পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়ার আশংকা

সাজ্জাদ আলম খান
487274_356582424455553_1631635007_nপার্বত্য তিন জেলায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এই তিন জেলায় ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে সুদের হার নতুন করে ঠিক করে দেয়ায় এই জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব। ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর জোট এ ব্যাপারে সরকারের কাছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানিয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় এনজিওগুলো পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রায় তিন দশক ধরে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই তিন জেলাতে ক্ষুদ্রঋণের সুদ হার ১২ শতাংশ নেয়ার নির্দেশনার কথা জানিয়ে দিয়েছে। তবে সরকারের মাইক্রোকেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) নির্ধারিত সুদের সর্বাধিক হার হচ্ছে ২৭ শতাংশ। যদিও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো সুদের সর্বাধিক হার বেঁধে দেয়ার বিরোধিতা করে আসছে। এ সংস্থাগুলো মনে করে, ২৭ শতাংশ হারে সুদ নিয়ে বিল-হাওড়, পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এর ফলে হত দরিদ্রদের মাঝে অনেক সংস্থা ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারাচ্ছে।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠান সিডিএফ’-এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ আবদুল আউয়াল জানান, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে এমআরএ। সেখানে সুদের হার ২৭ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয়া আছে। আর পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এখন ১২ শতাংশ সুদের হার বেঁধে দিতে উদ্যোগী হয়েছে। এ অবস্থায় পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। তিনি জানান, এ ব্যাপারে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এমআরএকে জানানো হয়েছে। জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় খাত থেকে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী এনজিও। অনুদানের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নূন্যতম এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় সবচেয়ে বেশি। ক্ষুদ্রঋণ খাতে বিদেশী অনুদানের পরিমাণ শতকরা ৫ ভাগ। সরকারি সংস্থা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এখাতে শতকরা ১৮ ভাগ অর্থ যোগান দেয়। পিকেএসএফ ঋণ দেয় ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও প্রায় পিকেএসএফের সমপর্যায়ে অর্থের জোগান দিয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেয়া তহবিলের খরচ পড়ে যায় প্রায় ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। মূল জোগানদাররা হচ্ছে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী, তারা প্রায় ৩৩ ভাগ অর্থের জোগান দিয়ে থাকে। বাকি অর্থের জোগান আসে ঋণের সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে। জানা গেছে, গত এক দশকে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী সংস্থা ব্যবস্থাপনা ব্যয়, তহবিল পরিচালনা ব্যয় বেড়ে গেছে বেশ কয়েকগুণ। কিন্তু বিপরীতে সুদের হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো হতদরিদ্রদের মাঝে ঋণ বিতরণে বেশ অনাগ্রহী।
সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পার্বত্য তিন জেলায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি পাঠাচ্ছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ১২ শতাংশের বেশি সুদ বা সার্ভিস চার্জ আদায় করা হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারিকৃত পরিপত্রের পরিপন্থী। ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি স্মারকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এনজিওদের ঋণ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রদেয় সুদের হার বা সার্ভিস চার্জ বা অন্য কোন নামেই অভিহিত হোক না কেন, তা কোনক্রমেই ১২%-এর অধিক হতে পারবে না।’ সেখানে একই এলাকায় একাধিক এনজিও একসঙ্গে একই জনগোষ্ঠীর মাঝে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

courtesy by the daily jugantar, 20-4-2013

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন