তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে টিআইবির ৯ দফা সুপারিশ

fec-image

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ তরুণ ও যুব গোষ্ঠী হলেও এদের মধ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় পর্যায়ের হারের দ্বিগুণ। এমন বাস্তবতায় দেশের অগ্রযাত্রায় বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সম্প্রতি প্রকাশিত জনশুমারিকে বিবেচনায় নিলে, তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীর হাত ধরে দারুণ এক জনমিতিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। যদিও সেই সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর করে এই বিপুল তারুণ্য কতটা কার্যকরভাবে দক্ষ করে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়া যাচ্ছে তার ওপর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সুখকর অবস্থায় নেই তার বড় প্রমাণ আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ-২০২২’ এর তথ্য। প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ। যেখানে জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার মাত্র ৪.২ শতাংশ। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারীর প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর বড় অংশই তরুণ। কিন্তু বিপুল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে কর্মউপযোগী করার বিষয়ে এখোনো কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যা সত্যিই হতাশার। যদিও দেশের ভবিষ্যত বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেয়া সবচেয়ে জরুরি।”

দেশে প্রচলিত শিক্ষা কর্মউপযোগী দক্ষতা তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে এমন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. জামান বলেন, ‘সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, দেশে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। যার বড় কারণ হচ্ছে কাজে যোগ দেবার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা যাচ্ছে না প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে। এই সমস্যাটি ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠলেও তা সমাধানে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি, যা সত্যিই উদ্বেগের। সবচেয়ে আতঙ্কজনক বিষয়টি সম্ভবত দেশের যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের প্রকৃত সংখ্যাকে অস্বীকার করা বা প্রকাশ না করার প্রচেষ্টা। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও বাজেট বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি। একইসাথে প্রয়োজন বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তোলা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে না পারলে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচারেই খুশি থাকার চেষ্টা বুমেরাং হবে।’

ড. জামান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ অবস্থায় আছে বলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তিমূলক প্রচার রয়েছে তবে প্রকৃত অর্থে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগাতে চাইলে উন্নয়ন পরিকল্পনায় তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভয়-ডরহীনভাবে তরুণদের মত প্রকাশের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাদের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরিও জরুরি।’

সম্ভাবনাময় যুব জনগোষ্ঠীকে জাতীয় অর্জনের মূল চালিকাশক্তি বিবেচনা করে, বিশেষ করে টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে তরুণদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক যুবদিবস উপলক্ষে টিআইবি নিম্নলিখিত সুপারিশ প্রস্তাব করেছে :

১. আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে।

২. আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. জাতিসঙ্ঘের সুপারিশ অনুয়ায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

৪. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন- আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৬. সরকারি-বেসরকারি যে সকল চাকরির নিয়োগ, পরীক্ষা, যাচাই বন্ধ রয়েছে অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৭. সকল চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. কোভিডের কারণে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

৯. তরুণ সমাজসহ সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইন ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করতে হবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাজে লাগাতে, টিআইবি, তারুণ্যের শক্তি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন