বান্দরবানে প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’ পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি
স্টাফ রিপোর্টার:
পাহাড়-হ্রদ আর অরণ্যের শহর বান্দরবান-রাঙামাটি আর খাগড়াছড়ি শুরু হবে বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়ে পাহাড়ীদের প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। মারমাদের ভাষায় সাংগ্রাই, চাকমাদের বিঝু, ত্রিপুরাদের বৈসুক ও তংচঙ্গ্যারা বিষু নামে আখ্যায়িত করা হয়। ম্রোরা নববর্ষকে তাদের ভাষায় চাংক্রান বলে। আর বাঙালীদের পহেলা বৈশাখ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ১৩টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রধান তিন সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসক আর বাঙালীর পহেলা বৈশাখ, এই উৎসবকে অনেকেই ‘বৈসাবি’ নামে অভিহিত করে থাকে। তবে প্রতিটি সম্প্রদায়ই নিজ নিজ নামে অভিহিত করে এ উৎসবকে।
১২ এপ্রিল রবিবার থেকে বান্দরবান জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, সাংগ্রাই উৎসব উৎযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থা, ম্রোচেটের সহায়তায় চাংক্রান উৎসব পালনে পাঁচ দিন ব্যাপী নানা আয়োজনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১২ এপ্রিল রবিবার সদর উপজেলার রেইছা সিনিয়র পাড়ায় বিকালে ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা প্রতিযোগিতা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিনে তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসব মিলন মেলায় পরিণত হয়।
১৩ এপ্রিল সোমবার ম্রোচেট সহায়তায়, উৎসব উদ্যাপন পরিষদ সদর উপজেলা টংকাবতীর সাকখয় পাড়া ব্রিকফিল্ড মাঠে ম্রোদের লোকনৃত্য, কোমর তাঁত বুনন, ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব এবং লোকসংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অন্যদিকে মারমাদের সাংগ্রাইং বা নতুন বর্ষবরণ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বেসরকারী রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে উৎসব উদযাপন পরিষদ।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি মংচিংনু জানান, ১৩ এপ্রিল সোমবার সকালে বর্ণাঢ্য র্যালীতে অংশগ্রহণ, চিত্রাঙ্কন ও আপন ঐতিহ্যে সাজা প্রতিযোগিতা এবং বয়স্কদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ১৪ এপ্রিল দুপুরে সাঙ্গু নদীতে বৌদ্ধ মূর্তি স্নান এবং ১৫ ও ১৬ এপ্রিল স্থানীয় পুরাতন বোমাং রাজবাড়ি মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলী উৎসব শুরু হবে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রীতির মঞ্চে বৈশাখী পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
এদিকে পাহাড়ী বাঙালীরা উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার ধর্মীয় উপসানালয় নিজেদের ঘরবাড়ির সৌন্দর্য্য বাড়াতে রঙ লাগাতে দেখা গেছে।
মারমাদের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব হলো সাংগ্রাই। বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিন-এ তিন দিন পালিত হয় এই উৎসব। সাংগ্রাই উৎসব উদ্যাপনের সময় মারমা যুবক-যুবতীরা পিঠা তৈরি করার জন্য চালের গুঁড়া প্রস্তুত করে। এই উৎসবের প্রধান আর্কষণ যুবক-যুবতীরা স্নিগ্ধতায়, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় ভিজিয়ে দেয় পরস্পরকে একে অন্যের দিকে পানি ছুড়ে মারে। একে পানিখেলা বা জরখেলী বলা হয়। এ ছাড়া এ দিন মারমারা বৌদ্ধমন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় বাণী শ্রবণ করে। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সাংগ্রাই উৎসব পালন করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সংক্রান্তি শব্দ থেকেই সাংগ্রাই শব্দটি এসেছে।