বাবা দিবসেই মুছে গেল পানছড়ির স্মৃতিময়ের স্মৃতি

fec-image

বাবা দিবসের সকালে চেংগী নদীর পাঁচ মিশালী মাছ উপহার দিয়েই বাবাকে সারপ্রাইজ দেয়ার স্বপ্ন ছিলো ছেলের। তাই পাশের বাড়ির শান্ত, রুপাস ও বিপ্লবসহ মাছ ধরার সিদ্ধান্ত নেয় তৎময় চাকমা (২২)।

অবশেষে রবিবার (২১ জুন) দিবাগত রাত ১২টায় মাছ ধরার মিশনে নেমে চোরাবালিতে তলিয়ে গেলেই সব স্বপ্ন শেষ।

পানছড়ি উপজেলার অক্ষয় মেম্বার পাড়া গ্রামের স্মৃতিময় চাকমা ও অনুজা চাকমার এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়েই সাজানো সংসার। মেয়ে বড় এরই মাঝে বিয়ে হয়েছে। ছেলে তৎময় সংসারের একমাত্র মধ্যমনি। মা-বাবার স্বপ্ন ছেলে লেখাপড়া শেষ করে চাকুরী করে সংসারের হাসি ফোটাবে।

তাইতো ছেলের প্রতি আলাদা যত্ন আর মায়াভরা আদর। এরি মাঝে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে ডিগ্রী প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। কিন্তু স্মৃতিময়ের স্বপ্ন পূরণের আগেই বাবা দিবসে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাল তৎময়।

রবিবার (২১ জুন) বেলা তখন দুইটা। শান্তিপুর রাবার ড্যাম এলাকায় চেংগী নদীর বালুর চরে দু’হাত মুঠিয়ে বসে ছেলের মরদেহের অপেক্ষায় বাবা। চোখ দুটো লাল, আর চোখের জলে মুখে দেয়া মাস্কটি ভিজে চপচপ। হাজার হাজার নারী-পুরুষের সমাগমে নিজ গ্রামবাসী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও ডুবুরি দলের দিকে তীক্ষদৃষ্টি কখন খুঁজে পারে আদরের ছেলেকে।

সন্ধা ৭টার আগেই ব্যর্থ মিশন শেষ করে বিদায় নেয় ডুবুরির দল। হাল ছাড়েনি আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।

২১ জুন রবিবার রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে অল্প পানিতে ভেসে উঠে মরদেহ। বাবা স্মৃতিময় তখন বাকরুদ্ধ। কাছে গিয়ে ছেলেকে এক নজর দেখার শক্তি যেন শেষ।

তৎময়ের মরদেহ নিয়ে সবাই বাড়ির পথ ধরেছে পা যেন চলছে না একমাত্র ছেলেহারা পিতা স্মৃতিময়ের। কয়েকজনে ধরে শক্তি দিচ্ছে আমরাতো আছি। নির্বাক পিতার মুখে কোন কথা নেই। একপা, দুপা করে হেলেধুলে এগিয়ে চলছে ছেলের পিছনে পিছনে গন্তব্য অক্ষয় মেম্বার পাড়া।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন