বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হলেন পাহাড়ি নিভৃতচারী লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা

Probangsu-tripora_PP

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার মদন কার্বারী পাড়ায় ১৯৫১ সালের ৬ এপ্রিল জন্মগ্রণকারী নিভৃতচারী গবেষক প্রভাংশু ত্রিপুরাকে এ বছর বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। কয়েক খণ্ডে প্রকাশিত ‘ত্রিপুরা জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থের জন্য বাংলা একাডেমি তাঁকে গবেষণা শাখায় পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে। তাঁর বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্তিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন জেলার বিশিষ্টজনরা। তার এ পুরস্কারে জেলাবাসীর তথা পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী আনন্দে উদ্বেলিত।

পিতা ঋষি শ্রীসন্দ মোহন ত্রিপুরা ও মাতার শ্রীমতি কুমুদিনী ত্রিপুরা‘র বড় সন্তান বর্তমানে খাগড়াছড়ি শহরের মায়ুংতৈক্লু পাড়ার বাসিন্দা প্রভাংশু ত্রিপুরাকে বাংলা একাডেমি পদকে ভূষিত করায় পাহাড়ের মানুষ উল্লাস প্রকাশ করেছে। ব্যক্তিগত জীবনে লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক।

ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি তাঁর গবেষণার মুখ্য বিষয় হলেও তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও গান লিখে সমতল ও পাহাড়ের পাঠক মহলে সমানভাবে সমাদৃত হয়েছেন।

তাঁর রচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ককবরক আদিশিক্ষা’, ‘ত্রিপুরা জাতি ও সংস্কৃতি’, ‘ত্রিপুরা লোককাহিনী, ‘ত্রিপুরা জাতির মাণিক্য উপাখ্যান’, ‘ত্রিপুরা জাতির মানসসম্পদ’, ‘ত্রিপুরা জাতির লোকসঙ্গীত’, ‘ত্রিপুরা আর্য়ুবেদ ও বৈদ্যশাস্ত্র’, ‘ত্রিপুরা তন্ত্রসার’, ‘পার্বত্য অঞ্চলের ত্রিপুরা লোকালয় পরিচিতি’, ‘ত্রিপুরা লোকাচার ও গার্হস্থ্যবিধি’, গল্প সংকলন ‘ভাগ্য বিড়ম্বনা’, ধর্মীয় নাটক ‘ঈশারা’, ‘প্রবন্ধ বিচিত্রা’, ককবরক গীতি সংকলন ‘খুম সাংদারি’, ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ইতিহাস’ ও কয়েক খণ্ডের ত্রিপুরা লোককাহিনী প্রভৃতি।

বহুমুখি প্রতিভা সম্পন্ন প্রভাংশু ত্রিপুরা শুধু একজন লেখকই নন। একাধারে তিনি সংস্কৃতি বোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে আদিবাসী শিল্পকলার উৎকর্ষ ও প্রসার সাধনে জড়িয়ে থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আধুনিক ধারার সংস্কৃতিচর্চার পথিকৃৎ।

প্রথমে পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তিনি পরিবারের বড়ো সন্তান হিসেবে অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বেতার উপস্থাপক, ১৯৭৯ সালে সিনিয়র প্রযোজক পদে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি একই কর্মস্থলে মুখ্য প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বাসিন্দা ও প্রথিতযশা লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরার বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, সাবেক এমপি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মারমা উন্নয়ন সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি চাইথোঅং মারমা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. সুধীন কুমার চাকমা, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সমীরণ দেওয়ান, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম, খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম, বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা শক্তিপদ ত্রিপুরা, বিশিষ্ট কবি ও প্রাবন্ধিক হাফিজ রশিদ খান, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুরেশ মোহন ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ত্রিপুরা, জাবারাং কল্যাণ সমিতি, খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি এবং সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র)-খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি নমিতা চাকমা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রবর্তিত হওয়ার পর এই প্রথম তিন পার্বত্য জেলা থেকে কোনো আদিবাসী লেখক সম্মানজনক বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন