পার্বত্য অর্থনীতিতে নবদ্বার খুলবে তিনটি স্থলবন্দর, বাধা আঞ্চলিক পরিষদ

fec-image

বাংলাদেশের পার্বত্য তিন জেলার সাথে ভারত ও মিয়ানমারের আমদানি-রফতানি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে প্রতিবেশী দুটি দেশের সীমান্তেতিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার।রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য এ তিন জেলায় স্থলবন্দর নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে ১১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

আশা করা হচ্ছে, এ তিনটি স্থলবন্দর নির্মিত হলে পাহাড়ের অর্থনীতি বদলে যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বন্দরগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলে পর্যটন শিল্পের পালেও লাগবে নতুন হাওয়া। পার্বত্য অর্থনীতিতে নবদ্বার খুলতে যাওয়া এই তিনটি স্থলবন্দরের মধ্যে একটির কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও অপর দুটির নির্মাণ এবং চালুর পথে বাধা হয়েছে আঞ্চলিক পরিষদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সীমান্তেনির্ধারিত স্থলবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম কিছুটা এগুলেও রাঙ্গামাটি জেলার ঠেগামুখ এবং মিয়ানমারের সাথে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে দুটি স্থলবন্দর নির্মাণে জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় স্থবির হয়ে আছে কার্যক্রম। রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণে ভারতীয় অংশে অবকাঠামো নির্মাণসহ ও আনুষাঙ্গিক বিষয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ করা গেলেও বাংলাদেশ অংশে কাজ চলছে ধীর গতিতে।


আরও পড়ুন

রামগড়-সাব্রু স্থলবন্দর চালুর প্রতীক্ষায় দু’ দেশের মানুষ

সম্ভাবনাময় নাইক্ষ্যংছড়ির স্থলবন্দর ও সীমান্ত হাট

ঠেগামুখ স্থলবন্দর নির্মিত হলে রাঙামাটিবাসী পাবে অর্থনৈতিক নতুন ক্ষেত্র


রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ঠেগামুখ এবং ভারতের মিজোরামের দেমাগ্রী সীমান্তে জায়গা নির্ধারণ করে গত ২০১৩ সালের ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে স্থলবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হলেও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সে জায়গা অধিগ্রহণের ব্যাপারে সরকারি প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। ফলে স্থবির হয়ে আছে এর পরবর্তী কার্যক্রম।

অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের প্রস্তাবিত স্থলবন্দরটির এখনো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজই শেষ হয়নি, নির্ধারণ হয়নি স্থলবন্দরের স্থান। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে জায়গা নির্ধারণ হলেও আঞ্চলিক পরিষদের অসহযোগিতায় ঠেগামুখের মতো আটকে যেতে পারে ঘুমধুম সীমান্তের স্থলবন্দর নির্মাণের কাজও।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী পার্বত্যনিউজকে জানান, রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ প্রজেক্ট ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)-এ পাশ হয়েছে। বর্তমানে সেখানে জমি অধিগ্রহণ চলছে। জমি অধিগ্রহণ শেষে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে বন্দরটি চালুর উপযোগী করতে আরো বছর দুয়েক সময় লাগতে পারে। রাঙ্গামাটির ঠেগামুখ স্থলবন্দরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে জায়গা অধিগ্রহণ করতে হলে শান্তিচুক্তির শর্ত মতে আঞ্চলিক পরিষদের সম্মতি প্রয়োজন। বেশ কয়েক বছর আগে ঠেগামুখ স্থলবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সম্মতি চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ভূমি অধিগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় ঠেগামুখ স্থলবন্দরের অবকাঠামো, স্থলবন্দর এলাকা থেকে জেলা সদর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণসহ অন্যান্য প্রস্তুতিও গ্রহণ করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদের বক্তব্য পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, আসলে আঞ্চলিক পরিষদ এ বিষয়ে কিছুই বলছে না। তার মানে কি ঠেগামুখ স্থলবন্দর নির্মাণের বিষয়টিকে আমরা অনিশ্চিত ধরে নিতে পারি কিনা জানতে চাইলে সরাসরি এর উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা বরং আঞ্চলিক পরিষদকেই এ বিষয়ে প্রশ্ন করুন, ঠেগামুখে স্থলবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণে সম্মতি দিতে তাদের আপত্তি কোথায়? বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য পার্বত্যনিউজের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয়া লারমা (সন্তু লারমা)’র বাসা এবং অফিসের ফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফোনে রিং হলেও কেউ রিসিভ করেননি। আঞ্চলিক পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নির্মল কান্তি চাকমাও ফোন ধরেননি।

এর পরও সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, সকল বাধাবিপত্তি কাটিয়ে প্রস্তাবিত তিনটি স্থলবন্দর পুরোপুরি চালু করা গেলে বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলার সাথে ভারত এবং মিয়ানমারের বিপুল পরিমাণ পণ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। যা উভয় দেশের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। অর্থনৈতিক লেনদেনের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের মানুষের সাথে আত্মিক-সামাজিক যোগাযোগও সহজ হবে, বিকশিত হবে পর্যটন ব্যবসাও। স্থানীয়সহ বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানও করবে এসব বন্দর।

সূত্র: পার্বত্যনিউজ পাক্ষিক, বর্ষ : ০২ সংখ্যা : ৪৪-৪৫

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন