বন ও শঙ্খ : শাসন করছে আরাকান আর্মি

হোসাইন সোহেল

হোসেন সোহেল
এরপর ওই এলাকায় এই বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটিকে রুখতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ দল অভিযান শুরু করেছে। যার নামকরণ করা হয়েছে অপারেশন ডমিনেশন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাদের দমন না করা পর্যন্ত ওই এলাকায় অভিযান চলবে।অপারেশন ডমিনেশনের একটি অংশ হিসেবে বিজিবি ২০ সদস্যের টহল দলটির ওপর কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল আক্রমণ করেছে। কারণ হিসেবে বড় মদক এলাকায় ছয়টি আর থানচিতে চারটি অ্যারাবিয়ান ঘোড়া আটক হওয়ার ঘটনায় এমনটা হতে পারে  বলে মনে করেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।

আজিজ আহমেদ বলেন, দুর্গম পাহাড়ে মিয়ানমার তাদের ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ যেমন রাখতে পারছে না, তেমনি বাংলাদেশও এখনো পারেনি ওই অঞ্চলকে একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার জন্য আরো কিছু করার।

অন্য মিডিয়া

দুর্গম ওই পাহাড়ি অঞ্চলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ দল আরাকান আর্মি (এএ) শুধু নয় আরো রয়েছে আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) নামের আরো একটি শক্তপোক্ত সংগঠন। তবে দুজনের আলাদা উদ্দেশ্য থাকলেও মিল এক জায়গাতে। তারা আশ্রয় নিয়েছে আমাদের ভূখণ্ডে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে।

বান্দরবানের থানচি থেকে তিন্দু, রেমাক্রি, ছোট মদক, বড় মদক, মদকের আগা এরপরেই শঙ্খ নদীর উৎপত্তিস্থল বা রিজার্ভ ফরেস্ট যেখানে নিষিদ্ধ এই দল ঘাঁটি গেড়েছে। শুধু তাই নয় রিজার্ভ ফরেস্টের পরের স্থানটির নাম লিকরি, এরপর পাঞ্জেরি তারও অনেক পরে মিয়ানমারের সীমান্ত। বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিরা যে জায়গায় ঘাঁটি গেড়েছে অর্থাৎ শঙ্খ নদীর উৎপত্তিস্থল সে জায়গা থেকে কমপক্ষে সাতদিন একটানা পায়ে হাঁটলে মিয়ানমারের সীমান্ত।

অন্যদিকে থানচিতে বড়মদক হলো এ দেশের বিজিবির শেষ ক্যাম্প। বাকিটা টহলের মাধ্যমে খানিকটা দেখভালো করা যায়। বলা যায়, বড়মদকের পর প্রায় পুরোটাই জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এ দেশের দুর্গম পাহাড়ের ১৪৮ কিলোমিটার এলাকা একেবারে অরক্ষিত। শুধু মিয়ানমার নয় ভারতের ২২১ কিলোমিটারসহ মোট ৪২৯ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত। বছর তিনেক আগে এই অরক্ষিত জায়গা ছিল ৫২৯ কিলোমিটার। মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমানো গেছে তিন বছরে-এই বক্তব্যও বিজিবিপ্রধানের।

একটি ফেলোশিপের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে আমাকে চষে বেড়াতে হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ের সংস্কৃতির নানা খুঁটিনাটি তথ্যের জন্য। তবে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর জন্য সেখানে না গেলেও দুর্গম পাহাড়ে তাদের অঘোষিত শাসনব্যবস্থার কারণেই চোখ চলে গেছে সেদিকে।

arakan-1

জানা মতে, নিষিদ্ধ এই দলগুলোর সঙ্গে এ দেশের বিজিবির সাম্প্রতিক সময়ে তেমন একটা লড়াই বাঁধেনি। তবে সামনের দিনগুলোর বোধ করি ভালো না। এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বা সেনাদের সদস্যদের সঙ্গে কোনো ঝুট-ঝামেলা তেমন একটি নেই। কিন্তু টহল জোরদার না থাকায় তারা অবস্থান করছে শঙ্খ নদীর উৎপত্তিস্থল এ দেশের বৃহৎ একটি সংরক্ষিত বনে। সেখানে তাদের আরাম আয়েশের সঙ্গে পাহাড়ের এক অংশে মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যবসার সুযোগ করে নিয়েছে।
সেবার ১৮ মার্চ ২০১৫ থানচি বাজারে, রাতে শেষবারের মতো কথা বলে নিচ্ছি বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে। কবে কথা হবে পরিবারের সঙ্গে জানি না। কথা শেষ করেই ঘুরে দাঁড়াতে একজন বাঙালি ভদ্রলোক আমাকে বললেন, আপনি টুরিস্ট? কথা না বাড়িয়ে মাথা নাড়ালাম। তিনি বললেন মদকের দিকে যাবেন না। তিনি বললেও আমি জানি আমাকে কোথায় যেতে হবে। সেখানে না যাওয়ার প্রশ্নে কেন শব্দটি জিজ্ঞাসা করতে হয়নি। তিনি বললেন, ওদিকে পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে মিয়ানমারের নিষিদ্ধ দলগুলো। তিনি বড় মদকে বিজিবি ক্যাম্পের নিচে শঙ্খ নদীর এপার ওপার যাতায়াতের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণ করছেন। এই নির্মাণে তাকে চাঁদা দিতে হয়েছে। তাও আবার দুটি দল আরাকান আর্মি ও লিবারেশন পার্টিকে ২০ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে কাজ করা যাবে না। আরো সাবধানবাণী শুনেছি তাঁর কাছে।

বর্ষার আগে বান্দরবানে থানচিতে যারা গেছেন, তারা দেখেছেন শঙ্খ নদীতে কী পরিমাণ বাঁশের চাঁই নেমে আসে শঙ্খ নদীর উৎপত্তিস্থল বড় মদকের আরো ওপরের রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে। একটানা ছয় মাস দিনরাত বাঁশ কাটা হয়।

arakan-2
রহস্যময় শঙ্খ নদীর উৎপত্তিস্থল একেবারে নাশ করে ফেলেছে এমন তথ্য নিতে নিতে এগিয়ে চলেছি। শীতের শেষদিকে। নদীতে সে সময় অল্প পানি থাকায় বাঁশের সে চাঁই ঠেলে নামতে হয়। এরপর বান্দরবান তারপর চট্টগ্রাম পর্যন্ত পানির প্রবাহে চলে যায় নির্ধারিত স্থানে। বাঁশের সঙ্গে গাছও কাটা হয় প্রতিযোগিতা করে। বাঁশ হালকা বলে কম পানিতে নামানো যায় কিন্তু গাছ ভাসানো হয় বর্ষা মৌসুমে। যতই ওপরে উঠতে থাকি মানে বড় মদকের দিকে যেতে থাকি, ততই এলাকাবাসীর কাছে জানতে পারি বাঁশ ও গাছ যে পরিমাণ কাটা হয় তাতে করে এ নদী একসময় মারা যাবে। কোনো নজরদারি না থাকায় বৃক্ষনিধনের এ ঘটনা ঘটে চলেছে।

তিন্দু, রেমাক্রি ছোট মদক এরপর বড় মদকে যখন পৌঁছালাম তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। পায়ে হেঁটে সাড়ে চারদিন পর গিয়ে বড় মদকের দেখা পেয়েছি। বড় বাজার কেমন যেন থমথমে। দূর থেকে একটি উঁচু পাহাড়ে দেখা যায় বিজিবির একটি ক্যাম্প। যে দোকানে বসে চা খাচ্ছি, সেই দোকানে ঝুলে আছে আরাকান আর্মিদের একটি বড় পোস্টার। সে পোস্টারে তাদের প্রশিক্ষণের নানা ছবি দেওয়া। বড় মদকের প্রায় সব দোকানে এ পোস্টার এবং তা বাধ্যতামূলক লাগাতে হবে। জানতে পারলাম প্রতি পোস্টারে বিক্রেতাদের ২০০ করে টাকা দিতে হয়। পোস্টার লাগানো বন্ধে বিজিবি একজনকে আটক করেছিল, সঙ্গে পোস্টার সরিয়ে দিয়েছিল। দোকানিদের ভাষায় বিজিবি পোস্টার তুললে আবার তা দিয়ে যায় এবং আবারও ২০০ টাকা দিতে হয়। একদিকে নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টার রাখা যাবে না, অন্যদিকে জীবন নাশ করে ফেলবে তাই তা লাগাতে হবে। বিপাকেই রয়েছে বড় মদক বাজারের পাহাড়ি মানুষগুলো।   বড় মদকের পর থেকে পুরো এলাকা নিষিদ্ধ দল আরাকান আর্মি, এরপর লিবারেশন পার্টি নিয়ন্ত্রিত। জানতে পারি দুর্গম পাহাড়ে এ দেশের সংরক্ষিত বনে বহু আগে থেকে ঘাঁটি গেড়েছে লিবারেশন পার্টি। এরপর এসেছে আরাকান আর্মি। ‌

arakan-5

এ দেশে নিরাপদ ও অবৈধভাবে থাকতে সংরক্ষিত বনে জায়গা দখল নিয়ে বছর তিনেক আগে তাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।  এরপর বছর দুয়েক আগে তারা নিজেদের মধ্যে একটি সমঝোতা করে।

এই সমঝোতার পেছনে নিরাপদ আশ্রয়স্থল যেমন একটি বিষয়, তেমনি বাঁশ ও গাছসম্পদ লুণ্ঠনের ভাগাভাগি। প্রতিবছর না বলে সারা বছর সংরক্ষিত বনে বাঁশ কেটে নামানো হয় শতকোটি টাকার। বাঁশ কেটে বান্দরবান হয়ে দোহাজারিতে নিয়ে আসে যারা তাদের বাঁশপ্রতি টাকার ভাগ দিতে হয় নিষিদ্ধ সে দুই দলকে। বছর তিনেক আগে বাঁশপ্রতি চাঁদা দিতে হতো এক টাকা করে, এখন সেটা দেড় টাকায় ঠেকেছে। এ হিসেবে বছরে শুধু বাঁশের পেছনে তাদের চাঁদা দিতে হয় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। তাহলে কী পরিমাণ বাঁশগাছ কাটা পড়ে তা অনুমান করা যায়।

দুর্গম পাহাড়ের সংরক্ষিত বনে ছোট-বড় গাছও কাটা হয় কোটি কোটি টাকার। পানি কম থাকায় সেসব গাছ শীতে নয় বরং সেগুলো বর্ষার ঢলে নামিয়ে দেওয়া হয় নিচের দিকে অর্থাৎ বান্দরবানের দিকে। বান্দরবানে আরাকান আর্মির সদস্যরা দেখতে আর দশজন পাহাড়িদের মতো হওয়ার কারণে তারাও অবস্থান করে সাধারণের মতো করে। যারা টাকার লেনদেন করে বান্দরবানের কিছু মহাজনদের সঙ্গে।  আমাদের দেশের বনজ সম্পদ কেটে তারা টাকা পায় আর সেই টাকা দিয়ে তারা ঘোড়া কেনে, অস্ত্র-বারুদ কেনে। গেল দিন বিজিবির ওপর হামলা করেছে, একদিন তারাও হাত মেলাবে কারো সঙ্গে ভূখণ্ডের দখল নিতে, যুদ্ধ করবে এ দেশের সেনাদের সঙ্গে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

মজার বিষয় হলো, নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা কিন্তু কোনো গাছ কাটে না বরং যারা কাটে তাদের বাঁশ ও গাছপ্রতি চাঁদা দিতে হয়, না দিলে বাঁশ কাটা তো দূরে থাক, মানুষ পর্যন্ত হাওয়া করে দেওয়ার অনেক উদাহরণ আছে।

বছর কয়েক আগে পাড়া কারবারি ও চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা। এমন কারণেই রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মালিরামের বাসা রেমাক্রিতে হলেও তিনি থাকেন বান্দরবানে।

কেউ শুনলে অবাক হবে, এখন পর্যন্ত থানচিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার উপজেলা অফিসে কাজ সারলেও, থাকতে পারেন না তাঁর জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসভবনে। তিনি তাই অফিস করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক কার্যলয়ে। বান্দরবান সদর থেকে থানচি উপজেলা প্রায় ৮২ কিলোমিটার দূরে। দেশের একমাত্র দুর্গম ও উঁচু উপজেলা থেকে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করেন। কারণ চাঁদা পূরণ করতে না পারলে মিয়ানমারের নিষিদ্ধ দলগুলো জীবনের নাশের হুমকি দেয়।

বড় মদক পেরিয়ে এবার রওনা দিয়েছি। ভেবেছিলাম বিজিবি চৌকি আমাদের যেতে দেবে না। সে রকম কিছু হলো না। কেউ জিজ্ঞাসাও করল না আমরা কোথায় যাব। দলে তিনজন ও পাহাড়ি দুজনের সঙ্গে মদক থেকে যেদিক দিয়ে রওনা দিয়েছি, সেদিকটায় বিজিবি ক্যাম্পকে পাশ কাটিয়ে আসতে হয়। বিজিবি ক্যাম্পের ঠিক নিচে শঙ্খ নদী। এক ব্যক্তি বড়শি ফেলে ভাসমান একটি নৌকায় বসে। মাঝে আমাদের দিকে আড় চোখে একটু দেখে নেয়। তাকে আর আর দশজন পাহাড়িদের মতোই মনে হলো। ব্যক্তিটিকে পেছনে ফেলে যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন বান্দরবান থেকে আমাদের সঙ্গে পথচলা একজন বললে সে আরাকান আর্মির সশস্ত্র কমান্ডার। তুমি কেমনে বুঝলে জিজ্ঞেস করাটা ভুল ছিল, তারপরও সে বলল পাহাড়ে বেশি মানুষ বাস করে না, তাই আমরা সবকিছুই জানি। তা ছাড়া আমার বাড়ি এই এলাকায়। তখন মনে হলো, দারুণ এক কেমিস্ট্রি, বড় মদক বাজারে একসঙ্গে বিজিবি ক্যাম্প সঙ্গে আরাকান আর্মিদের বাস।

এবার আমার গন্তব্যের প্রথম অংশে পৌঁছে গেছি। সেখানে গোটা দুদিন থেকেছি। জেনেছি সে পাড়ার একজনকে বছর দুয়েক আগে হারিয়েছে তার পরিবার। বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে চাঁদা না দিতে পারায় তাকে আজ অবধি পাওয়া যায়নি। তার দুই ছেলেও জানে না তাদের বাবা কোথায়। তারা শুধু জানে তার বাবাকে নিষিদ্ধ সংগঠনের ডাকে যেতে হয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা আমাকে জানালেও তারা কাউকে বলতে পারে না তাদের বাবার হারিয়ে যাওয়ার কথা।

যে পাড়ায় অবস্থান নিয়েছি, পরদিন বিকেলে পাড়ার ভেতর দিয়ে একজনকে হনহন করে হেঁটে যেতে দেখেছি। মানুষটি যখন দূর থেকে পাড়ার দিকে আসছিল, তখন থেকে পাড়াবাসীর সবকিছু যেন অন্যরকম হয়ে গেল। বোঝা যায় কত ভয়ে তাদের থাকতে হয়। মানুষটি হেঁটে পাড়া পেরিয়ে চলে গেল নিচের দিকে, মানে বড় মদকের পথে। চেহারা দেখেই বোঝা যায় তিনি স্থানীয় নন। পরনে সবুজ শার্ট-প্যান্ট, পায়ে রাবারের স্যান্ডেল, হাতে বড় একটি চাকু সাদা দড়ি দিয়ে বাঁধা। এমন মানুষকে তো দেখেছি বড় মদকের বাজারে সাঁটানো পোস্টারে।

থানচিতে প্রায় ৪৩৬টি গ্রাম আছে। ২০০৮ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রায় ২২ হাজার মানুষের বসবাস। যাদের বেশির ভাগ থাকে থানচি থেকে বড় মদক হয়ে দুর্গম পাহাড়ের আরো ওপরে। যাদের প্রায় সবাই কথা বলেছেন শঙ্খ নদী নিয়ে। তারা চায় না, তাদের একমাত্র ও এ দেশের ভেতরে জন্ম নেওয়া নদীটি মারা যাক। একমাত্র ভরসার এ নদী না থাকলে পাহাড়ের এই মানুষগুলোও থাকতে পারবে না।

পাহাড়িদের বক্তব্য, শঙ্খ নদীর জন্মস্থলে নিষিদ্ধ দলগুলো যে হারে গাছ ও বাঁশ কাটছে, তাতে জঙ্গল উজাড় হয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতেই। গাছ ও বাঁশ কতটুকু কাটা পড়ছে তা বোঝা যায় প্রতিবছর নদীর পানি কত কমে গেল তা পর্যবেক্ষণ করলেই।

নদীর পাড়ে বাস করা মানুষগুলোর আর্তি আমি দেখেছি। বড় মদকের আগে ছোট মদকের একজন পাড়াপ্রধান বললেন, যখন নদীতে চলাচল শিখলাম তখন দেখি আমার নদী মারা যাচ্ছে। আগে তো পায়ে হেঁটে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া আসা করতাম। এখন একটু সুখ পাই যখন নদীতে নৌকা চলে, ইঞ্জিন চলে। এখনো কারো মরণ দেখা দিলে নৌকাতে হাসপাতালে নিতে পারি। পায়ে হেঁটে তো রোগীকে বাঁচানো যাবে না। পায়ে হেঁটে যদি রোগী নিয়ে থানচি যাই, চারদিন লাগে।

এই হলো অল্প কথায় পাহাড়ে আমাদের ভূখণ্ডে বাস করা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অবস্থা। যারা পাহাড় নয়, একরকম জিম্মি করে রেখেছে এদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। আর এ দেশের বনজ সম্পদ লুট করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। অ্যারাবিয়ান সেই দামি ঘোড়াগুলো কিনতে হয় তো ব্যবহার করা হয়েছে ওই এলাকার বাঁশ ও গাছ কাটার চাঁদার অর্থই। এখন প্রশ্ন হলো, তাদের শাসনেই কি ছেড়ে দিতে হবে ১৪৮ কিলোমিটার এ দেশের ভূখণ্ড?

সূত্র: এনটিভিবিডিডটকম

হোসেন সোহেল : বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিষয়ক সাংবাদিক
ছবি : শেখ রাজীব

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন