কাপ্তাইয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রতিবাদ সভা, দোকানপাট বন্ধ ও কালোব্যাজ ধারন

fec-image

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় দুই গ্রুপে সংঘর্ষে কাপ্তাই ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান (৪০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্পাদকসহ আরও ১০ জন।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১১টায় নতুন বাজারের মা বেকারির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় হত্যা নিয়ে প্রতিবাদ সভা, কালোব্যাজ ধারন, নতুন বাজার দোকানপাট অর্ধ দিবস বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ৫প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আহত উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এম নুরু উদ্দিন সুমন জানান, বেকারির সামনে বসে প্রতিপক্ষ বাদল গ্রুপের সালাউদ্দিন, আমির, নফর আলী আরও কয়েক জন নৌকা ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বিভিন্ন অশালীন মন্তব্য করে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে ওরা অতর্কিত আমাদের হামলা করে। পরে এদের সংখ্যা আরও ভারি হয়ে ৩৫/৪০জনের মত একটি দল বিভন্ন কাঠ, কাঠের বাটাম নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। উভয় গ্রুপ কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকতার আলম, আব্দুল জলিল, আব্দুল মান্নান, উপজেলা যুবলীগ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহামুদ উল্লাহ, ছাত্রলীগ নেতা জহির, সোহেল, আরমান, ইসমাইল, রিয়াদ, পারভেজ, এছাড়া বাদল গ্রুপের সালাউদ্দিন, আলাউদ্দিন, মা বেকারি মালিক মোশারফ ও আমির আহত হয়েছে বলে জানা যায়। কয়েকজন উপজেলা হাসপাতাল ও স্থানী ফার্মেসীতে চিকিৎসা নিয়েছেন। রাতে এ ঘটনা সমাধান দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে কাপ্তাই ৪নং ইউপি ৫নং ওয়ার্ডের দু’বারের জনপ্রিয় ইউপি সদস্য ও রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সদস্য সজিবুর রহমান আসলে সে হামলার স্বীকার হয়। এক পর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটে পড়লে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। এ নিয়ে নতুন বাজার এলাকায় রাতে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কাপ্তাই সেনাজোন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বুধবার (২৭অক্টোবর) কাপ্তাইয়ে নিহত ঘটনাস্থল পরির্দশনে আসেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, এসপি মোদদাছছের হোসেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুুনতাসির জাহানসহ পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।

দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, মোশারফরের মালিকানাধীন মা বেকারিতে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদলের সমর্থকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ার এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সূত্রপাতের ঘটনা ঘটে। মালার প্রস্ততি চলছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার সকাল ১১টায় নতুনবাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী শামসুল ইসলাম আজমীরের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভায় নিহত সজিবুর রহমানের কর্মী সমর্থকরা নিরোপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন।

তবে কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সজিব মেম্বারের সঙ্গে কারো বাকবিতণ্ডা হয়নি। তিনি মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আক্তারের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। ওই মুহূর্তে মাদকের বাহিনী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সজিবের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল বলেন, সজিবসহ ২০ জনের একটি গ্রুপ রাতে মা বেকারিতে এসে আমার সমর্থিত কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। পরে একসময় তাদের দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। মূলত সজিবরা গায়ে পড়েই তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে আমাদের উপর হামলা করেছে বলে জানান।

কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য- অংসুইছাইন চৌধুরী বলেন, পার্বতঞ্চলের সুষ্ঠু রাজনীতিকে এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি অসাধু চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে সজিব হত্যার কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা বলে জানান।

কাপ্তাই নতুনবাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক একরাম হোসেন জানান নিহত ইউপি সদস্য কাপ্তাই নতুনবাজারে একজন ব্যবসায়ী সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় ভোর হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সকল দোকান পাঠ বন্ধ রাখা হয়েছে। এবং নিহত সজিবের লাশ রাঙামাটি হতে ময়না তদন্ত শেষে বিকাল ৫টায় নতুনবাজারে আনন্দমেলা ঘাটে জানাযা শেষে লগগেইট করবস্থানে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দশদিন পূর্বে আওয়ামী লীগের মনোনীত চিৎমরম ইউপি নৌকার প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নেথোয়াই মারমাকে নিজ ঘরে সন্ত্রাসীরা হত্যা পর, পর জনপ্রিয় ইউপি সদস্য সজিবুর কে হত্যা করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন