স্থাপন করা হয়নি। স্থলবন্দরের জন্য নির্ধারিত জায়গাটির বাংলাদেশ অংশে স্থানীয় পাহাড়িরা এখন জুমের ধান চাষ করছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থলবন্দরটি নির্মিত হলে তাদের অর্থনৈতিক ভাগ্যর পরিবর্তন ঘটবে। জীবনমানের পরিবর্তন হবে। এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা সুবিধা ভোগ করবে তারা। ঠেগামুখ বাজারের ব্যবসায়ী (মুদি দোকানদার) সুশীল চাকমা পার্বত্যনিউজকে জানান, জন্মলগ্ন থেকে এ এলাকায় বসবাস করছি। বন্দর হলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা করি। আরেক ব্যবসায়ী (চা-দোকানদার) জনতা দেবী চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, এখন মোটামুটি ভালো আছি; তবে বন্দর হলে আরো ভালো থাকবো বলে বিশ্বাস করি। ব্যবসায়ী নীলা প্রভা চাকমা (কসমেটিকস ব্যবসায়ী) পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমি কসমেটিকস ব্যবসার সাথে জড়িত। বন্দর নগরী গড়ে উঠলে আমাদের ব্যবসা আরো চাঙ্গা হবে। এখনের চেয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি আয়ের সম্ভবনা বাড়বে।

এদিকে রাঙামাটির কয়েকজন ব্যবসায়ী পার্বত্যনিউজের কাছে ঠেগামুখ স্থলবন্দর নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত তুলে ধরেছেন। তারা জানান, ২০১২ সালের দিকে স্থলবন্দর স্থাপন নিয়ে যখন তোড়জোর শুরু হয় তখন রাঙামাটি ও ঠেগামুখের কয়েকজন উপজাতীয় ব্যবসায়ী সিএন্ডএফ ও ট্রেডিং কোম্পানির লাইসেন্স করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই উদ্যোগ থমকে যাওয়ায় তারা এখন হতাশ। তাই কালক্ষেপণ না করে শিগগিরই প্রস্তাবিত স্থলবন্দর চালুর উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান এসব ব্যবসায়ী। শুধু স্থলবন্দর নয়, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস অফিস স্থাপন করে আমদানি-রফতানি-বাণিজ্যের সুযোগ করে দেয়ারও দাবি জানান এসব ব্যবসায়ী।

তবে অন্য ব্যবসায়ীরা এসব মতের ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অন্যান্য স্থলবন্দরে রফতানি বাণিজ্যে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যে সুযোগ পেয়ে থাকে একই সুযোগ বাংলাদেশিদের দেওয়া হয় না। একই মানসিকতা যদি ঠেগামুখের ক্ষেত্রেও ভারত অনুসরণ করে তাতে ঠেগামুখ স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যের সম্ভাবনায় বাংলাদেশের খুশি হওয়ার কিছু নেই।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা (নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার) বেশি। এই বাধা এড়িয়ে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির অতীত অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখকর নয়। তাই বাংলাদেশের মিজোরাম সীমান্তে স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা করে এবং সেদেশে পণ্য আমদানি-রফতানির আনুষাঙ্গিক সুবিধা গড়ে তোলা হলে বাংলাদেশের তেমন লাভ হবে না। বরং মিজোরাম থেকে অবৈধ পথে যেসব পণ্য বাংলাদেশে ঢুকে (ভারত যা অনেক চেষ্টায়ও বন্ধ করতে পারছে না) সেসব পণ্য বৈধ পথে রফতানির সুযোগ করে দিলে চোরাই পথে পণ্য পাচার বন্ধ হবে। ভারতের রাজস্ব আয় বাড়বে।

তবে এ বিষয়ে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ-এর সভাপতি বেলায়তে হোসেন ভুঁইয়া পার্বত্যনিউজকে জানান, ঠেগামুখ স্থলবন্দরটি নির্মিত হলে বাংলাদেশ-ভারতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ট্রেড ব্যালেন্স আসবে। বাংলাদেশ আমদানির চেয়ে রফতানি করতে পারবে বেশি। ব্যবসায়ী এ নেতা আরও জানান, এখন পিছন ফিরে থাকার সময় আমাদের নেই। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব। বন্দরটি স্থাপনে সরকার আন্তরিক। গত ২০১৭ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তিনি ভারত সফর করেছেন এবং মিজোরামের ব্যবসায়ীদের সাথে বাণিজ্যিক স্বার্থ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে যোগ করেন ব্যবসায়ী সমিতির এ নেতা।

এক প্রশ্নের জবাবে চেম্বারের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রাঙামাটি ও ঠেগামুখের কয়েকজন ব্যবসায়ী সিএন্ডএফ ও ট্রেডিং কোম্পানির লাইসেন্স করেছেন। তারা এ রুটে ব্যবসা করতে রাজি আছে বলে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে এ লাইসেন্স বানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা (নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার) বেশি এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, আগে তো বন্দর স্থাপন করা হোক। তারপর এ বিষয় নিয়ে ভাবা হবে। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, বন্দরটি স্থাপিত হলে আমাদের দেশে আমদানির চেয়ে রফতানি হবে বেশি। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান পরিবর্তন ঘটবে। এছাড়া এ এলাকায় বন্দরটি নির্মিত হলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হবে এবং বন্দরটিকে ঘিরে একটি পর্যটন নগরী গড়ে তোলা সম্ভব বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী এ নেতা।

বন্দরের কাজ থমকে আছে কেন বা কখন বন্দরের কাজ কখন শুরু হতে পারে এমন প্রশ্নে বেলায়েত হোসেন ভূইয়া জানান, ঠেগামুখ বা ঠেগাবন্দরের (বরকল উপজেলা) সাথে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা গেলেও এর দূরত্ব অনেক বেশি হবে। তবে আমরাও হাল ছাড়ছি না। আমাদের পক্ষ থেকে সবরকম কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভারত ঠেগামুখ স্থলবন্দরের সাথে যোগাযোগের জন্য কতটুকু প্রস্তুত এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ভারত ঠেগামুখ স্থলবন্দরের সাথে যোগাযোগের জন্য সব কাজ শেষে করে ফেলেছে। তাদের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। এখন বাংলাদেশ-ভারতকে ভাগ করে প্রবাহিত সরু ঠেগাখাল (কাপ্তাই হ্রদ) যেটি বান্দরবানের থানচি উপজেলা দিকে চলে গেছে সেই খালের উপর ১শ’ মিটারের একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দিলে দু’দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজেই স্থাপন হয়ে যাবে।

মহিলা সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু পার্বত্যনিউজকে জানান, ঠেগামুখ স্থলবন্দর আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একটি উপহার। বন্দরটি স্থাপিত হলে আমাদের জীবনমানের যেমন পরিবর্তন হবে, তেমনি উভয়ই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও জমে উঠবে। এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ এমপি আরও জানান, পুরো এলাকাটি এখন সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। বন্দরটি স্থাপতি হলে সেখানে লোকজনের আনাগোনা বাড়বে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঠেগামুখ স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা গেলে যোগাযোগের পথ সুগম হবে এবং দুর্গম এলাকাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।

বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন, ঠেগামুখে স্থলবন্দর নির্মিত হবে অনেক আগে থেকে শুনে আসছি। তবে এ বন্দর নির্মিত হলে কী লাভ হবে তা বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, শ্রেণিভুক্ত সমাজে কেউ লাভবান হবে না। আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও দরিদ্র মানুষ রয়েছে। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাদের সাথে যদি পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সাথে আলোচনার ভিত্তিতে বন্দরটি নির্মিত হয় তবে ভালো হবে বলে মনে করেন বরকল উপজেলা চেয়ারম্যান।

সূত্র: পার্বত্যনিউজ পাক্ষিক, বর্ষ : ০২ সংখ্যা : ৪৪-৪৫

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন