বান্দরবানে ফিটনেসবিহীন পর্যটকবাহী গাড়িতে অদক্ষ চালক, বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা

fec-image

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন নগরী পার্বত্য জেলা বান্দরবান। পাহাড়ি কন্যাখ্যাত এ জেলায় রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণা ও দেশের সর্বোচ্চ উচুঁ পাহাড় কেওক্রাডং। এসব প্রকৃতি মাঝে গড়ে ওঠা সৌন্দর্যে দেখতে প্রতি মৌসুমে আনাগোনা যেন শেষ নেই পর্যটকদের।

পাহাড় আর মেঘের খেলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুঁটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। কেউ আসে দলবেঁধে আবার কেউ আসে পরিবার পরিজনদের সাথে নিয়ে। তবে বান্দরবানে পর্যটকদের পরিবহনের সবচেয়ে জনপ্রিয় চাঁদের গাড়ি বা মাহিন্দ্রা। উঁচু নিচু পাহাড়ি সড়ক বেয়ে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিয়ে ছুঁটে যায় এসব চাঁদের গাড়ি। খুব জনপ্রিয় হওয়াতেই সেসব চাঁদের গাড়ি মাধ্যমে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দাঁপিয়ে বেড়ান পর্যটকরা। কিন্তু অধিকাংশ চাঁদের গাড়িতে নেই লাইসেন্স আবার ফিটনেসবিহীন।

জেলা শহর জুড়ে দিনের পর দিন বেড়ে চলছে অনিবন্ধিত চাঁদের গাড়ির সংখ্যা। তাছাড়া সেসব গাড়ি চালক অদক্ষ ও বেপরোয়া চালানো কারণে আনন্দ মুহূর্তে নেমে আসে কালো ছায়া। যার ফলে প্রাণ হারাতে হয় পর্যটকদের। এদিকে দুর্ঘটনা এড়াতে পাহাড়ি সড়কের দক্ষ চালক ও মানসম্মত গাড়ি প্রয়োজন বলে দাবি স্থানীয়সহ পর্যটকদের।

জানা গেছে, বান্দরবানে চিম্বুক-থানচি-রুমা-রোয়াংছড়ি-আলীকদমসহ বিভিন্ন সড়ক দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রেগুলোতে পর্যটকদের নিয়ে চলাচল করছে প্রায় সাড়ে তিনশত অধিক চাঁদের গাড়ি। এসব সড়কের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমও বলা চলে চাঁদের গাড়িকে। তবে অধিকাংশ গাড়িগুলো অকশনে ক্রয় করার কাগজপত্রহীন ও ফিটনেসবিহীন হয়ে থাকে। সেসব গাড়িকে গ্যারেজে মেরামত করে ছেড়ে দেওয়া হয় বান্দরবান-রাঙ্গামটি-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সড়কে। আবার সড়কে অদক্ষ চালকরা দাপিয়ে বেড়াই সেসব অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো নিয়ে। যার ফলে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয় স্থানীয় কিংবা পর্যটকদের।

এ বিষয়ে পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, জেলায় প্রায় ৩৫০টি জিপ গাড়ি রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার পর্যটন স্পটে চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে ৩০টি বি-সেভেন্টি ও ৩২০টি মাহেন্দ্র জিপ। জাপানের তৈরি বি-সেভেন্টি গাড়িগুলোতে ফোর হুইল থাকায় দুর্গম পাহাড়ি সড়কে সহজে যাতায়াত করতে পারে। মাহেন্দ্র জিপে ফোর হুইল নেই। সে কারণে উঁচু পাহাড়ি সড়কে এই জিপগুলো চলাচল করতে পারে না।

চালকরা জানিয়েছেন, যারা চালক রয়েছেন তাদের অধিকাংশ দক্ষ ও লাইসেন্স রয়েছে। তারা চাননা কোন কারণের দুর্ঘটনা হোক এবং চেষ্টাও করেন যাতে পর্যটকরা ভালোভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফিরতে পারে।

আবার অনেক চালক বলছেন- অকশনে গাড়িগুলো কিনলে প্রশাসন কোন কাগজপত্র দেন না। যার কারণের থানার সাথে চুক্তি ও টোকেনের মাধ্যমে বিভিন্ন সড়কের গাড়ি চলাচল করে। সবকিছু ম্যানেজ করে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে কিংবা উপজেলাসহ বাইরে জেলাতে চলাচলের সুযোগ হয়।

বনরুপা ও হাফেজঘোনা বাসিন্দা রবি, রমেশসহ বেশ কয়েকজন সাথে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, প্রতি মৌসুমে বান্দরবানে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন আনন্দ করতে। কিন্তু সেসব আনন্দগুলো নিরানন্দন হয়ে যায়। এর কারণ অদক্ষ ও চালকেরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো। যেটি বান্দরবানবাসী জন্য মোটেই কাম্য নয়। পর্যটকদের নিরাপত্তা স্বার্থে দুর্ঘটনা এড়াতে পাহাড়ি সড়কের দক্ষ চালক ও উন্নতমানে গাড়ি ব্যবস্থা করে দেওয়া জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।

বান্দরবান জীপ ও মাইক্রোবাস সমিতির সহ-সভাপতি মো. রশিদ বলেন, সমিতি পক্ষ থেকে গাড়ি লাইসেন্স, ফিটনেস, বৈধ কাগজপত্র ও দক্ষ চালকদের চলাচলে জন্য বলা দেওয়া হয়েছে। গাড়ির মালিক ও চালদের কাগজপত্র হালনাগাদ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা জুড়ে পর্যটকদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে তবে এসব ফিটনেস ও লাইসেন্স বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয় বান্দরবান বিআরটিএ’র সহাকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী বলেন, ট্রাফিক বিভাগ বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে গাড়ি কাগজপত্র চেক করে। তবে গাড়ির ফিটনেস দেখার দ্বায়িত্ব বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের। এদিকে বগালেকে যে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে একটি মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন