পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে ৪০০ সেনা ও ৩০ হাজার বাঙালি নিহত


১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৩০ হাজার বাঙালি ও ৪০০ সেনাসদস্য হত্যার শিকার হয়েছেন। যার একটিরও বিচার হয়নি। বাংলাদেশ পুলিশ ও সেনাবাহিনী সূত্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক।
স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরিসংখ্যান তুলে ধরে পত্রিটির খবরে বলা হয়েছে, বাঙালিদের বিরুদ্ধে চালানো উল্লেখযোগ্য গণহত্যার মধ্যে রয়েছে- ১৯৮৪ সালের ৩০ মে রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়ায় ৪৩৭ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা, ১৯৮৬ সালের ২২ ডিসেম্বর রামগড়ে ৩৩ জনকে হত্যা এবং শতাধিক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর লংগদুর পাকুয়াখালীতে ৩৫ জন নিরীহ বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা। একই ভাবে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত মাটিরাঙ্গা, রামগড়, বান্দরবান ও পানছড়ি এলাকায় শান্তিবাহিনী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।
এসব সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি করে সরকার। কিন্তু এরপরও পার্বত্যাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাস থামছে না। যেমন ২০০৩ সালে মহালছড়িতে সহিংসতায় ৭০০’র বেশি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০১০ সালে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং বেশ কয়েকজন নিহত হন। ২০১১ সালের ২১ মে রাঙামাটির মিদিঙাছড়িতে ইউপিডিএফের নেতাকর্মীদের ওপর জেএসএস (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে চারজনকে হত্যা করে।
পার্বত্যাঞ্চলের ৩ জেলায় প্রায় ১৪ লাখ মানুষ বাস করে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ বাঙালি এবং ৪১ শতাংশ পাহাড়ি।
স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা জানান, হাজার হাজার নিরীহ মানুষের হত্যার বিচারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উল্টো সন্তু লারমার মতো যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের ক্ষমতা দিয়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এটি স্বাধীন দেশের জন্য লজ্জার বিষয়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, দেশের বিভিন্ন ঘটনায় মুসলিম ও বাঙালিরা আক্রান্ত হলেও পশ্চিমা ও ভারতপন্থি বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থি মহল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তারা পাহাড়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড, অপহরণ এবং গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী ঘটনায় কোনোদিন স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, অসাম্প্রদায়িক এবং মানবাধিকারের মুখোশ পরে এই মহল পাহাড়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে। এসব ঘটনায় তাদের নীরবতার কারণে জনগণ বিভ্রান্ত এবং প্রতিরোধহীন হয়েছে। যেখানে দেশের সেনাসদস্য এবং সাধারণ বাঙালিরা নিহত হয়েছেন, সেখানে তারা কোনো প্রতিবাদ বা বিচার দাবিতে মুখ খোলেনি। উল্টো কিছু মহল সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেওয়ার মতো বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। এই দ্বৈত চরিত্রই দেশের ক্ষতি করছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশের গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী মহল যদি এই নীরবতা অব্যাহত রাখে, তবে তা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও নিরাপত্তাকে নয়; সমগ্র জাতির নৈতিক স্থিতি ও আইনশৃঙ্খলাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এজন্য সরকারের উচিত দ্রুত পাহাড়ে সেনা অভিযান চালানোর পাশাপাশি ক্যাম্প বাড়ানো।
তথ্যসূত্র :আমার দেশ অনলাইন, ৬ অক্টোবর ২০২৫