পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে ৫০ গেরিলা দেশে ফেরার অপেক্ষায়
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
নাগা গেরিলা নেতা কর্ণেল অপুম মিজোরাম দিয়ে ভারতের নাগাল্যান্ডে যাওয়ার সম্ভাব্য ট্রানজিট সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ও মিজোরাম কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।
পত্রিকার অন লাইন সংস্করণে বলা হয়, কর্ণেল অপুম পাবর্ত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী কোন গহীন জঙ্গলে সহকর্মী ক্যাডারদের নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। মঙ্গলবার তিনি উভয় পক্ষের কাছে দেশে ফেরার নিমিত্ত ট্রানজিট চেয়েছেন। সোমবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নাগা গেরিলাদের সঙ্গে নয়াদিল্লি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যে শান্তি চুক্তি হয় তাতে তিন দশকের রক্তাক্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটে। সৃষ্টি হয় ন্যাশনাল সোসালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড গেরিলা সংগঠনের ক্যাডারদের অস্ত্র সমর্পন করে শান্তির পথে ফিরে আসার সম্ভাবনার।
এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন এবং এখনো রয়েছেন আইজাক চিশি সাউ ও থুলাংগেনাগ মুইভাহ। সংগঠনের নামের শেষাংশে আইজাক থেকে ‘আই’ এবং মুইভাহ থেকে ‘এম’ নিয়ে একটু বিস্তৃত নাম হয়েছে এনএসসিএন(আইএম)। যে সংগঠনটির ক্যাডাররা দিল্লির অধীনতা ছিন্ন করে নিজেদের স্বাধীন করার স্বপ্নে দুই দশক আগে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন মাঝ পথে হিংসা থেকে শান্তির পথে পরিচালিত হতে শুরু হয় এবং নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাজপায়ী সরকারের শান্তি আলোচনার পথ ধরে অবশেষে শান্তি চুক্তিতে উপনীত হয়। চুক্তি অনুযায়ী আর ক্লেদাক্ত নয়, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে সকল ক্ষয়-ক্ষতি ও বৈষম্যের অবসান ঘটনানো হবে এখন উভয় পক্ষের প্রধান কাজ।
একটি সূত্র জানায়, নারী ও তরুন যোদ্ধা নিয়ে মোট ৫০ জন গেরিলা নাগালান্ডে যাওয়ার জন্য মিজোরাম সীমান্তে অপেক্ষা করছে। এদিকে মিজোরাম ন্যাশনাল ফ্রন্ট যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তির পথে ফিরে আসার জন্য নাগা গেরিলা নেতা আইজাক চিশি সাউ ও থুলাংগেনাগ মুইভাহকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গেরিলারা মিজোরাম হয়ে আসামের সীমান্ত ঘেঁষে নাগাল্যান্ডে নিজেদের বাসভূমে ফিরে যেতে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ টি রাজ্যে কোন না কোনভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। যা থামাতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে প্রয়াস কোন কাজে লাগছে না বলে অনুভূত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করে তোলার পরিকল্পনায় অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া এসব শান্তি বাহিনীকে ভারত শুধু নিয়ন্ত্রণই করেনা, আশ্রয়-প্রশ্রয়ও দিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিচ্ছিন্নতা বাদীদের খাবার সরবরাহও করা হয় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী এখনও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ত্রিপুরা এলাকায় বাংলাদেশ-ত্রিপুরা দুর্গম সীমান্ত পরিদর্শনে যেয়ে ভয়াবহ তথ্য জানতে পারে। পরবর্তীতে সেখান থেকে ফিরে বিষয়টি লিখিতভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল। ওই লিখিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল-বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা শূন্য রেখা থেকে একটু ভেতরেই শত শত শান্তি বাহিনী অবস্থান করছে।
১৯৮৯ সালের ১১ জুন নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রতিবেদক সঞ্জয় হাজারিকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘এক দশকের বেশী সময় ধরে ভারত গোপনে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সীমান্তের উপজাতীয় বিদ্রোহীদের বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ চালিয়ে যাবার জন্য সহায়তা করছে।
একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই সহায়তার কথা নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন, অনির্ধারিতসংখ্যক কিছু বিদ্রোহী যোদ্ধা ভারতীয় প্যারামিলিটারী বাহিনীর সাথেই সীমান্তের কাছে অবস্থান করে। বিস্তারিত কিছু ব্যাখ্যা না দিয়ে সুত্র আরো জানায়, সরকার তাদেরকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্রোহীদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী যারা বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের চাকমা ও অন্যান্য উপজাতীয়দের সাথে মিশে থাকে।