Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পাহাড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব ॥ গুম খুন ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনা ॥ কঠোর হতে পারছে না প্রশাসন

Untitled-4-copy

মিয়া হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে :

পাবর্ত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার পাহাড়েই চলছে সন্ত্রাসের রাজত্ব। গুম, খুন ও ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সংগঠনের নামে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের ভয়ংকর এ সন্ত্রাস দমনে সরকার কঠোর হতে পারছে না। প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে রুটিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জনমনে ভয় ও আতঙ্ক চরম আকার ধারণ করছে। যে কোন সময় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় যে কারো প্রাণ চলে যেতে পারে। চাঁদাবাজিও চলছে বেপরোয়াভাবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে পাবর্ত্য এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। অশান্ত পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত হয় ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’। সশস্ত্র সংগঠন জনসংহতি সমিতি জেএসএস’র (সন্তু লারমা) সঙ্গে করা এ চুক্তি এরই মধ্যে পার করেছে সাড়ে ১৮ বছর। পূরণ করা হয়েছে চুক্তির বেশিরভাগ শর্ত।

কিন্তু দৃশ্যত এখনও বন্ধ হয়নি অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্রগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। প্রতিনিয়তই উপজাতি সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ কোন না কোন অপরাধের শিকার হচ্ছেন নিরীহ বাঙালীরা। এমনকি এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নিরীহ পাহাড়ীরাও। এ অবস্থার উত্তরণে পাহাড়ে অতি শিগগিরই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে জানা যায়, গত ১৩ জুন বোয়াংছড়ি উপজেলায় এক বাঙালী গৃহবধূকে প্রকাশ্যে দিবালোকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে এক উপজাতি সন্ত্রাসী। একই দিন অস্ত্রের মুখে অপহরণ হয় বান্দরবানের আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য মংপু মারমা। এ ঘটনায় জেএসএসে’র ৩৬ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পরিবার। এখনো তার কোন হদিস পায়নি তার পরিবার। পাবর্ত্য এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা অপহৃত হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাকে এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।

এ দিকে গত ৩০ মে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে জেএসএস কর্মীরা মুকুল কান্তি চাকমা নামে অবসর প্রাপ্ত এক সেনা সার্জেন্টকে ডেকে নেওয়ার পর আজও নিখোঁজ রয়েছে সে। গত ১৫ এপ্রিল বান্দরবানের লামায় উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় তিন বাঙালী গরু ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় তিন ত্রিপুরা সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়।

এরও আগে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর রাঙামাটির সাজেকে এক সেনা কর্মকর্তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তার গাড়িতে আগুন দেয় উপজাতি সন্ত্রাসীরা। ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৫ জেএসএস (সংস্কার) সন্ত্রাসী। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র। একই বছরের ২৬ জুলাই রাঙামাটিতে জেএসএস-ইউপিডিএফ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৩ জন এবং ২৬ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে জেএসএস-ইউপিডিএফ’র আরেকটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এর বাইরে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী ভারী আগ্নেয়াস্ত্র।

শান্তি চুক্তির সময় শান্তি বাহিনীর অস্ত্রের আত্মসমর্পণ  যেমন প্রমাণ করেছিল তাদের কাছে আধুনিক  অস্ত্রের কোন অভাব ছিল না। ঠিক সম্প্রতি এসব ঘটনা পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতিকে নতুন করে স্পষ্ট করে দিয়েছে।

পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসী ও জঙ্গী গ্রেফতারের নামে সারাদেশে অভিযানের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন থানায় শত শত মামলা দায়ের করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের কোন অভিযান নেই। নেই থানায় মামলাও। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুম হলেও পুলিশের বিশেষ কোন অভিযান নেই। অপরাধ দমনে নেই পুলিশের তৎপরতা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সেখানে পুলিশ কঠোর হতে পারছে না।

রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা বিলাইছড়ি। সেখানকার থানায় গত ৬ মাসে মাত্র তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মারামারি আর একটি চাকমা মেয়েকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলা। অথচ ওই অঞ্চলে মাস তিনেক আগে বিলাইছড়ি থানার কাছাকাছি এক জঙ্গলে নাম পরিচয়হীন এক হতভাগ্যের লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে না হয়েছে মামলা, না পাওয়া গেছে ওই লাশের পরিচয়।

ওই থানার রেকর্ড অনুযায়ী ২০১৩ সালে মামলা হয়েছে ৫টি। ২০১৪ সালে মামলা হয়েছে ৮টি, ২০১৫ সালে ৬টি। আর চলতি বছর ২৩ জুন পর্যন্ত ৩টি মামলা হয়েছে। অথচ স্থানীয় বাসিন্দারা (পাহাড়ী কিংবা বাঙালী) বলেছেন, এ অঞ্চলে কৃষিকাজ, ব্যবসা, দোকান বা যে কোনো ধরনের লাভজনক কাজের কমিশন দিতে হয় জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সন্ত্রাসীদের। অন্যথায় ফোন করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, বাজারে কোনো কৃষিপণ্য বিক্রি করতে নিলে সেখান থেকেও কমিশন দিতে হয় জেএসএসকে।

অথচ রাঙামাটির বিলাইছড়ি থানার ওসি মো: মঞ্জুরুল আলম মোল্লা বলেন, পাহাড়ী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের খবর আসে। কিন্তু প্রসাশনের কাছে অতি গোপনেও মুখ খুলতে চায় না কেউ। চলতি বছরে পুরো থানায় মাত্র তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপরাধ ঘটা সত্ত্বেও মামলা না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, এখানকার বাস্তবতাটা ভিন্ন।

রাঙামাটির বিলাইছড়ি এলাকার কারবারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অংচাখই কারবারি বলেন, এলাকার মানুষকে সব সময় প্রাণের ভয় নিয়ে দিন কাটাতে হয়। ইউপিডিএফ আর জেএসএসের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষ খুন করছে। আর প্রতিটি বাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করছে। সাধারণ মানুষ এসব সন্ত্রাসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তবু মুখ খুলতে পারছে না। ভয়ে থানায় অভিযোগও করতে পারছে না। কারণ থানায় অভিযোগ করলে সন্ত্রাসীরা হামলা করবে। তখন পুলিশও নিরাপত্তা পারবে না।

ঠিক একইভাবে সন্ত্রাসীদের এ ধরনের ভয়ংকর ভয়ের কথা উল্লেখ করেছেন বাঘাইহাট রেঞ্জ বন কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম সাহিদ। তিনি বলেন, এ এলাকায় বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও আরেকটি প্রশাসন আছে। তাদেরকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। আমাদের অস্ত্র নেই। আর অস্ত্র দিলেও তাদের সাথে আমরা যুদ্ধ করতে পারবো না। আর পুলিশ তো আমাদের কাছে সব সময় বসে থাকবে না। আমরা যদি তাদের উপেক্ষা করি তাহলে আমাদের অপহৃত হওয়ার ভয় আছে। এর আগে এ এলাকার রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ তিনজন কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পুরো পার্বত্য অঞ্চলে ‘রাষ্ট্রীয় স্টাইলে’ চাঁদা আদায় ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে জেএসএস’র পাঁচ হাজার সশস্ত্র প্রশিক্ষিত কর্মী। সেনাবাহিনী স্টাইলে মেজর, কর্নেল ইত্যাদি পদবীও রয়েছে তাদের এবং প্রত্যেকেই বেতনভুক্ত। সামান্য ঝাড়ের বাঁশ ও কলা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয় তাদের।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক দশমাংশ ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্রগ্রাম (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান)। পাহাড়-পর্বত, নদীনালা ও গাছপালা বেষ্টিত মনোরম দৃশ্যের এ ভূমিতে রয়েছে বসবাসরত বাঙালী ও ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু আজ উপজাতি নেতৃত্বের বিচ্ছিন্নতাবাদি কর্মকাণ্ডে তা হুমকির মুখে বলে অভিযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। তারা বলছেন, জেএসএস-ইউপিডিএফ এর মতো সশস্ত্র সংগঠনগুলোর খুন, গুম, চাঁদাবাজি অপহরণ থেকে রেহায় পাচ্ছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও।

কিছু দিন পর পর বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত ভুক্তভোগী পাহাড়ী-বাঙালী নির্বিশেষে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে অব্যাহত চাঁদাবাজি, খুন, গুম, অপহরণের প্রতিবাদ জানান।

এসব বিষয়ে রাঙামাটি শহরের নিজ বাসভবনে ঢাকা থেকে যাওয়া একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা হয় পার্বত্য চট্রগ্রামের একমাত্র মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর। আওয়ামী লীগ এমপি বলেন, উপজাতী নেতৃবৃন্দ সবসময়ই সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। প্রথমত ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের সময় ও পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার সময় তারা মূল স্রোতের বিরোধিতা করেছে। এখন তারা বাংলাদেশ সরকারের বিরোধিতা করছে। অর্থাৎ মূল স্রোতের বিপরীতে থাকাই তাদের স্বভাবগত অভ্যাস বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি চুক্তি করে পাহাড়ের অনেক উন্নয়ন করেছেন। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রয়োজন শান্তি-শৃঙ্খলা। কিন্তু একটি সশস্ত্র গ্রুপ চাঁদাবাজি, খুন, গুম. অপহরণ করে পার্বত্য চট্রগ্রামকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য জেএসএসের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে জেএসএসের মুখপাত্র  কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার বক্তব্য হলো, জেএসএসের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বান্দরবানে জেএসএসের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা নেতাদের যেভাবে গণহারে মামলা দেয়া হয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরাও চাই যারা এ অপহরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক।

সাবেক ইউপি সদস্য অপহরণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথে যেভাবে সেনা-পুলিশ তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে এবং মামলা করা হয়েছে তাতে করে মনে হয় ঘটনাটি আগে থেকে পরিকল্পিত। তবে এ অপহরণের সাথে যারাই জড়িত হোক তা ভালো হয়নি বলে মন্তব্য করেন সজীব চাকমা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন