প্রদীপের ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ নির্যাতিতদের

fec-image

রোকেয়া আক্তার (২০)। টেকনাফ সদরের ৮নং ওয়ার্ডের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর স্বামী মোহাম্মদ হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় প্রদীপ বাহিনী। দাবি করে টাকা। ঘরেই তো অভাব। অসহায় মানুষটি কোত্থেকে টাকা দিবে? প্রদীপের দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ২৯ অক্টোবর ক্রসফায়ারে তাকে হত্যা করা হয়।

গেল দুইটি বছরের একেকটি রাত যেন একেকটি বছর। কাটছে যন্ত্রণার সময়। ভরনপোষনের টাকা নেই। পিতৃহীন ৬ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাকিম মাঝে চিৎকার দিয়ে ওঠে। খোঁজে ফেরে বাবাকে। না, কোথাও তো নেই বাবা মোহাম্মদ হোসাইন। ঘাতক প্রদীপের হাতে দুই বছর আগেই তো মারা গেছে। সান্ত্বনার কোন ভাষা নেই তার।

সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন স্বামীহারা রোকেয়া আক্তার। প্রদীপের বিচার চেয়ে কক্সবাজার অদালত চত্তরে মানববন্ধনে তিনি বক্তব্য দেন।

রোকেয়া আক্তার বলেন, ভাড়া বাসায় থাকতাম। এখন বাপের বাড়িতে থাকি। খুব কষ্টে আছি। অবোঝ সন্তান নিয়ে কঠিন দিনাতিপাত করছি। সন্তানকে স্থানীয় একটি নূরানি মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দিলেও খরচ চালাতে পারছি না। ঠিক মতো খাবার জুটেনা দু’মুঠো। তিনি বলেন, একজন প্রদীপ আমার সাজানো সংসার তছনছ করে দিল। তার বিচার চাই। আমার স্বামীকে যেভাবে হত্যা করেছে তাকে সেভাবে মারা হোক।

সমিরা নামের আরেক ভুক্তভোগী তুলে ধরেন দুঃখ যন্ত্রণার কথা। তার বাড়ি টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়া। তিনি বলেন, আমার স্বামী মোহাম্মদ বেলালকে দুই বছর আগে ২৭ রোজার দিন তারাবিহ নামাজ থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। কোন মামলা নেই। অনেক দেনদরবার করেও টাকার অংক পূরণ করতে না পারায় স্বামীকে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পরে ৪,২০০ ইয়াবা, ২ গুলি উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে চালান করে দেয়। স্বামী মোহাম্মদ বেলাল এখনো জেলে। ১ মেয়ে ৩ ছেলের সংসারে চারিদিকে অন্ধকার। প্রদীপসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি।

টেকনাফ সদরের ৮নং ওয়ার্ডের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই নুর মোহাম্মদকে ২০১৯ সালে ১৯ মার্চ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ২৪ লাখ দাবি করে প্রদীপ ও এসআই সঞ্জিত দত্ত। স্বর্ণ, জমানো লবন বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা দিই। বাকি ৩৫ লাখ না দেয়ায় ২০ মার্চ সারারাত শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরে ২১ মার্চ রাতে স্ত্রী লায়লা বেগমসহ গাড়িতে করে রাজারছরায় নিয়ে যায়। রাত ৩টার দিকে স্ত্রীর সামনে গুলি করে হত্যা করে। দৃশ্য দেখে আর্তচিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে যায় স্ত্রী। পরে তাকে পুলিশের গাড়িতে করে নাজির পাড়া রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আসে।

তিনি বলেন, পোস্ট মর্টেম করে আমার ভাইয়ের লাশ বুঝিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু জানাজার মাইকিং করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দিনে জানাজা পড়াতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে রাতে জানাজা ও দাফন করতে হয়।

এরকম শতাধিক ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার পৌরভবনের সামনে জমায়েত হয়। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। ওই সময় প্রদীপসহ অন্যান্য আসামিদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আদালতে তোলা হয়। মানববন্ধনে সবাই দাবি করে, প্রদীপের ফাঁসি দিতে হবে। না হলে ভুক্তভোগীদের আত্মা শান্তি পাবে না।

নির্যাতিতদের পক্ষে বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের জেলা সভাপতি নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।

তিনি বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ পুলিশ বাহিনীর কুলাঙ্গার। সে মাদক নির্মূলের নামে মাদক ব্যবসা করেছে। মানুষ খুনের নেশায় মেতেছে। বিরাট মিশন নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে ঢুকেছিল। মেজর (অব.) সিনহার মতো দেশের সম্পদকে শেষ করে দিল। শুধু একবার নয়, প্রদীপের শতবার ফাঁসি হতে হবে। বিচার বহির্ভুতভাবে ২০৪ জনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে ঠিক সেভাবে প্রদীপ ও তার অনুসারীদের শাস্তি হওয়া চাই।

আদালতে প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষ নেওয়া আইনজীবী রানা দাশ গুপ্তকে প্রশ্ন ছুড়েন নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। তিনি বলেন, কত লক্ষ-কোটি টাকার বিনিময়ে খুনি প্রদীপের পক্ষ নিয়েছেন? একজন চিহ্নিত খুনির পক্ষ নিয়ে নিজেও অপরাধী হয়ে গেলেন না তো!

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন