পাহাড়ের সহিংস ঘটনাগুলোর সঙ্গে কারা জড়িত?

অপু দত্ত, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন, অপহরণ, গোলাগুলি, চাদাঁবাজি। আর এ সবের কারণে আতংকে থাকতে হয় এ জনপদের মানুষগুলোকে। রাজনৈতি দলগুলোর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সহিংস ঘটনার জন্য উত্তেজনা, আতংক, উদ্বেগতো লেগেই আছে।

তবে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার দায় নিতে চায় না কেউই। তারা একে অপরের ওপর ঘটনার দায় চাপায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মূলত তিনটি সংগঠনের তৎপরতা বেশি লক্ষ করা যায়। এগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস (সন্তু গ্রুপ), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস (এমএন লারমা গ্রুপ) এবং ইউনাইটেড পিপিলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

সবশেষ গত বুধবার (২২ মে) মানিকছড়িতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় ২শ ২৬ রাউন্ড গুলির খোসা ও ১৮ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।

এ ঘটনাটিতে নিজেদের জড়িত থাকার কথা যেমন আঞ্চলিক দলগুলো স্বীকার করেনি, তেমনি অতীতের সহিংস ঘটনাগুলোতে নিজেদের জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার  করেছে পাহাড়ি দলগুলো।

এ সংগঠনগুলো প্রতিবার পাহাড়ে একের পর এক ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনা গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে একে অন্যকে দোষারোপ করে থাকে। ইউপিডিএফের কোনো কর্মী সমর্থক হামলার স্বীকার হলে দায়ী হয় জেএসএস (সন্তু গ্রুপ)। আবার জেএসএস সন্তু গ্রুপের কোনো কর্মী সমর্থক মারা গেলে তার দায় পড়ে ইউপিডিএফের ঘাড়ে। অন্যদিকে জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা হলে তার দায়ও পড়ে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন সংগঠনের ওপরে।

প্রতিটি সংগঠন পাহড়ের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাত বন্ধসহ নানা শান্তির কথা বললেও তা কতটুকু সত্য আর কতটুকুই বা বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা স্থানীয়রা।

ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা প্রদীপন খীস বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে চলা প্রতিটি সহিংস ঘটনার সঙ্গে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস জড়িত। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নানাভাবে সহিংস ঘটনা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মূলের মিশনে নেমেছে। তারা আমাদের ২৪৬ জনেরও বেশি কর্মী সমর্থককে হত্যা করেছে। এবং এক হাজারের অধিক অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।”

নানা সময় জেএসএসের (সন্তু লারমা) নেতাকর্মীদের কারা হত্যা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সন্তু লারমার একনায়তন্ত্র, স্বৈরাচারী মনোভাব এবং তার নেতাকর্মীদের নির্যাতনের কারণে জুম্ম জনগণ আজ অস্থির। তারা প্রতিরোধ করে থাকতে পারে। তাছাড়া জেএসএসের বিদ্রোহী আরেকটি দলতো আছেই। তারাও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে থাকতে পারে।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি সুধাকর চাকমা বলেন, “সন্তু লারমা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না। সব জায়গায় চুক্তি বাস্তবায়নের জোরদাবি জানালেও আসলে তা মিথ্যা। যখনই আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই বলে নতুন সংগঠন রূপ দিয়ে গণতন্ত্রের চর্চায় নেমেছি, ঠিক তখন তিনি অন্য সব বিরোধী দলকে হত্যা মিশনে নেমেছে। আর সেই মিশনে নিহত হচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীরা। তারা ২০১০ সাল থেকে আমাদের ৭০ জনেরও বেশি কর্মী সমর্থককে হত্যা করেছে।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (সন্তু গ্রুপ) সহ সভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, “যদি দুই পক্ষের কাছে অস্ত্র থাকে তাহলে গোলাগুলি হবেই। আর গোলাগুলি হলেই নিহত বা আহত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এমন ঘটনায় নিজেদের লোক নিহত হলে অন্যদলকে দায়ী করা স্বাভাবিক বিষয়। আর কে আমাদের দায়ী করলো এতে আমাদের কিছুই যায় আসেনা।”

তিনি আরও বলেন, “আর পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিটি ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ দায়ী। তারা কখনো রাজনৈতিক দল হতে পারেনা। তারা হলো চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা যতদিন থাকবে ততদিন পাহাড়ে শান্তি আসবে না।”

তবে স্থানীয়রা মনে করেন তারা স্বীকার করুক আর না করুক প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো অবশ্যই জড়িত। তাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অধিপত্য বিস্তার এবং সহিংস মনোভাব থাকলে পাহাড়ে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা হবেনা। শান্তি যদি আনতেই হয় তাহলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করতে হবে। বন্ধ করতে হবে সহিংস সংঘাত।

সৌজন্যে- বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন