পেকুয়ায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ভুয়া সনদে চাকরি : ফেঁসে গেলেন মডেল কেয়ারটেকার

পেকুয়া প্রতিনিধি:

পেকুয়ায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরি করার অভিযোগে ফেঁসে গেলেন মডেল কেয়ারটেকার জামাল হোছাইন। সে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়্যাকাটা এলাকার মৃত ছিদ্দিক আহমদের পুত্র। অন্যদিকে জাল সনদ দিয়ে চাকরি করায় গত ২৫ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক মৌ: মুহাম্মদ হাসান এর ভাই সদরের ভোলাইয়্যা ঘোনা এলাকার আবদুল হকের পুত্র জিয়াউর রহমান।

জেলা প্রশাসক অভিযোগটি পেকুয়া সমাজসেবা কার্যালয়কে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিলে দীর্ঘ তদন্তের পর জাল সনদের সত্যতা পাওয়ায় তা লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও আইসিটি শাখায় প্রেরণ করেন। আইসিটি শাখা গত ৪জুন তা উপ-সহকারী পরিচালক কক্সবাজারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পর অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু ৬ মাস পার হলেও অদৃশ্য শক্তির গুণে উপ-সহকারী পরিচালক ও সহকারী পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন কক্সবাজার কোন ধরণের ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাল সনদে চাকরি করা জামাল হোছাইন বহাল তবিয়তে রয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ ২০১৫ ইংরেজি ইসলামী ফাউন্ডেশন পেকুয়া শাখায় মডেল কেয়ারটেকার পদে পরীক্ষা দেন জামাল হোছাইন। সেখানে তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের (কামিল) একটি সনদ সংযুক্ত করেন। তার কামিল পাশের কোন সনদ না থাকার বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের অবগত হলে তখন বস্তুনিষ্ট সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরও কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নিয়ে মডেল কেয়ারটেকার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক জাল সনদ পত্র দিয়ে পেকুয়া মডেল কেয়ারটেকার পদে নিয়োগ দান বাতিল করে পুন: নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ এনে জিয়াউর রহমান জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করলে তা পেকুয়া সমাজসেবা কার্যালয়কে তদন্তপূর্বক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করেন। সে সাথে সংযুক্তি হিসাবে আল ইসলামিয়া আল পটিয়া শিক্ষা শাখার একটি (যাহার জন্য প্রযোজ্য) প্রত্যায়ন পত্র দেয়। নিয়োগে তার দেওয়া তথ্যমতে ১৯৯৪ সালে সে ওই মাদ্রাসা থেকে দাওয়ারে হাদিস (কামিল) পাশ করেনি বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পেকুয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের তদন্তে জামাল হোছাইন লিখিত আকারে ১৯৯১ সালে দাখিল ও ১৯৯৫ সালে দাখিল পাশ করে বলে জানায়। গত ৭ মে পেকুয়া সমাজসেবা কার্যালয় উসসেকা/পেকুয়া/কক্স/৬৬/১৫ইং স্বারক মূলে তদন্তে সনদটি ভুয়া বলে উল্লেখ করে অগ্রগতি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও আইসিটি শাখায় প্রেরণ করেন। শিক্ষা ও আইসিটি শাখা তা প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।

আরো জানা গেছে, দীর্ঘ ৬ মাস অতিবাহিত হলেও উপ-সহাকারী পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন কক্সবাজার তার কোন সুরহা না করে ভুয়া সনদদারী জামাল হোছাইনকে মডেল কেয়ারটেকার হিসাবে বহাল রেখেছেন। ওই জামাল হোছাইন ক্ষিপ্ত হয়ে তার অভিযোগের বাদী জিয়াউর রহমানের ভাই পেকুয়া উপজেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক সদরের মগকাটা হেদায়তুল উলুম সহজ কোরান শিক্ষা (কেন্দ্র কোড২৭৪) কেন্দ্রের শিক্ষক মৌ: মুহাম্মদ হাসান এর কেন্দ্রটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এমনকি ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অদ্যবধি চাকরিতে রত থাকলেও গত মার্চ থেকে বেতন বন্ধ করে দেয়।

অভিযোগের বাদী জিয়াউর রহমান জানান, উপ-সহকারী পরিচালক তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করায় তাকে চাকরিতে বহাল রেখেছেন। না হলে তদন্তে সব কিছু জাল প্রমাণ হওয়ার পরও কেন সে বহাল থাকে। আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষেও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জামাল হোছাইন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন সে সময় তিনি দাওয়ারে হাদিসের (কামিল) সনদ দেননি। কিছু কু-চক্রিমহল তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা আলিম। শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর পুরাতন লোক হওয়ায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন উপ-সহকারী পরিচালক কক্সবাজার জানান, তদন্ত রিপোর্ট ও জেলা প্রশাসকের শিক্ষা ও আইসিটি শাখার প্রতিবেদনও আমরা পেয়েছি। এর অগ্রগতি রিপোর্ট আমরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করেছি। আপনারা সেখানেই যোগাযোগ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন