বার্মার দাঙ্গায় সরকারের ভুমিকার সমালোচনা

 ডেস্ক নিউ

বার্মার মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে সাম্প্রতিক জাতিগত দাঙ্গার সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বার্মার সরকারকেও দায়ী করেছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ। সংস্থা বলছে, গতবছর ঐ দাঙ্গায় একটি সম্প্রদায়কে নির্মূল করার যে প্রয়াস ছিল, তাতে সরকারেরও ভূমিকা ছিল। বার্মার সরকার অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। বার্মার ওপর থেকে আজ প্রায় সবধরণের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ।

বার্মার কাছে অস্ত্র বিক্রি করা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত দেশটির চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আস্থার বিষয়টিই আবারও প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, বার্মার সাথে সম্পর্কের বিষয়ে তারা নতুন একটি অধ্যায় শুরু করতে আগ্রহী এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেও তারা আশা করছে।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গৃহীত সংস্কারের জন্যে বার্মার নতুন নেতৃত্বকে পুরস্কৃত করার সময় এখনও আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ব্যাপারে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কিভাবে সহযোগিতা করেছে। সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলছেন, অস্ত্র বিক্রি ছাড়া সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার উদ্যোগকে তারা দেখছেন অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত হিসেবে। এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে শেষ পর্যন্ত দেশটির সরকারকে বাধ্য করার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাতে আর কিছুই থাকবে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এটাকে দেখছে বাণিজ্যিক স্বার্থের দুঃখজনক বিজয় হিসেবে।

তিনি বলছেন, এসব নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার মধ্যে দোষের কিছু ছিলো না। মানবাধিকারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জনের জন্যে এগুলোকে ব্যবহার করা যেতো, যা সংস্থার মতে ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

 

রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন লোকজনের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখিয়েছে, সেখানে মুসলিমদের ওপর চালানো হামলা থামাতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কতোটা ব্যর্থ হয়েছে। কোথাও কোথাও নিরাপত্তা বাহিনী নিজেরাই হামলায় অংশ নিয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, মুসলিম রোহিঙ্গারা যাতে নৌকায় করে বার্মা ছেড়ে পালিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ সেজন্যে তাদেরকে উৎসাহিত করেছে। যারা থেকে গেছে, তাদের সাহায্য ও চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছে।

হামলা ও হত্যাকারীদের বিচারের জন্যে বার্মার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তবে তারা বলছে যে, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের খুব সামান্যই সাড়া পাওয়া গেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বার্মার কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্টের অফিসের একজন মুখপাত্র তথ্য উপমন্ত্রী ইয়ে টুট প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছেন, “হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদনে দুটো সম্প্রদায়ের বিরোধকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়নি। এখানে শুধুমাত্র একটি পক্ষের কথা বলা হয়েছে।”

সরকারের এই মুখপাত্র রোহিঙ্গাদের বাঙালী বলে উল্লেখ করে বলেছেন, যেনো শুধু তারাই অন্যপক্ষের হাতে মার খাচ্ছে -এমন চিত্রই এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে, যা তাদের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সূত্র: বিবিসি

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন