জরুরী হস্তক্ষেপ চায় কৃষকরা

নাইক্ষ্যংছড়িতে ফড়িং পোকার আক্রমণ মহামারি পর্যায়ে

fec-image

ছৈয়দ হোসেন উপজেলার সদর ওর্য়াডের পূর্ব বিছামারা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। পেশায় কৃষক। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ৫ কানি ধানের ক্ষেত আবাদ করেছেন তিনি। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও নতুন আশায় ধানের ফলন ঘরে তুলতে আঁটসাটঁ কোমর বেঁধে অপেক্ষায় ছিলেন।

কিন্তু এ বছর তার এ আশায় বালি পড়েছে। ক্ষেতের অধিকাংশ গাছই মরে যাচ্ছে। কেন মারা যাচ্ছে তিনি তা বুঝে উঠতেও পারছেন না। তিনি সারা বছর কী খাবেন ৭ সদস্যের সংসার নিয়ে- এ নিয়ে তার দূ:চিন্তার শেষ নেই।

একই এলাকার কৃষক আবদুল মালেক, তিনিও চাষ করেছিলেন ৩ কানি ধান। তার পরিবারের সারা বছরের খোরাক আসে এ ধানের ক্ষেত থেকে। কিন্তু এ ক্ষেত এখন বাদামী ঘাস ফড়িং এর দখলে। সব ক্ষেত এখন গরুর ঘাসের উপযোগী।

এরকম করেই আবদুল মালেক, মোক্তার আহমদ ও ছৈয়দ কাশেমসহ অসংখ্য কৃষক একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাদামী ঘাস ফড়িং পোকার আক্রমণে। তাদের ধান ক্ষেত মরে গিয়ে যেন মরুভূমি হয়েছে।

শনিবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলে এ সব তথ্য তুলে ধরেন উপজেলা সদরের কৃষকরা । তারা আরো বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা আসেন,পরার্মশ দেন, চলে যান। কাজের কাজ কিছুই হয় না। ধান ক্ষেত মরে গিয়ে যেন ঘাস ক্ষেত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কেননা বাদামি ঘাস ফড়িং এর আক্রমণ এ উপজেলায় মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে। তারা জরুরী ভিত্তিতে সব ধরণের ঔষধসহ সহস্রাধিক স্প্রে মেশিন সরবরাহ করতে সরকারের কাছে দাবী জানান।

এ ব্লকের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম রাজিব জানান, তিনি সদরসহ ৩ ওর্য়াডের দায়িত্বে আছেন। চলতি বছর এ তিন ওর্য়াডে ধান চাষ হয়েছে ২৫২ হেক্টর। তিনি প্রতি দিন রুটির করে এ ওয়ার্ডগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন, আর কৃষকদের পরার্মশ দেন।

বাদামি গাছ ফড়িং বিষয়ে তিনি বলেন, এ পোকাটি এ বছর নতুন। তার চাকরী জীবনে এ ধরনের কষ্ট তিনি করেন নি। এ পোকা দমনে সরকারের যাবতীয় নির্দেশ তিনি বাস্তবায়ন করছেন। তারপরেও এ পোকা ভেতরে ভেতরে ধান ক্ষেতের ক্ষতি করে যাচ্ছে। যা নিয়ে তার অফিস উদ্বিগ্ন।

তার মতে, প্রতি জোড়া এ পোকা প্রজনের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহে প্রায় ৩৫ লাখ ছড়িয়ে যায়। যা শুনলে অবাক হওয়ার মতো।

নাইক্ষ্যংছড়ি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস জানান, উপজেলায় ৩৩৩৪ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে এ বছর। যার একটি বড় অংশে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। যা মহামারি পর্যায়ে হলেও তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছেন।

উপজেলার সবর্ত্র যেহেতু এ পোকা ছড়িয়ে পড়েছে সুতরাং এ নিয়ে তার অফিসের সকলেই রাত-দিন বা বন্ধের দিন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন মাঠে-মাঠে।

তিনি আরো বলেন, উর্দ্ধতন মহলের নির্দেশে তারা প্রতিটি এলাকায় সব ধরনের সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে স্কোয়ার্ড গঠন করছেন। এ স্কোয়ার্ড পোকার বিষয়টি জরুরীভাবে ধান ক্ষেত পরির্দশন করে ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি আরো বলেন, তাদের কাছে তো কোন ঔষধ নেই। স্প্রে মেশিনও সীমিত। তবুও তারা এসব নিয়ে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করছেন কৃষকদের কল্যাণে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঘাস ফড়িং পোকার আক্রমণ, ধান চাষ, ধানে পোকার আক্রমণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন