বীর বাহাদুরের উন্নয়নের ছোয়া

পনেরো বছরে পাল্টে গেছে বান্দরবানে চিত্র

fec-image

পার্বত্য জেলা বান্দরবান বলা হয়ে থাকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নগরী। এই জেলাটিতে ১২টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাসের পাশাপাশি সম্প্রীতি আবদ্ধ রয়েছে সকল ধর্মের মানুষের মাঝে। কিন্তু গত কয়েক দশক আগে জেলাটি নানা জর্জরিত সমস্যার পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। জেলাটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় পিছিয়ে ছিল। এখন সেসব থেকে বের হয়ে পাহাড়ের চিত্র পুরোদমে পাল্টে গেছে।

দুর্গম এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে আনাচে কানাচে ছেয়ে গেছে উন্নয়নের ছোয়া। প্রত্যন্তঞ্চলে পৌঁছে গেছে সোলারের আলো, যাতায়াতসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নত মান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও উন্নয়নের বূপকার টানা সাতবার নির্বাচিত এমপি বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের হাত ধরে ১৫ বছরে বদলে গেছে বান্দরবানের চিত্র।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে সাঙ্গু নদীর উপর ২২০ মিটার ব্রিজ, নাইক্ষ্যংছড়ি বাকঁখালী নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রিজ, ফাসিয়া খালী ব্রিজ, বেঙছড়ি-বিলাইছড়ি ১৭ কিলোমিটার সড়ক, ঈদগড় বাইশারী-দোছড়ি ২৮ কি. মি সড়ক, তুমব্রু ৩৩ কি. মি সড়ক, আলীকদম-দোছড়ি ১১ কি. মি সড়ক, রুমা মুননম পাড়ায় ১৩ কি. মি সড়ক, হলুদিয়া-ভাগ্যকুল ২৭ কি. মি সড়কসহ দৃশ্য মান বহুপ্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এছাড়াও উন্নয়ন বোর্ড অর্থায়নের বান্দরবান সদর উপজেলায় ৯৮৭টি, রোয়াংছড়ি ১৫০, রুমা ১৪৯, থানচি ১৫৮, লামা ২৭৭, আলীকদম ১২৪ এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১৪৪টি প্রকল্প রয়েছে। আছে ১৮ কোটি টাকার ব্যয়ে সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত বেতছড়া ব্রিজ ও ১১ কোটি ব্যয়ে দৃষ্টি নন্দন বান্দরবান টানেল। শুধু তাই নয়, বৌদ্ধ বিহার, মডেল মসজিদ, গীর্জা ও মন্দিরসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সেবাইও উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে।

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দেওয়া তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ অর্থায়নের বান্দরবানের সাত উপজেলায় ২৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১৪ শ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হয়েছে।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জেলার সাত উপজেলায় ১ হাজার ৯৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ৯০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

এছাড়াও গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদ বিভিন্ন দপ্তরে অধীনে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

বিভিন্ন দুর্গম এলাকার বসবাসরত মানুষরা জানিয়েছেন, সমতলের মতো যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। কেউ অসুস্থ হলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জেলার বাইরে নেওয়া যেত না। জেলার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগত। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতেও ভোগান্তি পেতে হতো। কিন্তু এখন তার পরিবর্তন এসেেছে । উন্নয়নের ফলে একদিনে জেলার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া যায়। সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করতে পারে উৎপাদিত নতুন ফসল। এখন অসুস্থ ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামসহ রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া যায় অল্প সময়ে। আর এসব সম্ভব হয়েছে জেলাব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে।

জেলার সাত উপজেলা ও ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, পাহাড়ের দৃশ্যপট আগে থেকে অনেক বদলে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হওয়ার ফলে খুব সহজেই সব স্থানে পৌঁছানো যাচ্ছে। বদলে গেছে সমতলের মতো এখানকার পাহাড়ি অঞ্চলের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও। তবে সরকারের এসব প্রকল্পের সুফল স্থানীয়রা এখন ভোগ করতে পারলেও রক্ষণাবেক্ষণ করাটা জরুরি বলে মনে করছেন জনপ্রতিনিধিরা।

বান্দরবান পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, স্থানীয় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী জেলায় বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তথা স্থানীয় সাংসদ তৃণমূল থেকে মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে এনেছেন। সেখান থেকে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সর্বস্থরের মানুষ যাতে উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করতে পারে সেভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বীর বাহাদুর
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন