তাইন্দং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীরা সরকারী ত্রাণ সহয়তায় সন্তুষ্ট নয়
মুজিবুর রহমান ভুইয়া, তাইন্দং (মাটিরাঙ্গা) থেকে ফিরে :
তাইন্দং সহিসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীরা সরকারী ত্রাণ সহায়তায় সন্তুষ্ট নয়। তাইন্দং সহিংসতার ১৩ দিন পরেও পাহাড়ীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সাথে সমানতালে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীদের ত্রাণ তৎপরতাসহ পুনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, রেডক্রিস্টে সোসাইটিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। এতো কিছুর পরও সন্তুষ্ট নয় সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীরা। পুরোদমে পাহাড়ীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চললেও একমাস সিয়াম সাধনা শেষে গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যেই ঈদ কটেছে তাইন্দংয়ের বাঙ্গালীদের। গ্রেফতার আতঙ্কে পরিবারের সবাইকে ছেড়ে ঈদ কেটেছে তাইন্দংয়ের অনেকেরই। অনেক বাঙ্গালী গ্রামই এখন পুরুষশুন্য। তাইন্দংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের সাথে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার তাইন্দংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দিনভর শিক্ষা সামগ্রী, নগদ আর্থিক সহায়তা ও ঢেউটিন বিতরণ করেছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের মাঝে ২৯ সেট পাঠ্যবই বিতরণ করেন। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ টি পাহাড়ী ও তিনটি বাঙ্গালী পরিবারের মাঝে বাড়িঘর মেরামতের জন্য নগদ নয় হাজার টাকা ও তিন বান্ডিল করে ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে।
এসময় মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম পার্বত্য নিউজকে বলেন, ঘটনার পরপরই প্রশাসনের পক্ষ আতঙ্কিত পাহাড়ীদের ফিরিয়ে আনাসহ তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রানের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন তাৎক্ষনিকভাবে ৩৫টি পাহাড়ী বাড়ি ও ৩টি বাঙ্গালী পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে শুকনা খাবার, ৩০ কেজি চাউল ও নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি আতঙ্কিত হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া ৫৪৮ টি পরিবারকে শুকনা খাবার, ৩০ কেজি চাউল ও নগদ এক হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
ত্রান তৎপরতার বিষয়ে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবির যামিনীপাড়া জোনের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শোয়াইব বলেন, গত ৩ আগষ্টের ঘটনার পরপরই বিজিবির পক্ষ থেকে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত পাহাড়ীরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের থাকার জন্য তাবু টানিয়ে দেয়া ছাড়াও তাৎক্ষনিপ্রতি পরিবারকে পাঁচ কেজি চাউল, এক কেজি ডাল ও এক কেজি চিনি সহ প্রায় দুই লাখ টাকার ত্রান সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে তৈজসপত্র এবং কাপড়-চোপড় প্রদান করা হয় বিজিবির পক্ষ থেকে।
এছাড়াও স্বর্বেশ্বরপাড়ায় এক লাখ টাকা ব্যায়ে নবরত্ন বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে দিয়েছে বিজিবি। একই পাড়াতে অপর একটি বিহার মেরামত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় গুইমারা রিজিয়নের চিকিৎসক ক্যাপ্টেন ডা: রুমেল এর নেততৃত্বে একটি মেডিকেল ক্যাম্প বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও বিজিবির পক্ষ থেকে ত্রানকাজে প্রশাসনকে সহায়তা করাসহ পাহাড়ী গ্রামগুলোতে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফনি ভূষণ চাকমা এ প্রতিনিধিকে জানান, তাইন্দংয়ের অন্তত ১০টি পাহাড়ী গ্রামের চারদিকে এখন শুধুই অভাব আর অভাব। চরম অসহায় অবস্থায় জীবন কাটছে তাদের। তাইন্দং সহিসতায় ক্ষতিগ্রস্থ হেডম্যানপাড়ার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নেতা সুকুমার রোয়াজা জানান, আমরা যারা আতঙ্কিত হয়ে পানছড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম আমাদের ঘর-বাড়িতে অবশিষ্ট বলতে কিছু নেই। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ১০ কেজি চাউল ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তেমন কিছুই পায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দা সত্যপ্রিয় চাকমা বলেন, সরকারী ত্রান সহায়তায় পাহাড়ীরা সন্তুষ্ট নয়। তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পায়নি বলেও দাবী করেন তিনি। তাইন্দংয়ের তঙ্গ মোহন পাড়ার বীরলাল চাকমা বলেন, এখনো পর্যন্ত তঙ্গ মোহন পাড়ায় কোন ত্রান সহায়তা পৌছায়নি। আর্থিক সহায়তাও পায়নি সেখানকার পাহাড়ীরা।
এদিকে প্রাপ্ত তথ্য মতে দেখা গেছে গত ঘটনার পর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদ, চেঙ্গী ফাউন্ডেশন, খাগড়াছড়ি সুশীল সমাজ, ত্রিপুরা কল্যান সংসদসহ অনেকেই ত্রানতৎপরতায় এগিয়ে এসছে। এপর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ২৩ হাজার ৯১০ কেজি চাল, ৪৪৯ কেজি ডাল, ৫২৬ কেজি চিনি, ৭০৮ কেজি চিড়া, ২১৮ কেজি গুড়, বিশুদ্ধ খাবার পানি, মহিলা ও পুরুষদের ব্যাহারের জন্য পর্যাপ্ত কাপড়-চোপড়, প্রত্যেক পরিবারের জন্র পয়োজনীয় তৈজসপত্র প্রদান করা হয়েছে।