বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার

fec-image

একটি অঞ্চলে সুপ্রাচীন অতীত থেকে বাস করছে এমন জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বসবাসরত বেশ কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিজেদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি করে আসছে। আদিবাসী ইস্যুতে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬-এর ২ ধারা মতে, জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি বলে বিবেচিত হবে।

এ ছাড়া বাঙালি ব্যতীত অন্য যারা আছে তারা উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে পরিচিত হবে।
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা শান্তিচুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি স্বাক্ষর করে এবং চুক্তির খ খণ্ডের ১ নম্বর ধারায় জেলা পরিষদের আইনে উল্লেখ করা হয় যে ‘উপজাতি’ শব্দটি বলবৎ থাকবে। ২০০৫ সালের ২৫ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগ কর্তৃক উপজাতি ও আদিবাসী বিতর্ক অবসানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের উপজাতি গোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে আখ্যায়িত না করে উপজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে এই মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই মর্মে বাংলাদেশ সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান সম্পর্কে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনা জারি করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়কে কোনো অবস্থায়ই যেন উপজাতির পরিবর্তে আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা না হয় সে বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করে।

২০২০ সালের ১১ অক্টোবর চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়কে নাগরিক সনদ প্রদানে এবং দাপ্তরিক কাজে আদিবাসী শব্দের পরিবর্তে সংবিধানের উল্লিখিত শব্দমালা ব্যবহারের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা প্রদান করে। একইভাবে ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর সব সার্কেল চিফকে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩ (ক) অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। ’ সংবিধানের কোথাও আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া সংবিধানের ২৮ ধারায় উল্লেখ আছে ‘জনগণের যেকোনো অনগ্রসর অংশকে অগ্রসর করার নিমিত্তে, সুবিধা দেওয়ার নিমিত্তে রাষ্ট্র যেকোনো প্রকার বন্দোবস্ত নিতে পারবে এবং সংবিধানের অন্য কোনো ধারা সেটাকে বাধা দিতে পারবে না।’

‘ইউনাইটেড নেশনস ডিক্লারেশন অব দ্য ইন্ডিজিনিয়াস পিপলস’ বা ইউএনডিআরআইপি অনুযায়ী, আদিবাসীদের নিজেদের উন্নয়নের ধারা নিজেদের নির্ধারণ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অধিকার তারা পাবে। তবে বাংলাদেশ সেই ডিক্লারেশনে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র নয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে আদিবাসী ইস্যু নিয়ে সরকারি পদক্ষেপ ও রাষ্ট্রের অবস্থান খুব স্পষ্ট।

বাংলাদেশের আইন ও সংবিধানের ধারা অনুযায়ী উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সব গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিভিন্ন অধিকার সুনির্দিষ্টভাবেই দিচ্ছে। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা, বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, বিসিএস নিয়োগে কোটা ইত্যাদিসহ নানা ধরনের সুবিধা বাংলাদেশ সরকার তাদের দিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ যারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক এবং তারা যাতে অন্য সবার মতোই সমান সুযোগ ও নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন