বান্দরবানে ‘এমএনপি’র নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হচ্ছে

kk

এস বাসু দাশ:
বান্দরবান, ১০ অক্টোবর: বান্দরবান জুড়ে ম্রো ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এমএনপি) তাদের অবস্থান শক্ত করছে। আর শসস্ত্র সংগঠনটির সদস্যরা একের পর এক খুন, অপহরণ ও চাদাবাজির ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে।

দূর্গম এলাকার বাসীন্দাদের কাছে নতুন আতংকের এই সংগঠনটি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলায় ২০১১ সালে ম্রো যুবকদের নিয়ে এমএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশিয় ও আধুনিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ হয়ে ২০১২ সালের দিকে আলীকদমের পোয়া মুহুরীতে ঘাঁটি গেড়ে খুন, অপহরণ,চাদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে। পরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ করে তাদের শসস্ত্র তৎপরতা সম্পর্কে জানান দেয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতবছর এমএনপি প্রধান মেনচিং ম্রো গ্রেফতার হওয়ার পর পালে ম্রো এই বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। গত বছরের ৫ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় এই গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেনরুং ম্রো এবং ৭ জুন সংগঠনটির প্রধান পালে ম্রো আলীকদমের দুর্গম পোয়ামুহুরি এলাকার পাহাড় ভাঙ্গা গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়। পালে ম্রো আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিল।

গতবছর সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের লাগাতার অভিযানে এই বাহিনীর ৩৭ জনেরও বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়, আত্মসমর্পণ করে ৪২ জন। আলীদমের কুরুক পাতার দুংখা পাড়ার মেনসিং ম্রো’র ছেলে মেনরুম ম্রো এমএনপি’র সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে নতুন করে শসস্ত্র সংগঠনটিকে চাঙ্গা করছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অং প্রু ম্রো বলেন, “এমএনপি ক্ষোদ ম্রো সম্প্রদায়ে সন্মান নষ্ট করছে, তাদের নির্মূল করতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান জোরদার করা উচিত ।”

এদিকে ম্রো আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক শীর্ষ নেতা এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে জেলায় এমএনপি’র তৎপরতা বন্ধে লামা, আলীকদম ও থানছি উপজেলার হেডম্যান-কারবারিদের থেকে সংগঠনটির সদস্যদের অবস্থান নিয়ে একটি তালিকা তৈরী করেন। তালিকাটি কয়েকদিনের মধ্যে জেলার বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দেয়া হবে।

ওই সূত্রে জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক শসস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন এমএনপি’র সদস্যরা। জেলার আলীকদমের কুরুক পাতার দুংখা এলাকার মাংপা ম্রো, প্রেন ওয়াই ম্রো, নিয়াদুই পাড়ার মেনরাও ম্রো, রেংসক পাড়ার রেংইন, সংএ পাড়ার পংঙি ম্রো, মারান পাড়ার ঙুই ক্রুম ম্রো, মাং অং ম্রো, কদনপাড়ার কদন ম্রো। থানছি উপজেলার চাকুপাড়ার মাং তং ম্রো, লাং পুং ম্রো, ওয়াকপাড়ার কৃতুই ম্রো, চাইয়াং পাড়ার বাশা ম্রো, অম্পুং পাড়ার হ্লা থোয়াই, অমই পাড়ার থংওয়াই ম্রো, বোডিংপাড়ার নংলাই ম্রো, রামুং ম্রো এবং লুহুপ ম্রো।

অন্যদিকে লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের নিওয়াকপাড়ার থংয়া ম্রো, মংহ্লাপাড়ার মইশা ম্রো,কাইওয়াই ম্রো, লুলেং হেডম্যান পাড়ার আম শে প্রে ম্রো, সড়ই ইউনিয়নের তাংলাই ম্রো এবং জেলার রুমা উপজেলার ফতেসিংপাড়ার কাইওয়াই ম্রোসহ অনেক জড়িত সংগঠনটির শসস্ত্র কর্মকাণ্ডে।

আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. আলমগীর কবির বলেন, “এমএনপি অনেক দিনের সমস্যা। লামা-আলীকদম সব জায়গায় তাদের তৎপরতা আছে। আমারা প্রতিদিনই তাদের তৎপরতা বন্ধে অপারেশন চালাই।”

ক্ষোদ সংগঠনটির শসস্ত্র তৎপরতায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা জড়িয়ে পরায় বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের। গত বৃহস্পতিবার খুন, অপহরণ ও চাদাবাজির একাধিক মামলায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা শহরের মধ্যম পাড়া থেকে শসস্ত্র সংগঠনটির আরেক শীর্ষ নেতা রুমদিং ম্রোকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রুমদিং থানছি উপজেলা ১ নং ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার এবং রেং হিং পাড়ার নেহিপাই ম্রো’র ছেলে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্রচার্চ বলেন, “গহীন অরণ্যে তাদের অবস্থান। তারা লোকালয়ে সচরাচর আসেনা।”

জেলার দূর্গম এলাকার স্থানীয়রা মনে করছে, এই সংগঠনটির ব্যাপারে অভিযান জোরদার করা না হলে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে। পাহাড়ের অন্য দুই জেলায়ও তাদের নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটতে পারে।

সূত্র: রাইজিং বিডিডট কম।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন