নাজিরারটেকে শুঁটকি সংরক্ষণে হচ্ছে ২টি হিমাগার
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি পল্লী নাজিরারটেকে কোন হিমাগার ছিল না। যে কারণে উৎপাদিত অনেক শুঁটকি নষ্ট হয়ে যেতো। ক্ষতির শিকার হতো ব্যবসায়ীরা। এখন থেকে সেই সংকট কেটে যাবে। নির্মিত হবে ৬৮ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি হিমাগার।
যার জন্য স্বল্প সুদে ও দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধ যোগ্য উদ্যোক্তা পর্যায়ে ৪৭ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে কোস্ট ফাউন্ডেশন।
পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় কোস্ট ফাউন্ডেশনের সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রকল্প (এসইপি) এর মাধ্যমে স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ী আমান উল্লাহকে এই ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে কোস্ট ফাউন্ডেশন এর কলাতলীস্থ অফিসে চেক হস্তান্তর করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মৌলিক কর্মসূচির পরিচালক তারিক সাঈদ হারুন, সহকারী পরিচালক (উদ্যোক্তা উন্নয়ন) বারেকুল ইসলাম চৌধুরী, আঞ্চলিক কর্মসূচি সমন্বয়ক আশেকুল ইসলাম, এসইপি প্রকল্প সমন্বয়কারি তানজিরা খাতুনসহ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মো. আমান উল্লাহ প্রকল্প কর্ম এলাকার একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। তিনি শাহ আমানত ফিশারিজ লিমিটেডের স্বত্বাধীকারী
নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ইতোমধ্যে রোল মডেল।
মো. আমান উল্লাহ জাতীয় মৎস্য পদক ২০২১ অর্জনসহ অন্যান্য অনেক পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন। শুঁটকি খাতে দীর্ঘ ৩০ বছরের সফল ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা ও নিরাপদ শুঁটকি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যাপক বাজার চাহিদার কারণে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ ও পরিচালনায় আগ্রহী হয়েছেন।
এ কারণেই প্রকল্প সহায়তায় আগ্রহী এ উদ্যোক্তাকে কোস্ট ফাউন্ডেশন কোল্ড স্টোরেজ/হিমাগার স্থাপনে ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
উল্লেখ্য যে, উদ্যোক্তা পর্যায়ে কোস্ট ফাউন্ডেশনের দেওয়া উক্ত ঋণের পরিমাণ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে দেয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংকের ঋণ সুবিধা।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের মৌলিক কর্মসূচির পরিচালক তারিক সাঈদ হারুন জানান, নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীতে শুঁটকি সংরক্ষনের জন্য কোন হিমাগার/কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা না থাকায় শুঁটকি সংরক্ষণে উৎপাদনকারীরা শুঁটকি দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি বা বিষ ব্যবহার করে আসছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের ফলে স্থানীয় পর্যায়ের প্রায় ১৫০-২০০ জন উদ্যোক্তা সরাসরি উপকৃত হবেন। যারা স্বল্প খরচে খুব সহজেই তাদের উৎপাদিত শুঁটকি সংরক্ষণ করতে পারবেন। যার ফলে শুঁটকি উৎপাদন এলাকা ও ভোক্তা পর্যায়ে নিশ্চিত হবে বিষমুক্ত নিরাপদ শুঁটকির সরবরাহ। পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ পরবর্তী সময়ে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ঘটবে।
শুঁটকি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যজাত পণ্য। কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরী করা হয়। শুঁটকি তৈরীকালে স্বাভাবিকভাবে এতে কিছু আর্দ্রতা বিদ্যমান থাকে যার মাত্রা ১৮-২০%। আর্দ্রতাযুক্ত এ শুঁটকি দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি পল্লী কক্সবাজারের নাজিরারটেক। এখানেই উৎপাদিত হয় দেশের সর্বোচ্চ পরিমাণ শুঁটকি। উৎপাদন মৌসুমে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হলেও পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের অভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়না। দূরবর্তী স্থান ও অধিক মূল্য পরিশোধ জনিত কারণে অনেক উদ্যোক্তাই শুঁটকি সংরক্ষণে হিমাগার ব্যবহার করেন না। এ কারণে শুধুমাত্র উৎপাদন মৌসুম ছাড়া উদ্যোক্তাগণ সারাবছর ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেননা। যা তাদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়। হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগের ফলে ব্যবসায়ীরা নতুন আশা দেখছে।